গঙ্গা আরতিকে ঘিরে তৃণমূল-বিজেপির এই দিনভর তরজার শেষ কিন্তু হল দু'পক্ষের একটা 'উইন উইন সিচুয়েশনে'র মধ্যে দিয়ে। ঘাট বদলে আরতি সেরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত হুঙ্কার ছাড়লেন,"যা বলেছি, করেছি। বলেছিলাম আরতি করব, করেছি।" অন্যদিকে,বাবুঘাটে আরতি সেরে বাজে কদমতলা ঘাটের দিকে এগতেই সুকান্ত সহ বিজেপি বাহিনীকে আটক করে বাজে কদমতলা ঘাটে কার্যত আরতি হওয়া রুখল পুলিশ।
advertisement
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, বেনারসের ঢঙে এ রাজ্যেও ঘাটে ঘাটে গঙ্গা আরতি হবে। আর সেই আরতির আয়োজন করবে রাজ্য সরকারই। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছে বাস্তবায়িত করতে ইতিমধ্যেই আরতির জন্য শহরে ঘাট বাছাইয়ের পর্ব শুরু করেছে কলকাতা পুরসভা। অন্যদিকে, কলকাতা সংলগ্ন হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক পুরসভাও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে গঙ্গা আরতির আয়োজন করার জন্য।
আরও পড়ুন- একশো টাকা দিলেই ইউএসজি! বর্ধমান মেডিক্যালে ফের সক্রিয় দালালচক্র
মঙ্গলবার কলকাতার বাজে কদমতলা ঘাটে গঙ্গা আরতি করতে চেয়ে গত ৫ জানুয়ারিই কলকাতা পুলিশকে চিঠি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু সাগর মেলার জমায়েত ও জি ২০ সম্মেলনের কারণ দেখিয়ে বিজেপি-কে তাঁদের কর্মসূচি পিছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে পাল্টা চিঠি দেয় কলকাতা পুলিশ। এরপরেই শুরু হয় যুদ্ধ।
পুলিশের চিঠি পাওয়ার পরেই দলের রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলন করেন সুকান্তরা। আনুষ্ঠানিক ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় নির্ধারিত দিনেই বাজে কদমতলা ঘাটে তাঁরা গঙ্গা আরতির আয়োজন করবেন। জমায়েতকে ঘিরে ঘাট সংলগ্ন ময়দান চত্বর শর্ত স্বাপেক্ষে ব্যবহারে সেনার অনুমতি পত্র দেখায় বিজেপি।
আরও পড়ুন- ২৩-এর বিশ্বকাপে বিরাট, রোহিতদেরই এগিয়ে রাখছেন সনৎ জয়সূর্য
বিজেপির নমামি গঙ্গে কমিটি দাবি করে, তারা পুলিশের অনুমতি নিয়েই অনুষ্ঠান করছেন। যদিও, চিঠিতে সেনা যে অনুমতি দেওয়ার কথা বলেছিল, তা ছিল কলকাতা পুলিশের অনুমতি স্বাপেক্ষে। ফলে বাজে কদমতলা ঘাটে বিজেপির গঙ্গা আরতি কর্মসূচিতে কার্যত কলকাতা পুলিশের সিলমোহর ছিল না বলেই সূত্রের খবর।
এই পরিস্থিতিতে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাজে কদমতলায় ঘাটে অনুষ্ঠান মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু করে বিজেপি। খবর পেয়ে তা খুলে দেয় কলকাতা পুলিশ। সেখান থেকেই শুরু হয় গঙ্গা আরতি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিজেপির সম্মুখ সংঘাত।
প্রথম দফায় কলকাতা পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের বাহিনীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় পুলিশের। অন্যদিকে,বাজে কদমতলা ঘাটকে কার্যত বাহিনী দিয়ে মুড়ে ফেলে কলকাতা পুলিশ। গার্ড রেল দিয়ে কার্যত দুর্ভেদ্য করে তোলা হয় বাজে কদমতলা ঘাট।
এদিকে, বাজে কদমতলা ঘাটের আশপাশের জমায়েতে পুলিশ যখন বিজেপির নেতা, কর্মী, বিধায়কদের আটকাতে ব্যস্ত, তখন নেতাজি ইন্ডোরের সামনে গাড়ি থেকে নেমে দিব্যি হাঁটতে হাঁটতে বাবুঘাটে এসে নির্বিঘ্নে গঙ্গা আরতি সারেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
বাবুঘাটে গঙ্গাআরতি সেরে বাজে কদমতলা ঘাটের দিকে এগোতে থাকেন সুকান্ত। এই সময় পুলিশকে উদ্দেশ্যে করে বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে বলতে শোনা যায়,"গঙ্গা আরতি করব বলেছিলাম, করে দেখিয়েছি। আমার ধর্মীয় অধিকার আমি ছিনিয়ে নিয়েছি। এখন, চাইলে পুলিশ আমায় গ্রেফতার করতে পারে। "
আটক বিজেপি কর্মীদের মুক্তির দাবি করে প্রিজন ভ্যানের পথ আটকে রাস্তায় বসে পড়েন সুকান্ত। এরপরে সুকান্তকেও আটক করে পুলিশ। আর, দৃশ্যতই সুকান্ত আটক হওয়ার পরে আন্দোলনে দাঁড়ি টানে বিজেপিও।