নিজের সোশ্যাল মিডিয়ার দীর্ঘ পোস্টে শুভেন্দু লিখেছেন, ‘‘সাগরদিঘি বিধানসভা উপনির্বাচনে অপ্রত্যাশিত হারের পরে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কপালে চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ লম্বা হতে থাকে। প্রায় ৬৭ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্রে যেখানে ২০২১ সালে শাসক দল ৫০,০০০ ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল, সেইখানে উপনির্বাচনে ২৩,০০০ ভোটের ব্যবধানে পরাজয় তৃণমূলের সব হিসেব উল্টে দিয়েছে। এর পরে বিগত কয়েক মাস ধরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংখ্যালঘু রাজনৈতিক কর্মীদের শাসক দল ত্যাগ করা, দলবদল করা এবং সর্বশেষে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এত হিংসা, এত ছাপ্পা, রিগিং ও ভোট লুঠ সত্ত্বেও যেখানে মানুষ ভোট দিতে পেরেছেন, সেখানেও বহু জায়গায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ এবার তৃণমূলকে বর্জন করেছেন।’’
advertisement
আরও পড়ুন– দারুণ উদ্যোগ ! রাজ্যের ২৮টি স্টেশনের লুক হতে চলেছে বিমানবন্দরের ধাঁচে
শুভেন্দু অধিকারী এও লেখেন, ‘‘ক্রমাগত বদলাতে থাকা রাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্ব ভীত ও সন্ত্রস্ত। রাজ্যে তৃণমূলের সীমাহীন বেলাগাম দুর্নীতির আঁচ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যে আর্থ ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের দিয়ে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছিল অথবা ক্ষমতা ধরে রেখেছিল, বাস্তবে তার যে কিছুই পূরণ করতে পারেনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, তা আজ এই সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। উল্টে তাঁদের ক্রমাগত ভাঁওতা দিয়ে ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে পরিণত করার অপচেষ্টা ওনাদের একটা বড় অংশ ধরে ফেলেছেন। সংখ্যালঘু ‘উন্নয়ন’ যে আসলে ফাঁপা বুলি এখন তা আর কারোরই অজানা নয়।’’
শুভেন্দু অধিকারী আরও দাবি করেন, ‘‘কয়েক মাস পরেই লোকসভা নির্বাচন। সংখ্যালঘু ফিক্সড ডিপোজিটের ভাঙন রুখতে তৃণমূল দশ বছর পরে ইমাম সাহেবদের শরণাপন্ন হয়েছেন। সম্প্রতি তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম, জাভেদ খান, সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী-সহ অন্যান্য নেতারা রাজ্যের বেশ কয়েকজন ইমাম সাহেবদের সাথে দেখা করেছেন। উদ্দেশ্য আগামী ২১ অগাস্ট নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ‘অল বেঙ্গল ইমাম সম্মেলন’ আয়োজিত করা। অথচ বিগত ১০ বছরে ইমাম সাহেবদের সাথে দেখা করার ফুরসৎ হয়ে ওঠেনি। তাঁদের সমস্যা অসুবিধা নিরসনের কথা এই নেতাদের মনে পড়েনি। আশা করব, নেতাজি ইন্ডোরে আগামী ২১ অগাস্ট অনুষ্ঠিত হতে চলা এই অরাজনৈতিক সম্মেলনে ইমাম সাহেবদের বক্তব্য প্রাধান্য পাবে, ওনাদের দৈনন্দিন সমস্যার বিষয়গুলি আলোচনা করে তা মেটানোর উদ্যোগ নেওয়া হব।’’
সংখ্যালঘুদের পরামর্শ দিয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আমি সম্মানীয় ইমাম সাহেবদের অনুরোধ জানাব যে আপনারা এই সম্মেলনে উপস্থিত নেতাদের, যাঁরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী, বা শাসক দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে বা দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁদের সমক্ষে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের সমস্যাটি তুলে ধরুন। জানতে চেষ্টা করুন যে পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ যারা পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করেন, তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের; রাজ্য সরকার তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে কি আদৌ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে? সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্কুলছুটের সংখ্যার হার মাত্রাতিক্ত বেশি আবার উচ্চশিক্ষিতদের হার অত্যন্ত কম কেন? সরকারের চমকদার নামাঙ্কিত প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নে খামতি না থাকলে এটা হয় না। বড়ো বড়ো প্রকল্প ও পরিকল্পনার ঘোষণা আছে, কিন্তু বাস্তবে তা কতটা রূপায়ণ হয়? আপনাদের এখন প্রয়োজন পড়েছে তাই এই সরকার হয়তো আপনার সাম্মানিক ৫০০ টাকা বৃদ্ধি করতে পারে। তবে তাতে কি আপনার সম্প্রদায়ের সামগ্রিক কোনও উন্নতি হবে?’’
নিজের ফেসবুক পোস্টে শুভেন্দুর দাবি, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনকে অসম্পূর্ণ ও অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে উস্কে দিতে সিদ্ধহস্ত। অতীতে এই নজির রয়েছে। পরে দেখা গেছে যে জনসমক্ষে যে ধারণা তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করেছিল তা সম্পূর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন ছিল। তাই যত নির্বাচন এগিয়ে আসবে ততই রাজনৈতিক অভিসন্ধি চরিতার্থ করতে তৃণমূল কংগ্রেস এই পন্থা অবলম্বন করবে।
মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে তৃণমূলের জুড়ি মেলা ভার। কোনও সুচেতন নাগরিক তৃণমূলের এই রাজনৈতিক প্রচারণার মাধ্যম হয়ে না ওঠেন এটাই কাঙ্ক্ষিত ও কাম্য। একদিকে এই রাজ্যের শাসক দল ও তাদের পরিচালিত সরকার যখন এই সব নিয়ে ব্যস্ত তখন অন্য দিকে কেন্দ্রীয় সরকার যে প্রকল্প গুলি গরীব কল্যাণে চালু করেছে তা জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের জন্য উপলব্ধ। তা সে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বাড়ি হোক, প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনার প্রতি মাসে বিনামূল্যে প্রাপ্ত ৫ কেজি খাদ্যশস্য হোক, অথবা জল জীবন মিশনের দ্বারা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ। এই সব প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের যোগ্যতা কিন্তু একটাই, তাদের ভারতীয় হতে হবে। উপভক্তাদের ধর্ম সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক। তাই আজ সারা দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হলেও এই সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের লাভ যারা পেয়েছেন তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ উপভোক্তাই হলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার দেশের গরীব ও দরিদ্র বর্গের মানুষদের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য সবসময় সচেষ্ট আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় অংশই অত্যন্ত গরীব। তাই তাঁরাই এই সব কেন্দ্রীয় প্রকল্পের লাভ বেশি করে পাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এক্ষেত্রে কখনও ভেদাভেদ করেনি, আর কখনও করবেও না।’’