কিরণ বলেন, " সিনেমা দেখে আমি ভেবেছিলাম এভাবেই হয়তো কেউ কোন ও মেয়েকে পছন্দ হলে, তাকে প্রেম নিবেদন করা হয়।" কিরনের স্মৃতিতে এখনও স্পষ্ট কিভাবে তাঁর স্কুলের বড় ছেলেরা, মেয়েদের পিছন পিছন তাদের বাড়িতে চলে যেত। তাদের দেখলে শিস দিত এবং তাদের বিরক্ত করত। ফলে প্রথমাবস্থায় এটাই তাঁর কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়েছিল। এমনকি ঘরে বসে সে যা দেখে, তুলনায় এই দৃশ্য তাঁর রোমান্টিক বলে মনে হত।
advertisement
আরও পড়ুন
Valentines day ২০২০: ভালোলাগার বয়স কত হলে, সেটা প্রেম?
"আমার বাবা-মা নিজেদের মধ্যে অশান্তি করতেন। একে অপরকে বাজে কথা বলতেন, এমনকি অভিশাপ দিতেও ছাড়তেন না। নিজেদের মধ্যে জিনিষ ছোড়াছুড়ি করতেন। সেটা দেখে আমার ভয় হত"- বলেন কিরণ। তাঁর বাবা-মা যে একে অপরকে পছন্দ করতেন না, তা একেবারেই স্পষ্টই ছিল। তাই আমি বেশিরভাগ সময়ই দু:খে থাকতাম। এজন্যই সিনেমায় দেখানো 'রোমান্টিক' দৃশ্য দেখে ভালো লাগত। কারণ সেখানে নায়ক নায়িকাকে পছন্দ করত। সেটা দেখতে ভালো লাগত।
কিরণের যখন ১৫ বছর বয়স, তাঁর ধারণাগুলো ধীরে ধীরে পাল্টাতে হতে শুরু করে। একদিন হঠাৎই তাঁর বোন কাঁদতে কাঁদতে টিউশন থেকে বাড়ি ফেরে। বাবা-মা বারবার জিজ্্যসা করলেও, সে বলতে চাইছিল না। এরপর কিরণের কাছে ভেঙে পড়ে বোন। জানায়, সন্ধ্যায় টিউশন থেকে ফেরার পথে দু'জন মদ্যপ তাঁকে হেনস্থা করে। তাঁকে জড়িয়ে ধরে এবং মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁকে অনুসরণ করে।" ঠিক এই ঘটনার পর থেকেই সে বুঝতে পারে মহিলারা কত সমস্যার মধ্যে দিয়ে যান। পাশাপাশি, সেদিন তাঁর আনন্দও হয়েছিল. কারণ বোন বিশ্বাস করে সব কথা তাঁকে জানিয়েছিল। কিরণ বলেন, "আমি সেই বয়সে তখন বান্ধবী চেয়েছিলাম। বোনের সঙ্গে সেদিন কী ঘটেছে তা যদি আমি না শুনতাম, তবে আমি হয়তো কোনও মেয়েকে লাঞ্ছনা করতাম।" তবে এই উপলব্ধি হওয়া সত্ত্বেও, মহিলাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া কঠিন ছিল। কিরণ জানান, একদিন তিনি লক্ষ্য করেন তাঁর খুরতুতো ভাই মোটরবাইকে করে মহিলাদের অনুসরণ করছে এবং তাঁদের অশ্লীল কথা বলছে। এরপর কিরণ তাঁর মুখোমুখি হলে ভাই বলেন, "সুন্দর মেয়েরা চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি?" এরকমই এক সময় কিরণকে পর্নোগ্রাফি দেখার প্রস্তাবও দেয় তাঁর এক ভাই।
আরও পড়ুন
Valentines day 2020:মেয়ে বলেই সম্পর্কে সব কিছু মেনে নেবেন ? এমন নয় ! নিজের অধিকার বুঝুন, কথা বলুন
এরপর কিরণ উচ্চশিক্ষার জন্য দিল্লিতে যান। তখন তার মহিলা বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই খোলামেলাভাবে কথা বলতেন। প্রথমে খানিকটা ইতস্তত বোধ হলেও পরে ধীরে ধীরে তা কেটে যায়। জড়তা কাটাতে কিরণ নারীবাদ সম্পর্কিত আলোচনা এবং কর্মশালায় যোগ দেন। পরে তিনি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে বুঝতে পারেন, কারও পিছু করা সহজ, কিন্তু সত্যিকারের প্রেম বিষয়টা বেশ জটিল। তা মোটেও সিনেমার মতো নয়। তিনি বুঝতে পারেন সঙ্গীর কথা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এটি ছাড়া সত্যিকারের কথোপকথন করা অসম্ভব। বুঝতে পারেন পর্ন দেখানোর চেয়ে কথা বলা, যোগাযোগ করা, যৌনতা কতটা আলাদা।
নিজের জীবন দিয়ে তিনি বুঝতে পারেন তিনি এমন একটি ভবিষ্যতের প্রত্যাশা করছেন যেখানে ছোট থেকেই ছেলে-মেয়েরা বন্ধুত্ব করবে। যার ফলে তারা একে অপরকে মানুষ হিসাবে দেখবে। একে অপরের সমস্যা বুঝতে পারবে। বিপরীত লিঙ্গ মানেই রহস্য, সেটা অন্তত মনে হবে না। মানুষ মানে তাদের কাছে হবে শুধুই মানুষ।