২০২২-এর ডিসেম্বরের শুরু থেকেই চিনে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ফের বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। আর তাতেই আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। জানা গিয়েছে, এবার করোনা ভাইরাসে যে উপ-প্রজাতিটি সংক্রমণ বাড়াচ্ছে সেটি ওমিক্রনের বিএফ ৭।
advertisement
তবে কেন এমন ভাবে ফের ছড়াল সংক্রমণ তা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন চিনে দীর্ঘদিন ‘জিরো কোভিড’ নীতি জারি থাকার ফলে সংক্রমণের হার কম ছিল। সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা একেবারে তুলে নেওয়ায় হু-হু করে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। সে ক্ষেত্রে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তত্ত্বের কথাই বলছেন অনেকে। অতিরিক্ত কড়াকড়ির ফলে চিনে গড়ে ওঠেনি গণপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। তার ফলেই বেশ খানিকটা কাবু হয়ে পড়েছেন চিনের মানুষজন।
তবে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বই সতর্ক। এই অবস্থায় ভারতে এখনও পর্যন্ত এই উপ-প্রজাতির করোনাভাইরাস আক্রান্ত চারজনের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রের তরফ থেকে রাজ্যগুলির জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জারি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাগরিকদেরও কোভিড আচরণ বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান হয়েছে।
আরও পড়ুন: উৎসবের আবহে করোনা থেকে বাঁচবেন কীভাবে? জেনে নিন ১০ উপায়
যদিও ভারতীয় জনগণের মধ্যে এখনও বেশ গা ছাড়া মনোভাব দেখা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন ওমিক্রনের বিএফ ৭ উপ-প্রজাতি তেমন প্রভাব ফেলতে পারবে না। কিন্তু সত্যিই কি তাই! না কি এদেশে আরও একটি করোনা ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে নতুন বছরে!
এই উপ-প্রজাতির করোনা ভাইরাসটি যে যথেষ্ট প্রভাবশালী তা দেখিয়ে দিয়েছে চিনের পরিস্থিতি। শুধু চিন নয়, ইউরোপের একাধিক দেশ, আমেরিকাতেও প্রভাব পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও একে উদ্বেগজনক বলে দাবি করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। ফলে আগামী দিনে ভারতে কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়তে পারে এই উপ-প্রজাতির প্রভাবে।
জানা গিয়েছে গত অগাস্ট মাস থেকেই এই উপ-প্রজাতি বিরাজ করছে মানব শরীরে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফাঁকি দিয়ে শরীরে গোলমাল পাকানোর ক্ষমতাও রয়েছে এর। অর্থাৎ, যাঁরা এর আগে সংক্রমিত হয়েছিলেন বা টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের আক্রমণ করতে পারে বিএফ ৭। সতর্ক থাকাই একমাত্র পথ।
তবে বেশির ভাগ চিকিৎসকই মনে করছেন টিকা এবং পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে বেশির ভাগ মানুষের মধ্যেই। তার ফলে গুরুতর রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে হয়তো। তাতে সংক্রামিতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি নাও হতে পারে। এখনও পর্যন্ত পাওয়া রিপোর্টগুলি থেকেও জানা যাচ্ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার বা গুরুতর রোগের নিদর্শন কম।
ওমিক্রন এর আগেই ভারতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তাই তার উপ-প্রজাতি বিএফ ৭ খুব মারাত্মক প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে আশঙ্কার জায়গা রয়েছে অন্যত্র।
এই ভাইরাস দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে। এর মধ্যে কোনও রূপ বিপজ্জনক হয়ে উঠতেই পারে। তাই কোনও ভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। মাস্ক বা অন্য নিরপত্তা মূলক ব্যবস্থা রাখা প্রয়োজন। চিকিৎসকেরা দাবি করছেন এই পরিস্থিতিতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান সীমিত রাখা প্রয়োজন। বেশি ভিড়ের মধ্যে না যাওয়াই ভাল।
সেই সঙ্গে বুস্টার ডোজও নেওয়া দরকার। এটি সংক্রমণের তীব্রতা এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো পরিস্থিতি রোধ করতে পারে।
এ দিকে ভারতের আবহাওয়া এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যাতে সর্দি-গর্মির প্রবণতা তৈরি হয়েছে। বহু মানুষই এই সর্দি জ্বর, হাঁচি কাশির সমস্যায় ভুগছেন। প্রায় প্রতি ঘরেই অসুখ। কিন্তু ঘটনা হল নতুন ওমিক্রন উপ-প্রজাতি সংক্রমণের ক্ষেত্রেও একই রকম উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। লক্ষণ প্রায়ই ঠান্ডা লাগা, ফ্লু এবং অন্য শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের সঙ্গে তা গুলিয়ে যেতে পারে।
নতুন প্রজাতির করোনা সংক্রমিতের মধ্যে গলা ব্যথা, জ্বর, সর্দি, কাশি, ক্লান্তি, গা হাত পায়ে ব্যাথা, মাথা ব্যথা, শ্বাস কষ্টের মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে। এমন অসুস্থতা থাকলেও খানিকটা নিরালায় থাকা দরকার। কারণ রোগ ছড়িয়ে পড়লে সুস্থ মানুষের প্রতিরোধ ক্ষমতা তা লড়ে নিতে পারতে পারে। কিন্তু কো-মর্বিডিটি যুক্ত মানুষ, বয়স্করা খুব সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়বেন। তাঁদের বিপদও বেশি।