পরিসংখ্যান বলছে, লিভারের রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। আমাদের দেশে লিভারের রোগের কারণে মৃতের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। ভারতীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ৫ জনের মধ্যে প্রায় ১ জন লিভারের রোগে আক্রান্ত হন। বিষয়টা সত্যিই আশঙ্কার। তবে ইতিবাচক বিষয় হল, অধিকাংশ লিভারের রোগই প্রতিরোধযোগ্য। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে সামান্য কিছু বদল আনলেই লিভার সুস্থ থাকবে।
advertisement
লিভারের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন এড়িয়ে চলা। এখানেই শেষ নয়, অ্যালকোহল সেবনেও রাশ টানতে হবে। হিসেব অনুযায়ী, মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৩০ মিলিলিটার হার্ড লিকার এবং পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৬০ মিলিলিটার মদ্যপান আদর্শ হতে পারে। কারণ এতে লিভারের রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। তবে যাঁরা লিভারের রোগে আক্রান্ত, তাঁদের মদ্যপান থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিরত থাকা উচিত।
ম্যাঙ্গালোরের কেএমসি হাসপাতালের মেডিকেল গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের ডা. অনুরাগ শেঠি
লিভারের রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য দেহের ওজন সঠিক রাখাও বাঞ্ছনীয়। নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ক্ষেত্রে তো বটেই। অতিরিক্ত ওজন এবং পেটে জমা মেদ ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক ওজন বজায় রাখার জন্য ব্যালেন্সড ডায়েটে মনোনিবেশ করতে হবে। ডায়েটে যোগ করতে হবে প্রচুর পরিমাণ ফল-সবজি, উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার ইত্যাদি। তবে এড়িয়ে চলতে হবে উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত, ফ্যাটি এবং রিফাইন করা কার্বোহাইড্রেটে সমৃদ্ধ খাবার। এই তালিকায় থাকবে তেল, ঘি, চিজ, চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার ও রিফাইন করা ময়দার খাবার ইত্যাদি।
উচ্চ ঝুঁকিযুক্ত অভ্যাসও এড়িয়ে চলতে হবে। একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক স্থাপন এবং ভুলভাল ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থেকেও বিরত থাকা উচিত। এতে ভাইরাল হেপাটাইটিস বি এবং সি সংক্রমণ হতে পারে। এই ধরনের অভ্যাস এড়িয়ে ভাইরাসঘটিত হেপাটাইটিস সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করা সম্ভব। এর পাশাপাশি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য হেপাটাইটিস বি-এর টিকা নেওয়াটাও জরুরি। আর সবথেকে ভাল কথা হল হেপাটাইটিস এ-র ভ্যাকসিনও আজকাল বাজারে উপলব্ধ।
লিভার ডিজিজ নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যতম জরুরি পদক্ষেপ হল পার্সোনাল হাইজিন বজায় রাখা। শৌচাগার ব্যবহারের পর, খাওয়াদাওয়ার আগে-পরে কিংবা খাবার তৈরির আগে-পরে হাত ধোওয়ার অভ্যেস বজায় রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ভাল করে সেদ্ধ করা কিংবা রান্না করা খাবার খেতে হবে। পারলে জল ফুটিয়ে খাওয়া উচিত। এতে হেপাটাইটিস এ এবং ই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী রেজর, দাঁত মাজার ব্রাশ, ছুঁচ ইত্যাদি অন্য কারওর সঙ্গে শেয়ার করা যাবে না। এটা হেপাটাইটিস বি এবং সি-এর সংক্রমণ রুখতে সহায়ক।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করতে হবে এবং লিভারের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। অনেকেরই ফ্যাটি লিভার ডিজিজের ঝুঁকির কিছু বিষয় থাকে। এর মধ্যে অন্যতম হল অ্যালকোহল সেবন, রোগের পারিবারিক ইতিহাস, ওবেসিটি বা স্থূলতা, ডায়াবেটিস অথবা হেপাটাইটিস বি অথবা সি সংক্রমণ ইত্যাদি। এই ধরনের কোনও বিষয় থাকলে নিয়মিত ও সঠিক চিকিৎসা করা জরুরি।