১৯৮০ সালে বিজেপির প্রতিষ্ঠার পর, ৪৩ বছর পরে এবারই প্রথম এ রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় দলের মনোনীত প্রার্থীকে পাঠাতে চলেছে বিজেপি। বিধানসভার সদস্যরাই রাজ্যসভা নির্বাচনে অংশ নেন। এবার, বিধানসভায় কংগ্রেসের কোনও প্রতিনিধি না থাকায়, রাজ্যসভায় প্রদীপ ভট্টাচার্যের আসনটি প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দিকে যাবে। সেই আসনে রাজ্য থেকে রাজ্যসভায় কাকে পাঠানো হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই দলে হিসেব নিকেশ শুরু হয়ে গিয়েছে।
advertisement
সেই চর্চায় প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে একাধিক নাম ঘোরা ফেরা করছে। সূত্রের মতে, তালিকায় রয়ছে হাইপ্রোফাইল মিঠুন চক্রবর্তী থেকে শুরু করে অনন্ত মহারাজের নামও। তবে, অনেকেই মনে করছেন, রাজ্যসভায় দলের প্রাক্তন মনোনীত সদস্য বিশিষ্ঠ পদ্মভূষন সম্মান প্রাপ্ত সাংবাদিক স্বপন দাশগুপ্তকে আবারও নির্বাচিত সদস্য হিসাবে মনোনয়ন দেবে বিজেপি।
আরও পড়ুন: কখনও কালো হন্ডা…, কখনও সাদা স্করপিও…! ED তলবের পরেই সায়নীর ‘গতিবিধি’ বাড়াচ্ছে গুঞ্জন
এই সম্ভবনার কারণ হিসেবে তাঁরা মনে করছেন, স্বপন দাশগুপ্ত, প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন। তিনি প্রাক্তন রাজ্যসভার সদস্য হিসাবে রাজ্যসভার কাজকর্ম সম্পর্কে অবহিত। বিশিষ্ঠ সাংবাদিক হিসাবে দিল্লির সংবাদমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলেও তাঁর পরিচয় এবং প্রভাব রয়ছে। আবার, কলকাতায় বাঙালি বুদ্ধিজীবী মহলের একাংশের সঙ্গেও তাঁর ঘনিষ্ঠতা রয়ছে। তিনি রাজ্যে দলের কোর কমিটির অন্যতম সদস্য।
সম্প্রতি, কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের জন্মদিনে তাঁরই উদ্যোগে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্যস্তরে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একাংশকে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক মঞ্চের নামে পদ্ম অনুগামী করে তোলার কাজে মূল দায়িত্ব পালন করে চলেছেন স্বপন। এ সবের নিরিখে, রাজ্যসভার প্রার্থী পদের দৌড়ে অন্যদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে রয়ছেন স্বপন।
তবে, কোনও কোনও মহলের মতে, নানা অঙ্ক কষা চলছে। দলে প্রার্থী হওয়ার দাবিদার এখন অনেক। প্রাক্তন বিধায়ক ও রাজ্যের প্রধান মুখপাত্র, সুবক্তা, বুদ্ধিজীবী এবং সব রাজনৈতিক মহলে গ্রহনযোগ্য শমীক ভট্টাচার্য সংঘের আশীর্বাদ পেতে পারেন। তবে, শমীকের ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে রাজ্যে দলের অভ্যন্তরীন সমীকরণ।
রাজ্য বিজেপির এক নেতার মতে, প্রার্থী নির্বাচনে শুভেন্দুর মতামতের যে বিশেষ গুরুত্ব রয়ছে, রাজ্য সভাপতির মন্তব্যেই তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া, তিনি বিধানসভায় দলের পরিষদীয় নেতা, যে পরিষদীয় দলের ভোটেই নির্বাচিত হবেন প্রার্থী। সেই বিচারে স্বপনের পাল্লা কিন্তু ভারী৷
সম্প্রতি, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন রাজ্যসভা ভোটের যে নির্ঘণ্ট প্রকাশ করেছে, তাতে এ রাজ্যের মোট ৭ টি আসনে নির্বাচন হতে চলেছে। এর মধ্যে ৬ টি মেয়াদ উর্তীর্ণ। এই আসনগুলি হল, তৃণমূলের সুখেন্দু শেখর রায়, ডেরেক ও ব্রায়েন, দোলা সেন, শান্তা ছেত্রী, সুষ্মিতা দেব ও লুইজিনহো ফেলেইরো এবং কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য। এর মধ্যে ফেলেইরো মেয়াদ শেষের আগেই ইস্তফা দেওয়ায় ওই আসনে অকাল নির্বাচন হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কালীঘাটের বাড়িতে ২ ঘণ্টা চলল ‘প্রাইস থেরাপি’! কবে ফিট হবেন মমতা? মুখ্যমন্ত্রীর চিকিৎসার আপডেট দিল এসএসকেএম
এবার,রাজ্যসভার আসন পিছু ৪২টি ভোট। সেই অঙ্কে তৃণমূলের ৫ টি আসন প্রায় নিশ্চিত। কারণ, বর্তমান বিধানসভায় তৃণমূলের সদস্য ২১৬। আর, বিজেপির বিজয়ী বিধায়ক বর্তমানে ৭৫ । যদিও, এর মধ্যে ইতিমধ্যেই দল বদলু হয়েছেন ৫ বিজেপি বিধায়ক। রাজ্যসভা ভোটে হুইপ জারি করে দল বদলুদের ভোট দিতে বাধ্য করলেও, ১ টির বেশি আসন সরাসরি জেতা সম্ভব নয়। বিজেপিকে দ্বিতীয় আসনে জিততে হলে অন্তত ৮৪ জন বিধায়কের সমর্থন লাগবে। সেক্ষেত্রে, আরও ৯ টি অতিরিক্ত ভোট জোগাড় করতে হবে শুভেন্দুকে। রাজনীতির হিসাবে, আইএসএফ এই ভোটে অংশ নেবে না ধরে নিলে, বিজেপির পক্ষে ২ টি আসন জেতার মতো সংখ্যা জোগাড় করা কার্যত অসম্ভব।
তবে,পর্যবেক্ষকদের মতে, রাজনীতিতে সবই সম্ভব। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে ১ টি আসনেই প্রার্থী দেব বলে মনে করছি, তবে, পরিস্থিতি তেমন কিছু হলে অবশ্য দ্বিতীয় প্রার্থীর কথা ভাবতেই পারি। ” সেক্ষেত্রে, শেষ মূহুর্তে জমে যেতে পারে রাজ্যসভা ভোট।
