না, একেবারে বাৎস্যায়ন পর্যন্ত না ভাবলেও চলবে। সহজ কিছু যোগাসন অভ্যাসেও উন্নতি হতে পারে জীবনচর্যার।
কী ভাবে যোগ ব্যায়াম যৌন জীবনে উন্নতি করতে পারে?
যোগ ব্যায়ামের প্রধান সুবিধা হল ঘর বা বাইরে যে কোনও জায়গাতেই অভ্যাস করা যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত যোগাভ্যাসে শরীরে কর্টিসল মাত্রা (cortisol levels) হ্রাস করে মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপ ক্রমশ বাড়তে বাড়তে শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। পরোক্ষে তা-ই যৌন ইচ্ছা হ্রাসে বড় ভূমিকা পালন করে।
advertisement
আরও পড়ুন - International Yoga Day 2022: মাত্র ১০ মিনিট করুন এই যোগ ব্যায়াম, বাড়বে ইমিউনিটি, কমবে মেদ
এ ছাড়া গবেষণা বলছে, যোগব্যায়াম সামগ্রিক যৌন কার্যকারিতা উন্নত করতেও সাহায্য করতে পারে। একটি সমীক্ষায় ৪০ জন মহিলাকে ১২ সপ্তাহ ধরে যোগব্যায়াম করানো হয়। দেখা যায়, যোগব্যায়ামের কারণে মহিলাদের যৌন জীবনে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, যোগাভ্যাসের মাধ্যমে শরীর ও মনের মধ্যে একটা সমণ্বয় সাধিত হয়।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক যৌন জীবন উন্নত করতে কয়েকটি যোগ ভঙ্গি...
১. মার্জারাসন ও বিটিলাসন -
সাধারণ এ দু’টি এক সঙ্গেই অভ্যাস করা হয়ে থাকে। নাম থেকে বোঝা যায় এই আসনের ক্ষেত্রে ভঙ্গিমা অনেকটা বিড়াল এবং গরুর মতো হয়ে থাকে। এই ভঙ্গিগুলি মেরুদণ্ড সক্রিয় এবং শিথিল করতে সহায়তা করে। মানসিক চাপের মাত্রা কমিয়ে মন স্থির করতে সাহায্য করে।
হাঁটু মুড়ে বসতে হবে। শরীরের উপরের অংশ হাতের উপর ভর দিয়ে এগিয়ে দিতে হবে সামনের দিকে। দেখতে হবে কব্জি যেন একেবারে কাঁধের নীচে এবং হাঁটু যেন নিতম্বের সঙ্গে সমান্তরালে থাকে। মেরুদণ্ড থাকবে সোজা।
এ বার উপরের দিকে তাকানোর সময় শ্বাস নিতে হবে। এ সময় পেট মেঝের দিকে নেমে যাবে। চোখ, চিবুক এবং বুক উপরে তুলতে হবে।
এরপর শ্বাস ছাড়তে হবে। সে সময় চিবুক বুকের দিকে টেনে নিতে হবে। মেরুদণ্ডও গোল হয়ে উপর দিকে উঠে যাবে বা নাভির দিকে টেনে নিতে হবে।
এই দু’টি অভ্যাস করতে হবে এক মিনিটের, ধীরে ধীরে।
২. সেতু বা সর্বাঙ্গাসন -
এই ভঙ্গিটি পেলভিক ফ্লোরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এই পেশিগুলি শক্তিশালী হলে যৌনতার সময় ব্যথা কম হতে পারে।
চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। এরপর হাঁটু ভাঁজ করে রাখতে হবে মাটির উপর, দেখতে হবে নিতম্বের সঙ্গে সমান্তরালে রাখতে থাকে গোড়ালি।
আরও পড়ুন - International Yoga Day 2022: এই সহজ ৬টি যোগ আসনে পেটের থলথলে মেদ নিমেষে গায়েব হবে
শরীরের দু’পাশে হাত পেতে রাখতে হবে মেঝেতে। আঙুলগুলি ছড়িয়ে থাকবে।
এ বার শ্রোণি অঞ্চলটি মাটি থেকে তুলতে হবে। কিন্তু কাঁধ ও মাথা একেবারে সমানভাবে পড়ে থাকবে মাটিতে। দেখে মনে হবে যেন সেতু বাঁধা হয়েছে।
