TRENDING:

ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি– আগাম সচেতনতাই হল সুরক্ষাকবচ

Last Updated:

ডায়াবেটিস সম্পর্কে প্রচলিত নানা রকম ভুল ধারণার মধ্যে অন্যতম হল, এই রোগ শুধুমাত্র তাঁদেরই হয় যাঁরা মোটা, মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন, এবং বয়স বেশি।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
NetraSuraksha অনলাইন সেল্ফ চেকআপ করান এখানে
advertisement

ডায়াবেটিস সম্পর্কে প্রচলিত নানা রকম ভুল ধারণার মধ্যে অন্যতম হল, এই রোগ শুধুমাত্র তাঁদেরই হয় যাঁরা মোটা, মিষ্টি খেতে ভালোবাসেন, এবং বয়স বেশি। তবে, বাস্তব সম্পূর্ণ অন্য কথা বলে। ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশান অ্যাটলাস ২০২১1 জানাচ্ছে:

● ২০-৭৯ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ৫ কোটি ৩৭ লক্ষ (৫৩৭ মিলিয়ন) জনের ডায়াবেটিস রয়েছে, অনুমান করা হচ্ছে এই সংখ্যা ২০৩০ সালে এই সংখ্যা ৬ কোটি ৪৩ লক্ষে, এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে ৭ কোটি ৮৪ লক্ষে (৭৮৪ মিলিয়ন) পৌঁছে যাবে।

advertisement

● প্রায় ১২ লক্ষ (১.২ মিলিয়ন) শিশু এবং কিশোর-কিশোরী (২০ বছরের কম বয়স) টাইপ I ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।

● গর্ভাবস্থায় হাইপারগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ২০২১ সালে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ শিশু জন্মগ্রহণ করেছে।

ভারতেও এই সংখ্যা খুব একটা কম নয়। অ্যাটলাস অনুযায়ী, ২০২১ সালে ভারতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ৭ কোটি ৪০ লক্ষ (৭৪ মিলিয়ন)। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই সংখ্যা ২০৩০ সালে ৯ কোটি ৩০ লক্ষে (৯৩ মিলিয়ন) এবং ২০৪৫ সালে ১২ কোটি ৪০লক্ষে (১২৪ মিলিয়ন)পৌঁছে যাবে1। তাছাড়াও অনুমান করা হচ্ছে,ভারতের আরও অন্তত ৩ কোটি ৯৩ লক্ষ (৩৯.৩ মিলিয়ন) ডায়াবেটিস রোগী রয়েছেন যাঁদের এখনও রোগ নির্ণয় করা হয়নি1।

advertisement

আশার কথা একটাই, ডায়াবেটিস অধিকাংশ ক্ষেত্রে শহুরে লোকেদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। তবে ভারতে লোকজন দ্রুত গতিতে শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন – অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর জন্য দায়ী হচ্ছে অফিসের কাজের চাপ। তাই কারণ টাইপ II ডায়াবেটিসকে একটি লাইফস্টাইলের সমস্যাজনিত রোগ বলে মনে করা হয়, এবং এই কারণে এটি নিরাময়যোগ্য। এই তথ্যগুলি সকলের জানা থাকলে, এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পেলে এই রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব। বর্তমানে বহু চিকিৎসকই মনে করেন, যদি একদম প্রাথমিক স্তরে রোগ ধরা পড়ে এবং সঠিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাহলে ডায়াবেটিস রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব।

