সম্প্রতি সংগঠনের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে চেয়ারম্যান এবং ডিরেক্টর রুবি রায় তাঁর বক্তব্যে একটি পরিসংখ্যান পেশ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে চতুর্থ জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষা (National Family Health Survey), সংক্ষেপে NFHS-4 ২০১৫-২০১৬ সালের নিরিখে এক মর্মন্তুদ ছবি তুলে ধরেছে। এই সমীক্ষা জানাচ্ছে যে দেশের ৩৩৬ মিলিয়ন নারীর মধ্যে মাত্র ৩৬ শতাংশ, অর্থাৎ ১২১ মিলিয়ন নারী ঋতুচক্রজনিত স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেন এবং এঁরাই মূলত ঋতুচক্রকালীন পণ্যের উপভোক্তা। বাকি যে বিপুল পরিমাণ সংখ্যা পড়ে রইল, তাদের ক্ষেত্রে সচেতনতার ন্যূনতম দৃষ্টান্তও চোখে পড়ে না। এর জন্য দায়ী করতে হয় ঘুরে-ফিরে সেই সমাজকেই, রায় জানিয়েছেন যে দেশের ৭১ শতাংশ নারী প্রথম অভিজ্ঞতা থেকেই ঋতুচক্রের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত হন, এই নিয়ে পরিবারের তরফেও কেউ তাঁদের সচেতন করেন না! ফলে, নানা ধরনের অজ্ঞানতার শিকার হন এঁরা পরবর্তীকালে, সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয় স্বাস্থ্য এবং তার যত্ন নেওয়ার বিষয়টিও।
advertisement
সত্যি বলতে কী, দীর্ঘ দিন ধরেই দেশে ঋতুচক্রকালীন সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। রায় যে তথ্যগুলো তুলে ধরেছেন, সেগুলোও বড় একটা অজানা নয়। নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এই মর্মে দেশকে সচেতন করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। তাহলে ঠিক কোন জায়গায় অ্যাকশন ল্যাব ২০৫০-এর উদ্যোগকে অভিনব বলে ব্যাখ্যা করতে হয়?
জানা গিয়েছে যে অ্যাকশন ল্যাব ২০৫০ যেমন দেশের নারীদের মধ্যে ঋতুচক্রকালীন সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করবে, তেমনই তারা এক ছাদের তলায় বিনিয়োগকারীদের নিয়ে আসার মতো এক বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে এই সংগঠন একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম তৈরি করার কথা ভেবেছে যেখানে শুধু ঋতুচক্রকালীন পণ্যই পাওয়া যাবে। এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের সূত্র ধরে অ্যাকশন ল্যাব ২০৫০ দেশের সব প্রান্তের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকেও এক জায়গায় নিয়ে আসার কথা ভেবেছে, যাতে সারা দেশ জুড়ে সক্রিয় ভাবে নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। এই জায়গা থেকেই উঠে আসে বিনিয়োগের প্রশ্ন। অ্যাকশন ল্যাব ২০৫০-এর আশা, দেশ জুড়ে বিনিয়োগকারীদের ঋতুচক্রকালীন পণ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে পারবে তারা, সম্ভব হবে দেশের নানা প্রান্তে বিপুল পরিমাণে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন যাতে সহজেই দরকারের সময়ে স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারেন নারীরা।
তবে সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়া এই বিশাল কর্মকাণ্ড পরিচালনা সম্ভব নয়! এই প্রসঙ্গে অ্যাকশন ল্যাব ২০৫০ জানিয়েছে যে তাদের কর্মসূচির মধ্যে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় স্তরে নানা সরকারি শাখাকেও অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। দেশের যে সব প্রতিষ্ঠানে ঋতুচক্রকালীন বিষয় নিয়ে গবেষণা চলছে, সেখানেও কড়া নেড়েছে অ্যাকশন ল্যাব ২০৫০, যাতে বিষয়টি নারীর অধিকার হিসাবে একটি পৃথক সাংবিধানিক অধিকারের অনুমোদন পায়!