যদিও কিভাবে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হয়েছিল তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিস্তর। তবে এক কথায় সবাই মেনে নেন চন্দননগরের প্রথম পুজো চাউল পট্টির আদি মা। কথিত আছে, তৎকালীন ফরাসিদের দেওয়ান ছিলেন ইন্দ্র নারায়ন চৌধুরী। তার হাত ধরেই শুরু হয় চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। ফরাসি দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা ছিল নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের। প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো কৃষ্ণনগরে শুরু হয়েছিল না চন্দননগরে তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। এইসবের সঠিক উত্তর পাওয়ার জন্য লোকাল ১৮ পৌঁছেছিল তৎকালীন ফরাসি দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর বাড়িতে।
advertisement
চন্দননগরের সরষে পাড়া এলাকায় রয়েছে ইন্দ্রনারায়ন চৌধুরীর বাড়ি। বর্তমানে সেই বিশাল বাড়ির একাংশ হয়েছে গাছগাছরা জঙ্গলে ভর্তি। তা পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যাবে মূল বাড়ি যেখানে এখনও বসবাস করে তাদের বর্তমান প্রজন্মরা। জগদ্ধাত্রী পুজোর বিষয়ে কথা বলার জন্য পরিবারের তরফ থেকে এগিয়ে এসেছিলেন পরিবারের এই নবম প্রজন্ম জৈষা চৌধুরী। তার কথায়, চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো নিয়ে যা কাহিনি রয়েছে তার মধ্যে তিনটি কাহিনিকে বিশেষ মান্যতা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ছট পুজোয় লাউ ভাত ও ছোলার ডাল খাওয়া হয়! উপকারিতা অবাক করবে! চিকিৎসকের মত জানুন
প্রথম টি হল, ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। নবাব আলিবর্দির রাজত্বকালে মহাবদজঙ্গ রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের কাছে বারো লক্ষ টাকা নজরানা দাবি করেন। নজরানা দিতে অক্ষম হলে নবাব রাজাকে বন্দী করে মুর্শিদাবাদে (মতান্তরে মুঙ্গেরে) নিয়ে যান। কারাবন্দী থাকার কারণে দুর্গাপুজো করতে পারেননি রাজা। কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর বিজয়া দশমীর দিনে নৌকায় ফেরার পথে তিনি সিংহবাহনা এক দেবীর স্বপ্নাদেশ পান। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয় কার্তিক শুক্লা নবমীর সময় জগদ্ধাত্রী দেবীর পুজোর আয়োজন করার জন্য।
অন্যদিকে আরও একটি গল্প রয়েছে যেখানে বলা হয় চন্দননগরের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল জগধাত্রী পূজার প্রচলন। মূলত বাণিজ্যের দেবী হিসাবে দেবী জগদ্ধাত্রী আরাধনা করতেন দেওয়ান ইন্দ্র নারায়ন চৌধুরী। তার মূলত চাল কাপড় লোহা ও চুনের ব্যবসা ছিল। ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল হবার জন্য গঙ্গা পারে চাউল পট্টি বা চালের পট্টিতে শুরু করেছিলেন তিনি জগদ্ধাত্রীরা আরাধনা। তাই দেখেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তার রাজবাড়িতে শুরু করলেন দেবী হৈমন্তিকার পুজো।
জগদ্ধাত্রী পুজো কিভাবে শুরু হয়েছিল চন্দননগরের তা নিয়ে মানুষের মধ্যে দ্বিমত থাকলেও, আদি মা বা চাউল পট্টির জগদ্ধাত্রী পুজো চন্দননগরের প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো সেই বিষয়ে সবাই একমত। অন্যদিকে চাউলপট্টির এই পুজোতে সাবেকিয়ানা পুজোর সমস্ত রীতিনীতি মেনেই পুজো করা হয়।
জগদ্ধাত্রী পুজোর জন্য বিখ্যাত চন্দননগর। চন্দননগরের গঙ্গা পাড়ের প্রথম পুজো চাউলপট্টির জগদ্ধাত্রী পূজা। ১৭৬২ সালে আনুমানিক শুরু হয় এই পুজোর। জাঁকজমকপূর্ণভাবে উঁচু উঁচু প্রতিমার পুজো হয় গোটা চন্দননগর জুড়ে। শেষ মুহূর্তে পুজোর প্রস্তুতি এখন চলছে একেবারে তুঙ্গে। মন্দির সেজে উঠেছে ফুল ও আলোক সজ্জায়। দেবী হৈমন্তিকার আরাধনায় মেতে উঠতে চলেছে শহর চন্দননগর।
রাহী হালদার