রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, সবচেয়ে বেশি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসন রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণায়৷ ৬ হাজার ৩৮৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ১ হাজার ৭৬৭ টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়৷ অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির ৯২৬ টি আসনের মধ্যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে ২৩৩ টি আসনে৷ জেলা পরিষদের মোট ৮৫ এর মধ্যে ৮ টি আসন আনকন্টেস্টেড৷
advertisement
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, অনুব্রতহীন বীরভূম জেলাতেই শুধু ৩০ শতাংশরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে। তারপরেই রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার নাম। এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে ২২ শতাংশেরও বেশি আসনে কোনও ভোটই হবে না। যদিও অনুব্রতহীন বীরভূমে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই৷
শতকরা বিচারে অবশ্য এগিয়ে বীরভূম ২৯. ৯৬ %। দঃ ২৪ পরগণা ২৭.১৫ %। কিন্তু, সাধারণভাবে জেলাগত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনের বিচারে বীরভূমের চেয়ে দঃ ২৪ পরগণা অনেক বেশি। বীরভূম আনকন্টেস্টেড সিট ১ হাজার ০১৯ আর, দঃ ২৪ পরগণায় ২ হাজার ০০৮।
মনোনয়ন পর্ব প্রত্যাহারের পর যে ছবিটা স্পষ্ট হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, রাজ্য জুড়ে আট হাজারেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনেই কোনও ভোট হচ্ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশাপাশি, নির্বাচন হবে না পঞ্চায়েত সমিতির ১০ শতাংশরেও বেশি আসনে। যদিও জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা অনেকটাই কম৷ এখানে এক শতাংশের সামান্য বেশি আসনে ইতিমধ্যেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় এসেছে।
ত্রিস্তর নির্বাচনে গতবার তৃণমূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল ৯৯.৭০ % আসনে। এবার, সেই পরিসংখ্যান নেমে এসেছে ৯৬. ৪০ % আসনে৷ তবে, চলতি নির্বাচনে গোটা রাজ্যজুড়ে মুষ্টিমেয় কটা আসন ছাড়া, কার্যত অধিকাংশ আনকন্টেস্টেড সিটেই জয়ী রাজ্যের শাসকদল৷
আরও পড়ুন:বিজেপি বিরোধিতায় ‘আমরা এক’, একতা প্রতিষ্ঠায় নতুন উদ্যোগ নীতীশের
আর ঠিক এখানেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের ব্যাপকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা৷ আজ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত মামলায় এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী৷
তাঁর সওয়াল ছিল, মাত্র তিন দিনে ২০ হাজার ৫৮৫ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন কী ভাবে এবং কেন? মনোনয়ন প্রত্যাহার করার সময় প্রার্থীকে ব্যক্তিগত ভাবে উপস্থিত থাকতে হয়৷ এ ক্ষেত্রে কি সেই সমস্ত নিয়ম মানা হয়েছে? এর আগেও একাধিকবার শুভেন্দু থেকে সুকান্ত দাবি করেছিলেন, রাজ্যের শাসকদল ২৫ হাজারের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর টার্গেট বেঁধে দিয়েছে নিজের নেতাকর্মীদের৷ তারই কি প্রতিফলন দেখা গিয়েছে এই ক’দিনে? প্রশ্ন বিরোধীদের৷
এদিন প্রধান বিচারপতি কমিশনকে প্রশ্ন করেন, ‘‘ক্যানিং- ১ ব্লকের একটি অভিযোগ এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, ২৭৩ টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছে।’’ এমনটা কী ভাবে হয়, কমিশনের কাছে তা জানতে চান বিচারপতি৷
কমিশন অবশ্য উত্তরে জানায়, অন্য রাজ্যেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে বহু আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়, হতে পারে গ্রামবাসী একে অন্যকে চেনেন বলেই এমনটা হয়।
এদিন অবশ্য আদালত তার নির্দেশে জানিয়েছে, এই ২০ হাজার ৫৮৫ জন প্রার্থী কেন তাঁদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে কমিশনকে৷ আগামী ২৭ জুনের মধ্যে আদালতে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ৷
কমিশন সূত্রে খবর, সবচেয়ে কম আনকন্টেস্টেড সিট রয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলায়৷ এখানে মোট গ্রাম পঞ্চায়েতে আসন ১২৫২ টি। যার মধ্যে আটটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না, যদিও পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে।
বাঁকুড়া জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১২৯ টি আসনের মধ্যে ৬৬৪ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। এই জেলারি পঞ্চায়েত সমিতির ৫৬১ আসনের মধ্যে ১০৬ টি আসনে কোনও নির্বাচন না হলেও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।
বীরভূম জেলার 30% এরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে কোন নির্বাচন হবে না। যদিও পঞ্চায়েত সমিতির ৪৯০ টি আসনের মধ্যে ১২৭ টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না পাশাপাশি জেলা পরিষদের শুধুমাত্র একটি আসনেই কোন নির্বাচন হবে না।
