এরপরেই গতকাল, শুভেন্দুর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, অমিত শাহকে ফোন করার বিষয়টি প্রমাণ করতে পারলে, তিনি মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমি দীর্ঘদিন রাজনীতিতে আছি। আমাকে এত সহজ ভেব না। আর তুমি যদি প্রমাণ দিতে না পারো তাহলে নাখখৎ দেবে তো?"
আরও পড়ুন: জীবন কৃষ্ণের বন্ধু কৌশিক! আসলে কে তিনি? হেফাজতে নিতেই চমকে ওঠা খবর পেল সিবিআই
advertisement
তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ ট্যুইটে বলেন, 'বিজেপিতে নম্বর বাড়াতে মিথ্যাচার আর ব্যক্তিগত কুৎসা করে চলেছেন শুভেন্দু। দলের তরফে চিঠি দিয়ে শুভেন্দুকে এই মিথ্যা অভিযোগ অবিলম্বে প্রত্যাহার করার জন্য সতর্ক করা হয়। চিঠিতে ডেরেক শুভেন্দুকে মনে করিয়ে দেন, তার এই মিথ্যাচারের জন্য ভবিষ্যতে কোন আইনি পদক্ষেপ হলে, অনাবশ্যক ভাবে তাতে জড়িয়ে পড়বেন অমিত শাহ।'
আরও পড়ুন: এতবড় ধাপ্পাবাজি! জীবনকৃষ্ণের চাকরি নিয়ে যা জানল সিবিআই, জানলে মাথায় হাত পড়বে যে কারও
তৃণমূলের তরফে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর, গতকাল ট্যুইট করে শুভেন্দু, অমিত শাহকে মুখ্যমন্ত্রীর ফোনের প্রমাণ হিসেবে একটি ল্যান্ডলাইন ফোনের কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন, তিনি বৃহস্পতিবার এর উপযুক্ত প্রমাণ দেবেন। কিন্তু সে পথে না হেঁটে আদালতকে ঢাল করলেন শুভেন্দু। বললেন, "আপনি মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার অনেক ব্যাপার আছে। আপনার নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই কল ডিটেইলস আমি প্রকাশ্যে আনব না। তবে, আপনি যে অমিত শাহের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে করেছেন, রুদ্ধদ্বার বৈঠকে অমিত শাহ নাকি দাঙ্গা করার কথা বলে গিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন, তার ভিডিও ক্লিপিংস নিয়ে আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব।"
এই প্রসঙ্গে তৃণমূল মনে করিয়ে দিয়েছে অতীতে শুভেন্দুর 'ডিসেম্বর ধামাকা'র কথা। সেই হিসেবও মেলাতে পারেননি তিনি। শুধু তাই নয়, সেবারও তাঁর এই দাবির পাশে দাঁড়ায়নি তাঁর দলের সুকান্ত, দিলীপ থেকে অমিত শাহেরা। আর এবারেও, অমিত শাহকে ফোন করার দাবি নিয়ে গা বাঁচিয়ে চলছে বিজেপি। শমীক ভট্টাচার্য থেকে সুকান্ত মজুমদারদের গলায় এক সুর। এই প্রসঙ্গে বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "এই বিষয়ে যা বলার শুভেন্দু অধিকারীই বলতে পারেন।" বরং, ঘনিষ্ঠ মহলে বিজেপি নেতারা বলেছেন, এটা প্রমাণ করা কঠিন। মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কল ডিটেইলস প্রকাশ্যে আনা অনৈতিক। এটা ব্রিচ অব সিকিউরিটি। এটা অমিত শাহ ও দলকে বিব্রত করা। অর্থাৎ, শুভেন্দুর দাবির দায় নিতে চায়নি বিজেপিও। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন একটাই, বারবার কেন এমন দাবি করছেন শুভেন্দু, যা তিনি না পারছেন প্রমাণ দিতে, না সেই ইস্যুতে পাশে পাচ্ছেন তাঁর দলকে?
শুভেন্দুকে 'ফাঁপা বেলুন' আখ্যা দিয়ে আসরে নামে তৃণমূল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সুর চড়িয়ে বলেন, "উনি প্রত্যেকবার ট্যুইট করে বলেন একটা বোমা ফাটাব। আসলে ফাঁপা বেলুন। গত আড়াই বছরে অন্তত এক হাজার জনসভা ও সাংবাদিক বৈঠক থেকে এক হাজার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু একটাও প্রমাণ হয়নি।"
গতকাল তৃণমূলের মামলার চিঠি পেয়ে শুভেন্দু বলেছিলেন, 'ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা।' তারপর বললেন, এর জবাবও আমি আদালতে দেব। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, হটাৎ 'জনতা হি জনার্দন' বলা শুভেন্দু কেন জনতার আদালত ছেড়ে গেলেন? শুভেন্দু অবশ্য তাঁর জবাবে বলেছেন, 'আমি নয় ওরাই আদালতে যাক। আদলতে গেলে, আমি ট্রাইকে ( টেলিকম রেগুলেটরি অথরিটি অব ইন্ডিয়া) এই মামলায় পার্টি করব। তাহলে আদালতই ট্রাইকে ১১ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত ওই নম্বরের কল ডিটেইলস জমা করতে বলবে। তখন জল কা জল, দুধ কা দুধ প্রমাণ হয়ে যাবে।' যদিও, বৃহস্পতিবার শুভেন্দুর সাংবাদিক সম্মেলনের পর, অনেকে মনে করছে, ব্যাকফুটে গিয়ে শুভেন্দুর কভার ড্রাইভ, বিধানসভার ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে থাকা ইডেন গার্ডেন্সের সীমানা পেরলো না।
অরূপ দত্ত