অর্থনীতিতে এই বিরাট অবদানের জন্য ২০০৫ সালে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করা হয়।
প্রবীণ এই অর্থনীতিবিদের প্রয়াণের খবর প্রথম জানান তাঁর ছোট মেয়ে বর্ণিতা। তিনি সমাজমাধ্যমে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁদের পিতা পরলোক গমন করেছেন। উল্লেখ্য, অমিয়কুমার বাগচীর দুই মেয়ে এবং তাঁদের নিজস্ব পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন।
অমিয়কুমারের স্ত্রী মারা গিয়েছেন প্রায় ১০ বছর আগে। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট নারীবাদী অধ্যাপক, লেখক তথা সমাজকর্মী যশোধরা বাগচী। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, জীবনের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে অমিয়কুমার বাগচীর সঙ্গেই ছিলেন তাঁর বড় মেয়ে তিস্তা।
advertisement
এক বর্ণময় জীবন বাংলার এই কৃতী সন্তানের। অর্থনৈতিক ইতিহাস তথা অর্থনীতির মার্কসবাদী গবেষণা করে যথেষ্ট সুনাম ও প্রসিদ্ধি অর্জন করেছিলেন অমিয়কুমার। একজন বরেণ্য অর্থনীতিবিদ বা গবেষকই ছাড়াও তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত জনপ্রিয় ও দক্ষ শিক্ষক। তাঁর লেখনীও ছিল সাবলীল ও সুন্দর।
অমিয়কুমার বাগচীর জন্ম হয়েছিল বাংলার মুর্শিদাবাদ জেলায়। পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য তাঁকে প্রথমে কলকাতা এবং পরে সুদূর ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন। কলকাতায় তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশোনার পাট চোকানোর পর কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজে ভর্তি হন তিনি। সেখান থেকেই পিএইচডি অর্জন করেন এই কৃতী ছাত্র।
পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে আসেন তিনি । কলকাতায় ফিরে যোগ দেন প্রেসিডেন্সি কলেজেই। শিক্ষক তথা অধ্যাপক হিসাবে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন । পরবর্তীকালে কলকাতাতেই সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর সঙ্গে যুক্ত হন তিনি।
অধ্যাপক হিসাবে অবসর গ্রহণের পর কলকাতায় নবগঠিত ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ-এর প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা হিসাবে যুক্ত হন অমিয়কুমার বাগচী।
আরও পড়ুন: শীত পড়তেও মশার উপদ্রব… ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ফের মৃত্যু! বাড়ছে চিন্তা
ঔপনিবেশিক যুগের বাণিজ্যের ইতিহাস থেকে শুরু করে ভারতীয় ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা এবং অর্থব্যবস্থার ইতিহাসের প্রবক্তা হিসাবে এই বাঙালি গবেষকের অবদান অনস্বীকার্য এবং সর্বজনবিদিত।
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার ইতিহাস লেখক হিসাবেও এক যুগের বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন তিনি। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার সুসংগঠিত যে মহাফেজখানা গড়ে তোলা হয়েছে, তার নেপথ্যে অমিয়কুমারের বিরাট অবদান রয়েছে।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত, শীতের আমেজে ভাটা
এছাড়া, অর্থনীতি সংক্রান্ত অসংখ্য বইও লিখেছেন তিনি। সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল – পেরিলাস প্যাসেজ: ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড দ্য গ্লোবাল অ্যাসেনডেন্সি অফ ক্যাপিটাল, কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড ইন্ডিয়ান ইকোনমি, ক্যাপিটালিজম অ্যান্ড লেবার রিডিফাইন্ড : ইন্ডিয়া অ্যান্ড দ্য থার্ড ওয়ার্ল্ড, দ্য এভোলিউশন অফ দ্য স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া, দ্য ডেভেলপমেন্টাল স্টেট ইন হিস্ট্রি অ্যান্ড ইন দ্য টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি প্রভৃতি।
বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদের প্রয়াণে শিক্ষক এবং গবেষক মহলে শোকের ছায়া নেমেছে।