কিন্তু কোথা থেকে শুরু হল এই সমস্যা?
জানা যায়, সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হঠাৎই বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন আইনজীবীদের একাংশ। এজলাসের বাইরে গেট আটকে আদালত বয়কট করার চেষ্টা করেন অবস্থানকারী আইনজীবীরা। এর ফলে স্তব্ধ হয়ে যায় বিচারপতি মান্থার বেঞ্চের বিচারপ্রক্রিয়া।
advertisement
এই বিক্ষোভের বিরোধিতা করে ১৩ নম্বর এজলাসের ভিতরে যান কংগ্রেসের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী। তিনি এ বিষয়ে বিচারপতি মান্থাকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানান। কিন্তু, গন্ডগোল আরও বাড়তে শুরু করলে এজলাস ছেড়ে উঠে বেরিয়ে যান বিচারপতি মান্থা।
এরপরে, ১৩ নম্বর কোর্টে বয়কট পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কেন্দ্রের ডেপুটি সলিসিটর জেনারেল বিল্বদল ভট্টাচার্য। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও প্রধান বিচারপতির এজলাসে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে নিন্দাপ্রকাশ করে আসেনন। তিনি আবেদন করেন, বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে ডেকে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি তোলা হোক। কী ভাবে একজন বিচারপতির এজলাসের বাইরে এভাবে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ দেখানো যায়, সেই ছবি তুলে ধরে প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তীও। এর ফলে বিচারপ্রক্রিয়া থমকে যায় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চেও।
গোটা বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষুব্ধ প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, "এটা উচিত নয়। সব তথ্য প্রমাণ নিয়ে আসুন। বারের সভাপতি ডেকে পাঠাচ্ছি। এই ঘটনা হওয়া উচিত নয়। বিষয়টি আমরা দেখেছি।"
এরপরেই প্রধান বিচারপতি বারের সভাপতি এবং রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল-কে ডেকে পাঠান। তাঁদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, এভাবে কী ভাবে বিচারপতির এজলাসের সামনে বিক্ষোভ চলতে পারে। এজি প্রধান বিচারপতিকে জানান, তিনি সবেমাত্র বিষয়টি জানতে পেরেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, "কেন বোঝেন না। এই সব সুপ্রিম কোর্টে গেলে সমস্যা তৈরি হবে। ছবি, ভিডিও সব রয়েছে। কেন সমস্যা ডেকে আনছেন।"
যতদূর জানা গিয়েছে, এদিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসের বাইরে কেউ বা কারা দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। কিছু আইনজীবী এজলাসে ঢুকতে বাধা দেন বলে অভিযোগ। কোর্ট ১৩ বাইরে ঠিক কী হয়েছিল, তা জানতে, সমস্ত সিসি ক্যামেরা ফুটেজ চেয়ে পাঠান প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাঠানো হয়েছে প্রধান বিচারপতি কাছে। সমস্ত ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন প্রধান বিচারপতি। এরপরেই প্রধান বিচারপতি বেশ কয়েকজন বিচারপতিকে নিয়ে বৈঠকেও বসেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, "সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হচ্ছে। সমস্যা মিটিয়ে নিন। না হলে পদক্ষেপ করা হবে।”
অবশেষে, প্রায় ২ ঘণ্টা এজলাসের কাজ বন্ধ থাকার পরে সাড়ে ১২টা নাগাদ এজলাসে ফেরেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা। তবে, এই প্রথম নয়, এর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরেও বিচারপথি মান্থার এজলাসের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। সেই সময় বিজেপি এবং বাম মনোভাবাপন্ন আইনজীবীদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় এজলাসের মধ্যে।