কোচবিহার জেলায় অবশ্য গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৫০৭ টি আসনের মধ্যে ১৫৭ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। পঞ্চায়েত সমিতির ৩৮৩ টি আসনের মধ্যে ১৭ টি ও জেলা পরিষদের ৩৪ টি আসনের মধ্যে একটিতে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ১৩০৮ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনের মধ্যে শুধুমাত্র ১১টি আসনেই কোন প্রতিদ্বন্দ্বী বা নির্বাচন হচ্ছে না পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।
দার্জিলিং জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৫৯৮ টি আসনের মধ্যে চল্লিশটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতির ১৫৬ টি আসনের মধ্যে নটি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।
হুগলি জেলায় ১০ শতাংশেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কোন নির্বাচন হবে না যদিও পঞ্চায়েত সমিতির ৬১৯ টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র 58 টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। যদিও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হবে।
হাওড়া জেলার প্রায় ২৫ শতাংশের কাছাকাছি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতির ৪৭০ টি আসনের মধ্যে ৯৮ টি আসনে কোন নির্বাচন হবে না তবে জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে।
জলপাইগুড়ি জেলার শুধুমাত্র গ্রাম পঞ্চায়েতেরই ১৭০১ টি আসনের মধ্যে ২৯ টি আসনে নির্বাচন হচ্ছে না তবে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনেই নির্বাচন হচ্ছে।
ঝাড়গ্রাম জেলায় এক হাজার সাত টি আসনের মধ্যে ৩০ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না পঞ্চায়েত সমিতির ২১০ টি আসনের মধ্যে পাঁচটি আসনে কোন নির্বাচন না হলেও জেলা পরিষদের প্রত্যেকটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে।
কালিম্পং জেলার অবশ্য দশটি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন এবং একটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।
মালদা জেলার জেলা পরিষদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতির 436 টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র চারটি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩১৮৬ টি আসনের মধ্যে ৪৭ টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না।
মুর্শিদাবাদ জেলায় অবশ্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে চলেছে, জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতির শুধুমাত্র ১২টি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৬৬ আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না। নদীয়া জেলার জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হল পঞ্চায়েত সমিতির পাঁচটি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩ টি আসনে কোন নির্বাচন হচ্ছে না।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলা পরিষদের তিনটি পঞ্চায়েত সমিতির ১০৪ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ৮৬৭ টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। পাশাপাশি পশ্চিম বর্ধমান জেলার জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৮ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৭২ টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৬৭ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬২২টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। পূর্ব বর্ধমান জেলায় জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯৩ টি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮৫৮টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় জেলা পরিষদে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও পঞ্চায়েত সমিতিতে শুধুমাত্র দুটি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬২টি আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বীতা হচ্ছে না।
পুরুলিয়া জেলায় জেলা পরিষদে ও পঞ্চায়েত সমিতিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে। এই জেলায় পঞ্চায়েত সমিতিতে শুধুমাত্র একটি ও গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৪ টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। লক্ষনীয়ভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় আটটি জেলা পরিষদ ২৩৩টি পঞ্চায়েত সমিতি ও ১৭৬৭ গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে।
উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৩টি জেলা পরিষদ ৩১টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৩০৯ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে কোন প্রতিদ্বন্দিতা হচ্ছে না। অর্থাৎ রাজ্যের ৮০০২ টি গ্রাম পঞ্চায়েত ৯৯১ টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১৬ টি জেলা পরিষদের আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। রাজ্যের একাধিক জায়গায় এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে যে বলেই কমিশন সূত্রে খবর।