থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের বিশেষ ভূমিকায় কাজ করে, যেমন মেটাবলিজম, গ্রোথ, ও শারীরিক বিকাশের কাজ করে এবং এনার্জি লেভেল, ওজন, হার্ট রেট ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করে। হাইপোথাইরয়েডিজমের অসুবিধা তখন দেখা দেয়, যখন থাইরয়েড গ্রন্থি শরীরের চাহিদা মেটাতে পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে পারে না। দেশের আটটি বড় শহরে একটি সমীক্ষা করেছেন গবেষকরা। তাতে দেখা গিয়েছে এই রোগে আক্রান্ত প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ। এর মানে দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ থাইরয়েড ডিজঅর্ডারে ভুগছে। চিকিৎসকদের মতে এই রোগের কিছু লক্ষণ রয়েছে, যেগুলি হল ক্লান্তি বোধ, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য, রুক্ষ-শুষ্ক ত্বক, ঠাণ্ডা লাগার ধাত, গায়ে হাতে যন্ত্রণা অনুভব করা ইত্যাদি। এর ফলে ধীরে ধীরে শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ছে, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, হতাশা এবং স্নায়বিক জটিলতার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আর এই নানাবিধ অসুবিধার কারণে কর্মক্ষেত্র এবং সংসারে জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
advertisement
সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা হাইপোথাইরয়েডিজমে তিনগুণ বেশি আক্রান্ত হন। এর ফলে বন্ধ্যাত্ব এবং পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমে (Polycystic Ovary Syndrome) ঝুঁকি বেশি থাকে। এই ব্যাধি গর্ভবতী মহিলাদের উপরেও প্রভাব ফেলে, এর ফলে প্লাসেন্টাল অ্যাবনর্মালিটিজ (Placental abnormalities), প্রিক্লাম্পসিয়া (Preeclampsia) রক্তাল্পতা (Anaemia), গর্ভপাত (Miscarriage), প্রসবের আগে রক্তপাতের (Postpartum Bleeding) ঝুঁকি থাকে। বিশ্ব জুড়ে চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড ডিজঅর্ডারের কোনও সমস্যা রয়েছে কি না তা জানার জন্য পরীক্ষার পরামর্শ দেন। কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালের (Peerless Hospital) কনসালট্যান্ট এন্ডোক্রিনোলজিস্ট (Consultant Endocrinologist) ড. কল্যাণ কুমার গঙ্গোপাধ্যায় (Dr. Kalyan Kumar Gangopadhyay) বলেছেন, “শুধুমাত্র কলকাতায় আমরা হাইপোথাইরয়েডিজমের ৩.৬৫% রোগীর পরিচয় পেয়েছি, যারা সকলে ৩৫ বছরের বা তার উর্ধ্বে। যদি এই রোগের চিকিৎসা না করা হয় তাহলে বড় ঝুঁকি এড়ানো যাবে না, এর ফলে ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশনের অতিরিক্ত জটিলতাগুলি বাড়তে শুরু করে”। ড. কল্যাণ কুমার গঙ্গোপাধ্যায় আরও বলেছেন, কেবল ঘন ঘন পরীক্ষার সাহায্য়ে এই রোগের ঝুঁকি কমতে পারে।
অ্যাবটের (Abbott) মেডিকেল ডিরেক্টর (Medical Director) ড. শ্রীরূপা দাস (Dr. Srirupa Das) বলেন, "অ্যাবট ভারতে থাইরয়েড ব্যাধি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে বদ্ধপরিকর। এই রোগের প্রকৃতি, প্রকোপ এবং লক্ষণগুলি সম্পর্কে মহিলা সহ পুরুষদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। আমরা মেকিং ইন্ডিয়া থাইরয়েড অ্যাওয়ার নিয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ”।
এই মেকিং ইন্ডিয়া থাইরয়েড অ্যাওয়ার (Making India Thyroid Aware) হল অ্যাবটের একটি উদ্যোগ। যা দেশের বিভিন্ন রাজ্যে থাইরয়েড সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে প্রায় ৬ মিলিয়ন মানুষকে সচেতনতার আধারে আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।