advertisement

তাহলে জরুরি কিছু তথ্য ভাগ করে নেওয়া যাক। শরীর যখন যথেষ্ট পরিমাণে ইনসুলিন ক্ষরণ করতে পারে না, অথবা ক্ষরিত ইনসুলিন সঠিক ভাবে ব্যবহার করতে পারে না, তখনই ডায়াবেটিস রোগ হয়। ইনসুলিন হল অগ্ন্যাশয়ে ক্ষরিতএক ধরনের হরমোন, যা রক্তে উপস্থিত গ্লুকোজ-কে শরীরের কাজে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। মূলত ৩ প্রকার ডায়াবেটিস হয়4: জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস মেলিটাস (গর্ভাবস্থা চলাকালীন মায়েদের অনেক সময়ে এইরোগে আক্রান্ত হতে পারেন), টাইপ I ডায়াবেটিস (সাধারণত ছোটবেলা থেকেই এই রোগ থাকে, জেনেটিক কারণে হয়ে থাকে) এবং টাইপ II (এমন লাইফস্টাইল সম্পর্কিত রোগ যা নিরাময়যোগ্য, অধিকাংশ ডায়াবেটিস রোগী এই প্রকারেই আক্রান্ত হয়ে থাকেন)।

advertisement

এই রোগের যে উপসর্গগুলি সম্পর্কে আপনার জেনে রাখা উচিত, সেগুলি হল: বারবার মূত্রত্যাগ করা, অতিরিক্ত জলতেষ্টা পাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, এনার্জি কমে যাওয়া, ক্লান্তি, অবিরাম খিদে পাওয়া এবং মাঝেমধ্যে আচমকা ওজন বেড়ে যাওয়া ও রাতে বিছানা ভিজিয়ে ফেলা4। যদি আপনার শরীরে এগুলির মধ্যে এক বা একাধিক উপসর্গ থাকে, তাহলে অবশ্যই পরীক্ষা করিয়ে নিন। ডায়াবেটিস শুধুই আপনাকে ক্লান্ত বা খিটখিটে করে তুলবে না; তার পাশাপাশি এটি আপনার শরীরের এমন ক্ষতি করে দেবে যা সারানো সম্ভব নয়।

ডায়াবেটিস এবং রক্তে বর্ধিত গ্লুকোজের মাত্রার ফলে নানা রকম কার্ডিওভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়4। ডায়াবেটিসের পাশাপাশি যদি আপনার হাইপারটেনশনের সমস্যাও থাকে, তাহলে তার জন্য ৮০% ক্ষেত্রে শেষ স্টেজের কিডনির রোগ হতে পারে4। বিশ্বের অন্তত ৪-৬ কোটি মানুষ ডায়াবেটিক ফুট এবং লোয়ার লিম্বে নানা রকম জটিলতায় আক্রান্ত হন, এছাড়া – যন্ত্রণাময় আলসার ও পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ-এর মতো ক্রনিক রোগ হতে পারে, এই রোগের ফলে শরীর তার চলাচলের স্বাভাবিক ক্ষমতা অনেকটাই হারিয়ে ফেলে4।

তবে ডায়াবেটিস রোগের সবচেয়ে মারাত্মক ও জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি, তবে এটি এড়ানো সম্ভব। US ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ-এর ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক রোগীই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি-তে আক্রান্ত হন2। ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল,এই রোগের প্রাথমিক ধাপে কোনও উপসর্গ দেখা যায় না। অনেকের অবশ্য দেখারসমস্যা হয়, যেমন পড়তে অসুবিধাকিংবা দূরের জিনিস দেখতে অসুবিধার মতো সমস্যা লক্ষ্য করেন। তবে সেই সমস্যা মাঝেমধ্যে হয়, আবার ঠিক হয়ে যায়। তবে পরবর্তী ধাপে, রেটিনার সাথে যুক্ত রক্তজালিকাগুলি থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়, এর ফলে ফ্লোটিং স্পট তৈরি হয়, কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে রোগী দৃষ্টিশক্তি পর্যন্ত হারাতে পারেন2।

ঠিক এই কারণেই স্ক্রিনিং করানো অত্যন্ত জরুরি। দেখা গিয়েছে, ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং চালু করার ফলে মাত্র ৮ বছরের মধ্যে, যুক্তরাজ্যে এখন আর এই রোগের কারণে কর্মক্ষম জনগণের কেউ দৃষ্টিশক্তি হারান না। এমনকী ওয়েলস-এও, এই রোগের জেরে দৃষ্টিশক্তি হারানোর মতো সমস্যা প্রায় ৪০-৫০% হ্রাস পেয়েছে 4f।

