পেশায় ট্যুরিজম সংস্থার সঙ্গে যুক্ত আশিস। ২০২১-র ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে এক লহমায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ৮ বছর আগের সেই ভয়ঙ্কর দিনে। ২০১৩ সালের ১৬ জুন উত্তরাখণ্ড জুড়ে নেমে এসেছিল ভয়ঙ্কর বিপর্যয়। আশিস বলতে শুরু করেন, 'আমরা সেদিন দাঁড়িয়ে ছিলাম নদীর ধারে। চোখের সামনে দেখলাম জলের স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল একের পর এক বাস, গাড়ি। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল হোটেল। চোখের নিমেষে চেনা জায়গাটা অচেনা হয়ে গেল।' আশিস বলেন, 'নিজেকে তখন সেনা বাহিনীর জওয়ান মনে হচ্ছিল। আমার সঙ্গে তখন কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রচুর পর্যটক। তাঁদের মুখের দিকে চেয়ে খালি মনে হচ্ছিল, সকলকে বাড়ি ফিরতে পারব তো!'
advertisement
ঢোক গিলে বলে চলেন, 'আসলে এই ধরণের এতবড় বিপর্যয়ের সম্মুখীন আগে কখনও হইনি। তাই কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যদিও স্থানীয় প্রশাসন আমাদের ভীষণ সাহায্য করেছিল। আমাদের কাছে শুকনো খাবার-সহ অনেক শাক-সবজি ছিল। সেই খাবার খেয়েছি। আমরা ওখানকার অনেক মানুষকে খাবারও দিয়েছি। সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছিল পানীয় জল জোগাড় করতে। কারণ, মেঘ ভাঙা বৃষ্টির কারণে যে অবস্থা হয়ে ছিল তাতে প্রয়োজন ছিল জলের। তবে সব মিটিয়ে ফেরত আসতে পেরেছিলাম।'
একই রকম অভিজ্ঞতার গল্প শোনাচ্ছিলেন অজয় ঘোষ। ২০১৩ সালের ঘটনার সাক্ষী তিনিও। অজয় ঘোষ এ দিন কলকাতার বাড়িতে বসে টিভিতে দেখছিলেন ভয়াবহ ঘটনা। মনে মনে বিড়বিড় করছিলেন, 'ভগবানের কৃপায় বেঁচে ফিরে এসেছি।' আশিসের মতো অজয়ও পর্যটন সংস্থায় চাকরি করেন। ফলে বহুবার এই সমস্ত জায়গা যাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর৷ এ দিন গল্প করতে করতে শোনালেন সে দিনের ভয়ঙ্কর স্মৃতি... 'ভোরবেলা হোটেল থেকে বেরিয়ে দেখি। চেনা রাস্তা আর কিছুই নেই৷ সবাই মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছে৷ তার মধ্যে মাঝে মাঝে বৃষ্টি। খরস্রোতা নদীর চেহারাটাই বদলে গেছে। স্বচ্ছ জলটা, ঘোলাটে হয়ে গেছে। স্বজন হারানো মানুষের কান্না। সব শেষ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে দেখে নিজের মধ্যেই ভয় ধরতে শুরু করে দিয়েছিল। সে দিন না ছিল যোগাযোগ ব্যবস্থা, না ছিল খাবার, জল। সঙ্গে পর্যটক ছিল। ওই দিনটা চোখ বুজলেও আজ দেখতে পাই।'
তাঁর কথায়, 'এই সুন্দর প্রকৃতি চোখের সামনে কিভাবে বদলে যেতে পারে। আমি আজ কলকাতায় বসে আছি বটে। আমি জানি ওখানে এখন কী চলছে। আমার মন বলে দেবে ওখানে কি হচ্ছে তা আমি দেখতে পাচ্ছি৷ ভগবানের কাছে প্রার্থনা সবাই যেন ভাল থাকে। ২০১৩ সালের উত্তরাখণ্ড বিপর্যয় দেখে আসা দুই বাঙালি শোনাচ্ছিলেন তাদের অভিজ্ঞতার গল্প। ইতিমধ্যেই পর্যটকদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে নিরাপদ জায়গায়। উত্তরাখণ্ড ট্যুরিজম বিভাগ চালু করেছে বিশেষ হেল্প লাইন নম্বর 9557444486 ও 1070 যেখানে ফোন করে তথ্য পাওয়া যাবে।
ABIR GHOSHAL
