দেখে নেওয়া যাক ডা ঋতু শর্মা, এমডি, এনবি (মেডিকেল অনকোলজি), কনসালট্যান্ট মেডিকেল অনকোলজিস্ট, উজালা সিগনাস গ্রুপ অফ হসপিটালস, এই বিষয়ে কী বলছেন।
ঝুঁকি বোঝা দরকার
বিশ্বব্যাপী স্তন ক্যানসারের মধ্যে এক শতাংশেরও কম পুরুষদের স্তন ক্যানসার। রোগ নির্ণয়ের গড় বয়স সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হয়, যদিও BRCA2-এর মতো নির্দিষ্ট জিনগত পরিবর্তনের কারণে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি আগেও ঘটতে পারে। বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয় এই যে যে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে রোগ নির্ণয় হয় অনেক দেরিতে। নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের অভাব এবং কম জনসচেতনতার কারণে একজন পুরুষ যখন চিকিৎসা সহায়তা চান, তখন রোগ অনেকটা ছড়িয়ে যেতে পারে।
advertisement
আসলে, এই সমস্যার একটি বড় কারণ হল পুরুষদেরও যে স্তন টিস্যু আছে তা স্বীকার না করা, যদিও মহিলাদের তুলনায় তা পুরুষ শরীরে অনেক কম থাকে। পুরুষদের ক্ষেত্রে স্তন টিস্যুতে মূলত কয়েকটি নালী এবং স্ট্রোমা সহ ফ্যাটি টিস্যু থাকে, তা হলেও এটি মহিলাদের মতো একই ধরনের ক্যানসারে আক্রান্ত হতে পারে, সবচেয়ে সাধারণ হল আক্রমণাত্মক ডাক্টাল কার্সিনোমা। বেশিরভাগ পুরুষের স্তন ক্যানসার হরমোন রিসেপ্টর-পজিটিভ, যার অর্থ তাঁরা হরমোন-ব্লকিং থেরাপিতে ভাল সাড়া দেন।
ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
বয়স বাড়া
স্তন ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস
BRCA2 এবং অন্যান্য জিন মিউটেশন
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
স্থূলতা
দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ
পূর্ববর্তী চেস্ট রেডিয়েশন
কিছু বিরল অবস্থা, যেমন ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম (যেখানে একজন পুরুষ অতিরিক্ত X ক্রোমোজোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন) ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে।
লক্ষণ ও চিকিৎসা
লক্ষণগুলি প্রায়শই শুরুতে সূক্ষ্ম পর্যায়ে থাকে। স্তনবৃন্তের নীচে বা কাছাকাছি ব্যথাহীন পিণ্ড হল সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ, কখনও কখনও স্তনবৃন্ত বসে যাওয়া, ত্বকের পরিবর্তন বা স্রাব নিঃসরণ হতে দেখা যায়। দুর্ভাগ্যবশত, এই প্রাথমিক লক্ষণগুলি প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। কিছু পুরুষ লজ্জার কারণে বা স্তন ক্যানসারকে মহিলাদের রোগ বলে বিশ্বাস করার কারণে ডাক্তারের কাছে যেতে দ্বিধা করেন।
পুরুষদের স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা মূলত মহিলাদের চিকিৎসারই অনুরূপ এবং এতে অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন, কেমোথেরাপি এবং হরমোন (এন্ডোক্রাইন) থেরাপি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ট্যামোক্সিফেন, যা ইস্ট্রোজেনকে ব্লক করে, তা বিশেষভাবে কার্যকর, কারণ বেশিরভাগ পুরুষদের স্তন ক্যানসার ইস্ট্রোজেন রিসেপ্টর-পজিটিভ। এই নিয়ে গবেষণা এগিয়ে চলেছে এবং আমরা বুঝতে শুরু করেছি যে যদিও চিকিৎসা উভয় লিঙ্গের জন্য একই রকম হতে পারে, তবু পুরুষদের স্তন ক্যানসার কীভাবে বিকশিত হয় এবং থেরাপিতে কীভাবে সাড়া দেয়, কেন না এখানে একটা জৈবিক পার্থক্য রয়েছে যা আরও পুরুষকেন্দ্রিক গবেষণার জরুরি প্রয়োজন তুলে ধরে।
পুরুষদের স্তন ক্যানসার সম্পর্কে আলোচনা ধীরে ধীরে কিন্তু অবিচলভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। সচেতনতার প্রচারণা, বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সমর্থন এবং স্তন ক্যানসার গবেষণায় পুরুষদের বৃহত্তর অন্তর্ভুক্তি পুরনো ধারণাগুলি পরিবর্তন করতে সাহায্য করতে পারে। শক্তিশালী পারিবারিক ইতিহাস বা পরিচিত জেনেটিক ঝুঁকিযুক্ত পুরুষদের ক্ষেত্রে পেশাদারদের সঙ্গে সক্রিয় আলোচনা নির্ধারণ করতে পারে যে ঘন ঘন স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন আছে কি না। জেনেটিক কাউন্সেলিংই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের শনাক্তকরণে ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
আরও পড়ুন : রোজ ডায়েটে রাখুন এই ‘সাদা’ খাবার ও ২ লেবু! মলদ্বারে হবে না ক্যানসার! ফিকে হবে আশঙ্কার কালো মেঘ!
পুরুষদের স্তন ক্যানসার সম্পর্কে নীরবতা ভাঙা কেবল পরিসংখ্যান বা গবেষণার বিষয় নয়, এটি জীবন বাঁচানোরও বিষয়। প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ সফল চিকিৎসার জন্য সর্বোত্তম সুযোগ প্রদান করে, তবে এটি কেবল তখনই সম্ভব যদি পুরুষরা এবং তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীরা ঝুঁকিটি স্বীকার করে নেন এবং সতর্কতামূলক লক্ষণগুলি সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে পদক্ষেপ নেন। রোগ সম্পর্কে খোলামেলা কথা বলা, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের গল্প ভাগ করে নেওয়া এবং সম্প্রদায়কে শিক্ষিত করা সেই কলঙ্ক দূর করতে পারে যা অনেক পুরুষকে অন্ধকারে রেখেছে।
আরও পড়ুন : মলদ্বারে ক্যানসারের লক্ষণ কী? ‘এটা’ বেশি খাওয়ার জন্যই অল্প বয়সিদের মধ্যে হু হু করে বাড়ছে কোলন ক্যানসার! জানুন
পুরুষদের মধ্যে স্তন ক্যানসার বিরল হতে পারে, কিন্তু এটি কঠিন এক বাস্তব। ক্যানসার লিঙ্গভেদ করে না এবং আমাদেরও করা উচিত নয়। পুরুষদের এই অবস্থা মেনে নেওয়া উচিত এবং দ্বিধা ছাড়াই চিকিৎসা করানো উচিত। বৃহত্তর সচেতনতা, উন্নত শিক্ষা এবং অব্যাহত গবেষণার মাধ্যমে আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারি যেখানে কোনও পুরুষই খুব দেরিতে এই রোগ নির্ণয়ের মুখোমুখি হবেন না।