জার্মানির মুনস্টার ইউনিভার্সিটির পিএইচডি গবেষক মারিয়া ব্লোচল নিউজ এজেন্সি এএনআইকে বলেছেন, ‘স্ট্রোক হয়েছে এমন মানুষদের হতাশা এবং অবসাদ সবচেয়ে সাধারণ সমস্যা। এটাকে সাধারণত স্ট্রোক পরবর্তী বিষণ্ণতা বলা হয়। এরপর তিনি যোগ করেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শুধু স্ট্রোকের পর নয়, স্ট্রোক হওয়ার আগেও মানুষের মধ্যে বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো উঁকি দিতে শুরু করে’।
advertisement
আরও পড়ুন Piles Problem and home remedy: অর্শ বা পাইলসের কষ্ট পাচ্ছেন? এই ঘরোয়া উপায়ে আরাম পেতে পারেন
গবেষণায় কী দেখা গিয়েছে: ১০,৭৯৭ জন প্রাপ্তবয়স্কের উপর টানা ১২ বছর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ৬৫ বছর। গবেষণা চলাকালীন মোট ৪২৫ জনের স্ট্রোক হয়েছিল। এই গবেষণাতেই দেখা গিয়েছে, শুধু স্ট্রোকের পর বিষণ্ণতা গ্রাস করে তাই নয়, স্ট্রোক হওয়ার আগে থেকেই লক্ষণগুলো দেখা দিতে শুরু করে।
কীভাবে বিশ্লেষণ করা হল: গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রতি দু’বছর অন্তর একটি সার্ভেতে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়। সেখানে তাঁদের একা হয়ে যাওয়া, মনে দুঃখবোধের জন্ম, ঘুমে ব্যাঘাতের মতো একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়। অংশগ্রহণকারীদের উপসর্গ এবং অভিজ্ঞতার উপর স্কোর বরাদ্দ করা হয়েছিল। উপসর্গ যত বেশি স্কোর তত বেশি।
গবেষণার ফলাফল: গবেষকরা দেখেছেন, স্ট্রোকের ২ বছর আগে, স্ট্রোক হওয়া অংশগ্রহণকারীদের স্কোর ০.৩৩ পয়েন্ট বেড়েছে। এটা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, স্ট্রোক হওয়ার ২ বছর আগে থেকে বিষণ্ণতা গ্রাস করতে থাকে। স্ট্রোকের পর তা আরও বাড়ে। এবং ১০ বছর পর্যন্ত তা উচ্চ মাত্রায় বজায় থাকে।
বিষণ্ণতার যে লক্ষণগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত: প্রাথমিকভাবে বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো খুব সূক্ষ। ফলে অনেকেই এগুলোকে উপেক্ষা করেন। এ জন্যই বিষণ্ণতা বাড়ে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুঁকি। বিষণ্ণতার লক্ষণগুলো হল- মনোনিবেশে সমস্যা, ক্লান্তি এবং চরম ক্লান্তি, নেতিবাচকতা এবং হতাশাবাদ, অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস, অস্থিরতা, যে কাজ আগে করতে ভালো লাগত তাতেও আগ্রহের অভাব, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, নিয়মিত মাথাব্যথা, অন্ত্রের সমস্যা, শূন্যতার অনুভূতি। গবেষক মারিয়া ব্লোচ বলছেন, ‘বিষণ্ণতার উপসর্গের বৃদ্ধি, বিশেষ করে মেজাজ এবং ক্লান্তি-সম্পর্কিত উপসর্গগুলি স্ট্রোকের আগাম সংকেত হতে পারে’।
স্ট্রোকের কারণ: স্ট্রোকের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। এছাড়া রয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস এবং স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ইতিহাস। স্ট্রোকজনিত অকালমৃত্যুর দুই-পঞ্চমাংশই ধূমপানের কারণে। ব্যায়াম বা শারীরিক ক্রিয়াকলাপের অভাব, অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, বেআইনি ওষুধ এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রাও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতাও স্ট্রোকের সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।