এ ভাবে পাঁচ সেকেন্ড ভঙ্গিটি ধরে রাখতে হবে। তারপর ছেড়ে দিতে হবে।
৩. আনন্দ বালাসন -
শিশু যেমন অবোধ আনন্দে তার পা দু’টি নিয়ে খেলতে থাকে, এটিও তেমনই। এতে Glute এবং Lower Back এর পেশি শিথিল হয়। শুধু আসন হিসেবে নয়, এটি সঙ্গীর সঙ্গেও অভ্যাস করা যেতে পারে।
চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে। পা ভাঁজ করে পেটের উপর তুলে আনতে হবে। এ সময় শ্বাস ছাড়তে হবে।
এ বার শ্বাস নিতে নিতে পায়ের পাতার বাইরের দিকটি ধরতে চেষ্টা করতে হবে।
এরপর হাঁটু দু’টিকে দু’দিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। যাঁরা প্রথম প্রথম আসন শুরু করছেন তাঁরা পায়ের উপর লুপ করা বেল্ট বা সাধারণ তোয়ালে ব্যবহার করতে পারেন।
এ বার হাত দিয়ে পা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন। হাত মাটির সমান্তরালে নেমে আসবে। হাঁটু থেকে পা সোজ হয়ে মাটির সমান্তরালে নেমে আসবে।
৪. এক পদ রাজকাপোতাসন -
এতে নিতম্বের পেশি শিথিল হয়। যা যৌন জীবনে তৃপ্তি এনে দিতে পারে।
মেঝেতে বসে ডান পা তুলে আনতে হবে বুকের কাছে। প্রায় ৯০ ডিগ্রি কোণ তৈরি হবে।
আরও পড়ুন - যোগ ব্যায়ামের আগে ও পরে কোন খাবারগুলি খাবেন বা খাবেন না?
এ সময়ই বাঁ পা প্রসারিত করে দিতে হবে শরীরের পিছন দিকে মাটিতে। পায়ের পাতার উপরি অংশ লেগে থাকবে মেঝেতে।
শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাটির দিকে ঝুঁকে পড়তে হবে। হাত ভর দিয়ে শরীর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রয়োজনে বালিশের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এর পর দ্বিতীয় পায়ে একই ভাবে অভ্যাস করতে হবে।
৫. বালাসন -
অত্যন্ত আরামদায়ক এই যোগ ভঙ্গিটি শুধু যে পেশি শিথিল করে তা-ই নয়, বরং মানসিক চাপ এবং উদ্বেগকে দূর করতে সহায়তা করতে পারে।
প্রথমেই মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে। নিতম্ব-প্রস্থের চারপাশে ছড়িয়ে যাবে পা, পায়ের দু’টি বুড়ো আঙুল পরস্পরকে ছুঁয়ে থাকবে।
এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়তে হবে। হাত দু’টি কানের দু’পাশ দিয়ে সামনে প্রসারিত করে রাখতে হবে। ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ে মাটিতে কপাল স্পর্শ করার চেষ্টা করতে হবে। প্রাথমিক অভ্যাসের ক্ষেত্রে বালিশ নেওয়া যেতে পারে। ৩০ সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের জন্য এই অবস্থান থাকা যায়।
৬. শবাসন -
যে কোনও আসন করার পরই শবাসন করা অত্যন্ত জরুরি। শবাসনে সারা দেহের পেশি শিথিল করতে সাহায্য করে।
পা ছড়িয়ে এবং হাতের তালু ছাদের দিকে রেখে চিত হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়তে হবে। শরীরের প্রতিটি অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ শিথিল করে দিয়ে আরাম অনুভব করতে হবে।
যতক্ষণ খুশি এই আসন অভ্যাস করা যায়।