দেবকন্যা ভট্টাচার্য। বয়স ২৮ বছর। বাড়ি ই এম বাইপাসের পাশে মেট্রোপলিটনে। সেই কোন ছোটবেলা থেকে শারীরিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে এই দেবকন্যাকে। তখন সাউথ পয়েন্ট স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন দেবকন্যা। হঠাৎই পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। স্ক্যান করে দেখা যায় দেবকন্যার বাঁ-দিকের ওভারিতে টিউমার। বায়োপসিতে ধরা পড়ে সেই টিউমার ক্যানসেরাস। সেই ছোট্ট বয়সেই বাদ যায় দেবকন্যার বাঁদিকের ফ্যালোপিয়ন টিউব এবং ওভারি। চার দফায় চলে কেমোথেরাপিও।
advertisement
অস্ত্রোপচারের পরে অবশ্য স্বাভাবিক নিয়মেই এগোতে থাকে দেবকন্যার জীবন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে লেডি ব্রেবর্ন কলেজে অর্থনীতি নিয়ে ভর্তি হন দেবকন্যা। কিন্তু, আবারও দেবকন্যার জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। এবার ডানদিকের ওভারিতে ধরা পড়ে সিস্ট। তবে এই দফা ক্যানসার না থাকায় অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় টিউমার। তারপরে নামী বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি। পরে বিয়ে।
আরও পড়ুন: পচা গন্ধের সন্ধানে মাটি খুঁড়তেই মারাত্মক দৃশ্য, প্রেমিকাকে খুন করে মাটিতে পুঁতেছে প্রেমিক!
বিয়ের পরে পাঁচ বছরের চেষ্টাতেও গর্ভধারণ করতে পারেননি দেবকন্যা। শেষে মুকুন্দপুরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন দেবকন্যা। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন যে কোনও কারণে তৈরি হচ্ছে না দেবকন্যার ডিম্বাণু। ফলে, সন্তান ধারণের জন্য আইভিএফ ছাড়া কোনও উপায় নেই।
ডানদিকের ও বাড়িতে অস্ত্রোপচার হওয়ায় সেখানে পলিসিস্টিক পরিবর্তন এসেছিল। ফলে ডান দিকের ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু তৈরি হচ্ছিল না। এরপরে ওষুধ এবং হরমোন ইনজেকশনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয় ডিম্বাণু। অবশেষে সাফল্য।
আরও পড়ুন: বাসন্তী হাইওয়েতে বাইক রেষারেষি, প্রাণ গেল ৩ যুবকের!
এই স্বস্তিও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। গর্ভধারণের ৩৫ সপ্তাহের মাথায় আবারও বিপত্তি। কোমর পিঠে তীব্র যন্ত্রণা শুরু হয় দেবকন্যার। ঝুঁকি নিয়ে তড়িঘড়ি অস্ত্রপ্রচার করেন চিকিৎসকেরা। তবে সব ভাল যার শেষ ভাল। শেষে দেবকন্যার কোল আলো করে জন্ম নেয় দুই যমজ পুত্র সন্তান।
একের পর এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ। হতাশা। শেষে দত্তক নেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন দেবকন্যা। কিন্তু নিজের জেদ আর চিকিৎসকদের হাতযশ, সব মিলিয়ে দেবকন্যার জীবনে সত্যিই নেমে এল আনন্দ।
সমীক্ষায় প্রমাণিত যে, নলজাতক ও স্বাভাবিক উপায়ে জন্ম নেওয়া শিশুর মধ্যে মেধাগত ও শারীরিক কোনও তফাত নেই। তবুও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং নানাবিধ সংস্কারকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে দেবকন্যা প্রমাণ করল, সত্যিই আইভিএফ এখন অনেকটাই সহজলভ্য।