ফলে, স্ক্রিনিংয়ের ফলে ভালো কাজ হয় এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে এর ফলাফল তখনই ভালো হবে যখন আপনি এতে অংশগ্রহণ করবেন। ন্যাশনাল ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সার্ভে অনুযায়ী, ভারতে (২০১৯), ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় হয়েছে এমন ৯০% রোগীই ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি এড়ানোর জন্য কখনো চোখের পরীক্ষা করাননি3।

ঠিক এই কারণেই Novartis–এর সাথে হাত মিলিয়ে Network18 চালু করেছে 'নেত্র সুরক্ষা'– ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে ভারত উদ্যোগ, যার মূল লক্ষ্য হল ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি রোগ। ২৭ নভেম্বর, ২৭ নভেম্বর, ২০২১ থেকে চালু হওয়ার পরেই, এই উদ্যোগের জেরে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি নিয়েএকটি সিরিজ ধরে গোল টেবিল বৈঠক হয়েছে, এগুলি আপনারা দেখতে পাবেন YouTube, News18.com এবং https://www.facebook.com/cnnnews18/ -এ।

আগামী কয়েক সপ্তাহে আরও দুইটি গোল টেবিল বৈঠকের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের মেডিকাল কমিউনিটি, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক এবং নীতি প্রণেতা-দের সাহায্য করা। এই বিষয়ে নানা রকম ব্যাখ্যামূলক ভিডিও এবং প্রতিবেদন আপনি দেখে নিতে পারেন News18.com-এ।

এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য খুবই সহজ: আপনাকে সমস্ত জরুরি তথ্য প্রদান করা, যা আপনাকে নিজের এবং আপনার প্রিয়জনদের একটি খুব সাধারণ, যন্ত্রণাহীন চোখের পরীক্ষা করাতে অনুপ্রাণিত করবে। এমন একটি সাধারণ পরীক্ষার ফলাফল আগামী বছরগুলিতে আপনার জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিতে পারে।

এখানে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সেল্ফ চেক-আপ করার মাধ্যমে আপনার যাত্রা শুরু করুন, এবং জরুরি যে রক্তপরীক্ষাটি সাম্প্রতিক অতীতে করাননি, সেটি করিয়ে নিন। ডায়াবেটিস এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি সংক্রান্ত পরিসংখ্যানগুলি খুবই আশঙ্কাজনক, বিশেষ করে ভারতীয় শহরগুলির চাকুরেদের ক্ষেত্রে, কিন্তু এখনও পর্যন্ত আমাদের কাছে দৃষ্টিশক্তি নামক আশীর্বাদ রয়েছে এই পরিসংখ্যানগুলি ভালো করে দেখার এবং সাবধান হওয়ার জন্য। এই ক্ষমতাকে বাঁচানোর জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করা উচিত।

নেত্র সুরক্ষা- ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে ভারত, এই উদ্যোগ সম্পর্কে আরও আপডেট পেতে News18.com–এর সাথে থাকুন, এবং ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির বিরুদ্ধে ভারতের এই লড়াইয়ে নিজেকে সামিল করুন।

উৎস:

1. IDF অ্যাটলাস, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশান, ১০ম এডিশন, ২০২১

2. https://www.nei.nih.gov/learn-about-eye-health/eye-conditions-and-diseases/diabetic-retinopathy

3. ন্যাশনাল ব্লাইন্ডনেস অ্যান্ড ভিজুয়াল ইম্পেয়ারমেন্ট সার্ভে ২০১৫-২০১৯, মিনিস্ট্রি অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার, গভর্নমেন্ট অফ ইন্ডিয়া। ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ সেন্টার ফর অপথ্যালমিক সায়েন্সেস, AIIMS, নিউ দিল্লী

4. IDF অ্যাটলাস, ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশান, ৯ম এডিশন, ২০১৯

বাংলা খবর/ খবর/লাইফস্টাইল/
ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি– আগাম সচেতনতাই হল সুরক্ষাকবচ
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল