পূর্ব বর্ধমান জেলার খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার বাসিন্দা স্বপন দত্ত, তবে তিনি বর্তমানে বর্ধমান শহরের গোলাহাট এলাকায় বসবাস করেন। একেবারে জরাজীর্ণ আগাছায় ভরা তাঁর মাটির বাড়ি। আর সেই বাড়ির মধ্যেই একটা ছোট্ট ঘরে বসে তিনি চালিয়ে যান বাউল চর্চা। দীর্ঘ বহু বছর ধরে তিনি এই বাউল গানের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। তবে গান গাওয়ার পাশাপাশি তিনি ভাল তবলা বাজাতে পারেন, গান লিখতে পারেন এছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রতিভা রয়েছে। শিল্পী হিসেবে তিনি আকাশবাণীতে একাধিক অনুষ্ঠানও করেছেন।
advertisement
আর এই আকাশবাণীতে অনুষ্ঠান করার সুবাদে কিংবদন্তি শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বর্ধমানের বাউল শিল্পী স্বপন দত্তের। পরবর্তীতে একটি আধুনিক গান নিজে লিখে তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন। স্বপন দত্ত বলেন, “হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে দিয়ে আমার একটা গান গাওয়ানোর বড় ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সেটা আমার হয়ে ওঠেনি। জীবনের শেষ সময়ে যে বছর তিনি মারা যান সেই বছরই ওঁর সঙ্গে আমার আলাপ হয়। আমার লেখা ‘ওই দুষ্টু চোখের মিষ্টি চাওয়া পাগল করেছে। বাঁকা চোখের ইশারাতে মন কেড়েছে আমায় পাগল করেছে’ এই গানটি আমি সুর করে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম। উনি সেটা দেখে শুনে খুব পছন্দ করেছিলেন এবং গানটা রেকর্ডিং করবেন বলেও ঠিক করেছিলেন। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য রেকর্ডিং হওয়ার চার দিন আগেই উনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। কিন্তু তারপর থেকে এই গান আমি অন্য কাউকে দিয়ে গাওয়াইনি।”
আরও পড়ুন: ট্রেনে কোন ‘ফল’ নিয়ে উঠলে আপনি ‘জেলে’ যেতে পারেন জানেন…? ‘উত্তর’ শুনলেই চমকাবেন!
এবার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই না গাওয়া গান তিনি নিজেই গাইলেন। এত বছর ধরে তিনি স্মৃতি, দুঃখ, কষ্ট আঁকড়ে ধরেছিলেন। তবে সেই গান তিনি কোনও শিল্পীকে দিয়ে গাওয়াননি। তবে পরবর্তীতে ঠিক করেন নিজেই সেই গান গাইবেন এবং জনসমক্ষে তুলে ধরবেন। সেইমত বৃহস্পতিবার একটি স্টুডিও থেকে তিনি এই গান রেকর্ড করেন। অতি শিঘ্রই সামনে আসবে সম্পূর্ণ গানটি। স্বপন দত্ত বাউলকে কমবেশি গোটা রাজ্যের মানুষ চেনেন।
কারণ তাঁর গাওয়া বাউল গানের মধ্যে থাকে সচেতনতামূলক বার্তা। ভোট থেকে শুরু করে পথদূর্ঘটনা সহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি একাধিক গান গেয়েছেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। বহু জায়গায় তিনি পুরস্কারও পেয়েছেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সম্মানিতও হয়েছিলেন। তবে এবার আর বাউল নয়, গাইলেন আধুনিক গান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের না গাওয়া সেই গান ছড়িয়ে পড়বে গোটা রাজ্যে।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী