গোটা বিশ্বেই বহু দম্পতি বন্ধ্যাত্বের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। আর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধ্যাত্ব এখন বিশ্বব্যাপী স্তরে অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, প্রজননগত বয়সে সারা বিশ্বে প্রায় ১০ শতাংশ দম্পতি এই সমস্যার শিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে, বিশেষ করে শুক্রাণুর মান খারাপ হওয়াই ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের জন্য দায়ী। তবে পরিবেশগত কারণে বন্ধ্যাত্ব এলে তার চিকিৎসা করা সম্ভব।
advertisement
সাম্প্রতিক কালে একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা হয়েছিল। তাতে ৩০ হাজারেরও বেশি পুরুষদের শুক্রাণু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। সমীক্ষায় থেকে জানা গিয়েছে যে, শুক্রাণুর গতিশীলতার উপর বায়ু দূষণের প্রভাব রয়েছে। অর্থাৎ শুক্রাণু সঠিক দিশায় ধাবিত হতে পারে না। এ-ও দেখা গিয়েছিল যে, দূষিত বাতাসে শ্বাসপ্রশ্বাস গ্রহণ করার ফলে শুক্রাণুর মান খারাপ হতে থাকে। আর সংখ্যাও কমতে থাকে। ফলে যাঁরা মা-বাবা হওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁরা সমস্যার মুখে পড়ছেন। আর পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের প্রাথমিক লক্ষণ হল, যৌন মিলনের ইচ্ছা হারিয়ে ফেলা।
বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রাস ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, ওজোন, সীসা, আণবিক কণার মতো রাসায়নিকের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাই বায়ু দূষণের প্রমাণ। সাম্প্রতিক সমীক্ষায় প্রমাণিত হচ্ছে যে, মানুষ ২.৫ মাইক্রন এবং ১০ মাইক্রনের পার্টিকুলেট ম্যাটারের সংস্পর্শে এলে রিয়্যাক্টিভ অক্সিজেন স্পিসিস তৈরি হয়। আর এটা অতিরিক্ত উৎপাদিত হলে ব্লাড-টেস্টিস ব্যারিয়ারের ক্ষতি হয়। ফলে স্পার্মাটোজেনেসিসের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে এবং শুক্রাণুর গতিশীলতাও কমে।
আরও পড়ুন: কিনেই সোজা ফ্রিজে? অজান্তেই নিজের সর্বনাশ করছেন! এই ৮ জিনিস ফ্রিজে রাখবেন না, দেখুন এক নজরে
কলকাতার বিড়লা ফার্টিলিটি এবং আইভিএফ সেন্টারের কনসালট্যান্ট এবং সেন্টার হেড ডা. সৌরেন ভট্টাচার্য এই নিয়ে কথা বললেন।
তাঁর কথায়, “বাতাসে উপস্থিত আণবিক কণা সাধারণত ইস্ট্রোজেনিক এবং অ্যান্টিঅ্যান্ড্রোজেনিক হয়। আর সেটা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে প্রবেশ করার ফলে টেস্টোস্টেরন ক্ষরণ এবং শুক্রাণুর কোষ নষ্ট হয়। পরিবেশগত এবং জীবনযাত্রাজনিত কারণে পুরুষদের প্রজনন স্বাস্থ্যে কিছু পরিবর্তন আসে। ধোঁয়ার মধ্যে উপস্থিত দূষণকারী পদার্থ পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। কিন্তু কীভাবে। মেডিক্যাল সমীক্ষায় জানা যাচ্ছে যে, দূষণকারী পদার্থ রক্ত, মূত্র এবং সেমিনাল ফ্লুয়িডে জমতে থাকে।”
তিনি আরও বলে, “কোভিড অতিমারির সময় থেকে প্রতিটি মানুষের জীবনে বড়সড় সঙ্কট নেমে এসেছে। যেসব দম্পতি ফার্টিলিটি চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান পরিকল্পনা করেছিলেন, তাঁরাও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিলেন। সেই কথা মাথায় রেখে ধারাবাহিক ভাবে মেডিক্যাল স্ক্রিনিং এবং নজরদারির পরে দেখা যায় যে, কোভিড অতিমারির পরে পুরুষ শুক্রাণুদাতাদের শুক্রাণুর প্যারামিটারের ক্ষেত্রে কোনও তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন দেখা যায়নি। এর পরে সাবধানতা এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। যার ফলে দাতাদের শুক্রাণুর মানের অস্বাভাবিকতা অনেকটাই কমানো গিয়েছে।”