কোভিডের সঙ্গে সমস্ত রোগ/সংক্রমণকে মেলানো বন্ধ করতে হবে:
২০২০ সালের মার্চ মাসে ভারতে লকডাউন ঘোষণার পরে যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা ৭০% কমে যেতে দেখা গিয়েছে। আশ্চর্যজনকভাবে টিবি রোগের সংখ্যা কমে যাওয়ার পিছনেও রয়েছে কোভিড-১৯। যেখানে প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন মানুষের টিবি চিহ্নিত হত, সেখানে কোভিডের কারণে টিবি পরীক্ষা অনেক কমে যায়। অতিমারীতে দেখা গিয়েছে যে শারীরিক জটিলতা থাকলেও অনেকেই মেডিকেল চেক আপ করাননি। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা না হওয়ায় রোগীর অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তাই চিকিৎসকেরা বারে বারেই যে কোনও রোগে প্রথম থেকেই সতর্ক হতে এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেছেন।
advertisement
আরও পড়ুন: মাঝে মাঝেই হাতে ব্যথা? শরীর কোনও মারাত্মক রোগের জানান দিচ্ছে না তো?
অন্যান্য অসুখে জটিলতা:
অতিমারীর পর অন্যান্য সংক্রমণ এবং রোগের হার কমে যায়। উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখের মতো রোগ এবং টিবির মতো সংক্রমণ যেখানে প্রতি বছর বহু মানুষের জীবন কেড়ে নেয়, সেগুলির নিয়মিত পরীক্ষা এবং চিহ্নিত করা প্রয়োজন। এই ধরনের রোগে আক্রান্তদের নিয়মিত শারীরিক অবস্থার খেয়াল রাখা উচিত। যদিও অতিমারীতে সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় প্রভাব পড়ে। সেসময় করোনাভাইরাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে মানুষ ঘরবন্দী ছিল। দু'বছর পরেও অন্যান্যদের তুলনায় সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি থাকায় বয়স্করা এখনও ঘরেই বেশি থাকেন। তাই সব রকমের প্রতিরোধ ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অন্যান্য স্বাস্থ্যের পরীক্ষার রুটিনও পরিকল্পনা করে নিতে হবে।
কোভিডের ভয় বুঝতে হবে:
কোভিডের আতঙ্ক খুবই স্বাভাবিক। সংশ্লিষ্ট ভাইরাল আক্রমণের ভয়াবহতা সকলেরই জানা রয়েছে। তবে সমস্ত শারীরিক লক্ষণই কোভিড নয়। কোভিড সংক্রমণের সন্দেহ হলে নিজে থেকেই এক সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকলে লাভ হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে কোভিড ছাড়া অন্য কিছু হলে কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে অন্য রোগটি বাড়তে থাকবে। যেমন শারীরিকভাবে কম সচল থাকলে কিংবা ভারী কিছু তোলার সময়ে পেশি মচকে গেলে পেশিতে ব্যথা হতে পারে। আবার মাথা ব্যথা মানেই সবসময় কোভিড হয়েছে এমনটা কখনওই নয়। ঠান্ডা লাগলে কিংবা দুশ্চিন্তায় থাকলেও যেমন মাথা ব্যথা হতে পারে।
আরও পড়ুন: শুধুই পানীয় নয়, বর্ষায় মশার কামড় থেকে বাঁচাতেও অব্যর্থ গ্রিন টি
কোভিড না হলে অসুস্থতার কারণ কী:
বেশ কয়েকটি সংক্রমণের সঙ্গে কোভিডের লক্ষণের মিল রয়েছে।
রাইনোভাইরাসের সাধারণ সর্দি:
সমস্ত রকম রাইনোভাইরাস থেকেই অনেকের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এমনকী এক্ষেত্রে একজনের থেকে অন্যজনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ারও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সাধারণ সর্দি-কাশির উপসর্গগুলো অনেকটা কোভিডের মতোই হয়।
নোরোভাইরাসের সংক্রমণ:
নোরোভাইরাসের সংক্রমণে ডায়রিয়া এবং পেটে ব্যথা হতে পারে যা কোভিডের অন্যতম পরিচিত উপসর্গ। করোনাভাইরাসের মতো, নোরোভাইরাসও খুবই সংক্রামক, আঙুলের ডগায় ও কোনও বস্তুর পৃষ্ঠতলে এই ভাইরাস বেশিক্ষণ থাকে। স্যানিটাইজার এবং জীবাণুনাশকই একমাত্র সংক্রমণ প্রতিরোধ করার এক্ষেত্রে উপায়।
আরও পড়ুন: শরীর ভাল রাখতে কাঁচা দুধ খাচ্ছেন? দেখে নিন কী বিপদ লুকিয়ে আছে!
মাইলজিয়া:
চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় পরিচিত মাইলজিয়ায় পেশিতে ব্যথা হয় যা সাধারণত কোভিড রোগীদের শরীরেও দেখা যায়। যদিও মাইলজিয়ায় আরও অনেক সমস্যা হয়। এটি দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে কিংবা শুয়ে থাকার কারণে হতে পারে যা অতিমারীতে অনেকেরই কম শারীরিক সক্রিয়তার কারণে হতে দেখা যায়।
দুর্বলতা:
যে কোনও ক্লান্তির কারণ কোভিড নাও হতে পারে। বিভিন্ন কারণে আমাদের শরীরে ক্লান্তি আসতে পারে। তবে অনবরত অসুস্থ বোধ করলে লাইফস্টাইলের দিকে নজর দেওয়া উচিত। সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াও জরুরি।
ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ: কয়েক মাস ধরে গলা ব্যথা, কাশি স্ট্রেপ্টোকক্কাস পাইজেনস ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ইঙ্গিত হতে পারে। যা কয়েক সপ্তাহ বা মাস পরে ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়।
অ্যান্টি-কোভিড ব্যবস্থা অন্যান্য রোগ থেকে বাঁচাবে না:
যদিও কোভিডের উপযুক্ত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন, তবে শরীরে অন্য কোনও রোগ হয়েছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সব রোগের সঙ্গে কোভিডকে মেলানো উচিত নয়। কারণ প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু না করলে অন্য রোগের জটিলতা বাড়তে পারে।