ডেঙ্গু জ্বর ডেঙ্গু ভাইরাস (DENV) বহনকারী মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়। মূলত Aedes aegypti এবং আংশিকভাবে Aedes albopictus মশা এই ভাইরাস ছড়ায়। এই মশাগুলি শহরাঞ্চলে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়েছে এবং বাড়ি, অফিস, ও জনবহুল এলাকায় জমে থাকা পরিষ্কার জলে প্রজনন করে। একবার আক্রান্ত হলে, একটি মশা তার জীবদ্দশায় বহুবার ভাইরাস ছড়াতে পারে।
advertisement
ম্যালেরিয়া যেখানে রাতে Anopheles মশার কামড়ে ছড়ায়, সেখানে Aedes মশা এক নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ নয়। এদের কামড়ানোর প্যাটার্ন পরিবর্তনশীল হওয়ায় সময় নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
বিজ্ঞান কী বলছে – Aedes aegypti মশার সর্বোচ্চ সক্রিয়তা সকালবেলা ও বিকেলের দিকে দেখা যায়। এই তথ্য জাতীয় ভেক্টর-বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গেছে। সাধারণত সূর্য ওঠার দুই ঘণ্টা পর এবং সূর্য ডোবার কয়েক ঘণ্টা আগে এদের কামড়ানোর হার সবচেয়ে বেশি।
তবে, এদের কামড়ানো শুধু সকালেই হয় না। দিনের অন্যান্য সময়েও, বিশেষ করে ঘরের ভেতর অন্ধকার বা ছায়াযুক্ত জায়গায়, এরা কামড়াতে পারে। বর্ষাকালে এদের প্রজননের স্থান বেড়ে যায় এবং সক্রিয়তাও প্রায় সারাদিন ধরে থাকে, ফলে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
“ডেঙ্গুর মশা শুধুই সকালে কামড়ায়”—এই ধারণার উৎপত্তি হয়েছে সূর্য ওঠার পর কামড়ানোর হার বেড়ে যাওয়া নিয়ে পর্যবেক্ষণ থেকে। তবে, এটি পূর্ণ সত্য নয়। বিকেল ও সন্ধ্যাতেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
যেহেতু Aedes মশার কার্যক্রম নির্দিষ্ট সময়ে সীমাবদ্ধ নয়, তাই ডেঙ্গুর প্রতিরোধ চব্বিশ ঘণ্টার সচেতনতা দাবি করে। নারায়ণা হেলথ হাসপাতাল থেকে প্রদত্ত সুপারিশগুলো হলো:
পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ – ফুলদানি, বালতি, থালা, ফেলে রাখা টায়ার, খোলা জলের ট্যাংক ইত্যাদি থেকে জমে থাকা পানি ফেলে দিন। পাখির পাত্র ও গাছের ট্রেতে জল বারবার বদলান এবং সংরক্ষিত জল ঢেকে রাখুন।
শারীরিক প্রতিরোধ – জানালা ও দরজায় জাল লাগান, পূর্ণহস্ত জামা পরুন এবং দিনের ব্যস্ত সময়ে দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন।
মশা নিরোধক ব্যবহার – দিনের বেলাতেও মশা নিরোধক ক্রিম বা স্প্রে ব্যবহার করুন। চাইলে মশার জাল ব্যবহার করুন।
সামাজিক সচেতনতা – পাড়ায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালান। জমে থাকা জল, আবর্জনা পরিষ্কার করুন। ধোঁয়াচালন (ফগিং) ব্যবস্থাও কার্যকর।
ভ্রমণের সময় সতর্কতা – ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকা বা বৃষ্টিপাত-বহুল অঞ্চলে গেলে দিনের যেকোনো সময়েই মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
সচেতনতা কেন জরুরি – বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন এবং তার বড় অংশই ভারতে। মশার আচরণ নিয়ে ভুল ধারণা মানুষকে অসাবধান করে তোলে, যার ফল হতে পারে মারাত্মক।
“ডেঙ্গুর মশা শুধুই সকালে কামড়ায়”—এই ধারণা এদের জটিল আচরণকে অতি সরলীকরণ করে। Aedes aegypti সাধারণত সকাল ও বিকেলে বেশি সক্রিয় হলেও, কামড় যে কোনও সময়ে হতে পারে।
জনস্বাস্থ্য রক্ষায় নির্দিষ্ট “বিপজ্জনক সময়” নয়, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিয়মিত সতর্কতাই আসল হাতিয়ার। সতর্কতা ও তথ্যপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজ, উভয়ই ডেঙ্গু সংক্রমণ অনেকাংশে কমাতে পারে। কারণ, প্রতিরোধের প্রথম ধাপ সঠিক জ্ঞান।