লিভারের প্রদাহ বা ইনফ্লেমেশন হেপাটাইটিস নামে পরিচিত। এর মূল কারণ হল ভাইরাসজনিত সংক্রমণ। সবথেকে সাধারণ ভাইরাসঘটিত হেপাটাইটিস হল হেপাটাইটিস এ, হেপাটাইটিস বি, হেপাটাইটিস সি এবং হেপাটাইটিসই। সংক্রমিত খাবার, জল, যৌন সংসর্গ অথবা সংক্রমিত রক্তের সংস্পর্শের মাধ্যমেই এই ভাইরাস এক জনের দেহ থেকে অন্যের দেহে ছড়িয়ে পড়ে।
advertisement
শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন, অটোইমিউন রোগ অথবা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ও টক্সিনের কারণে হেপাটাইটিস হতে পারে। হেপাটাইটিসের উপসর্গের মধ্যে অন্যতম হল অবসন্ন ভাব, জন্ডিস (চোখ ও ত্বকে হলদেটে ভাব), পেট ব্যথা, গা-বমি ভাব এবং ক্ষুধার ঘাটতি। হেপাটাইটিস এ এবং বি-এর টিকা রয়েছে। আর হেপাটাইটিস সি নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিভাইরাল ট্রিটমেন্ট রয়েছে।
আরও পড়ুনঃ প্রতীক্ষার অবসান! আজই তুমুল বৃষ্টির তাণ্ডব জেলায় জেলায়, হলুদ সতর্কতা জারি
সিরোসিস হল শেষ পর্যায়ের লিভারের রোগ। লিভার টিস্যুতে ক্ষত তৈরি হয় এবং সেটা বাড়তে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে মদ্যপানের অভ্যেস, ক্রনিক ভাইরাল হেপাটাইটিস, নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ এবং অটোইমিউন রোগ সিরোসিসের অন্যতম কারণ। লিভারে ক্ষত তৈরি হওয়ার কারণে এর কার্যকারিতা কমে আসে। যার জেরে ক্লান্তি বা অবসাদ, পেট ফুলে যাওয়া, জন্ডিস, জলীয় পদার্থ জমা এবং রক্ত ক্ষরণের মতো উপসর্গ দেখা দেয়। সিরোসিসের চিকিৎসা ব্যবস্থায় এর কারণের উপরেই জোর দেওয়া হয়। লিভার যাতে আরও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়। চরম পর্যায়ে গেলে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
লিভারের কোষের ভিতরে যখন ফ্যাট জমতে থাকে, তখন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হয়। এটা দুই ধরনের – অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এএফএলডি) এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএএফএলডি)। অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের কারণ হল অতিরিক্ত মদ্যপান।
আরও পড়ুনঃ পঞ্চায়েতের মনোনয়নের শেষ দিনে বিরাট চ্যালেঞ্জ নিলেন অভিষেক, দৃপ্ত ভঙ্গিতে যা বললেন…
আবার নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের কারণ হল ওবেসিটি বা স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল ও মেটাবলিক সিন্ড্রোম। ওবেসিটি এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য আজকাল এনএএফএলডি ক্রমশই বাড়ছে। এক্ষেত্রে তেমন উপসর্গ দেখা যায় না, তবে রোগ বাড়তে থাকলে ইনফ্লেমেশন, লিভার ফাইব্রোসিস, সিরোসিস এমনকী ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এর চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে অন্যতম হল ওজন হ্রাস, স্বাস্থ্যকর ডায়েট, নিয়মিত এক্সারসাইজ ইত্যাদি।
লিভারের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের অভ্যেস করতে হবে। এর পাশাপাশি নিরাপদ যৌনজীবন, টিকা গ্রহণ, মদ্যপানে রাশ টানা, ব্যালেন্সড ডায়েটের অভ্যেস, নিয়মিত শারীরিক কসরত করতে হবে। এছাড়া ভুলভাল ওষুধ খাওয়া চলবে না। নিয়মিত চেক-আপ ও পরীক্ষানিরীক্ষা করাতে হবে। কারণ প্রথম পর্যায়ে কয়েক ধরনের লিভারের রোগের ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ থাকে না। মনে রাখতে হবে যে, সঠিক চিকিৎসা না হলে নানা জটিলতাও তৈরি হতে পারে। ফলে এই বিষয়ে সচেতনতাও বৃদ্ধি করা জরুরি।