সকাল দশটায় বসত বাড়ির দরবার, যার যা দরকার সেখানে গেলেই সামাধান। সাংবাদিকদেরও তাই, কোনও বিষয়ে বক্তব্য প্রয়োজন হলেই সেখানে চলে যাওয়া। আর যাওয়া মানে আড্ডা দেওয়া দেওয়া। আড্ডাবাজ সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)বলতেন, 'মানুষ, আড্ডা এগুলো ছাড়া থাকা যায় না কি?'
সংসদীয় রাজনীতিতে ৫০ বছর থাকতে চেয়েছিলেন তিনি৷ ২০২১-এ যখন যখন ভোটে দাঁড়ালেন, এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, 'এই আমার ৫০ বছর হয়ে যাবে৷ এর জন্য দাঁড়ালাম আর শোনো আমি বই লিখছি একেবারে ইন্দিরা গান্ধি থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পর্যন্ত৷'
advertisement
আরও পড়ুন: সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের শেষ যাত্রায় জনসমুদ্র, বাড়ি-একডালিয়া ক্লাব হয়ে কেওড়াতলা মহাশ্মশানের পথে...
সে লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে৷ কিছু দিন আগে জানিয়েছিলেন, 'প্রথম ভাগ প্রায় শেষ করে এনেছি, কিন্তু এত বছরের এত ঘটনা তো, সময় লাগছে!'
সকাল হোক বা রাত, একডালিয়া আড্ডা দেওয়ার ফাঁকে সাংবাদিকরা গেলে এক গাল হাসি দিয়ে বলতেন, 'আরে বসে যাও!'
সমালোচনা শুধু নিতে পারতেন না,বলতেন 'তোমরা সমালোচনা করলে তো আমি বুঝতে পারি কোথায় ভুল হচ্ছে।' একবার তাঁঁকে নিয়ে ফ্রন্ট পেজ কার্টুন করেছিল একটি সংবাদপত্র৷ কিছুদিন পর দেখি সুব্রতবাবুরই বসার ঘরে বড়ো করে তা রাখা আছে। নিজেই বললেন, 'এই দেখো কি ভালো হয়েছে কার্টুনটা, বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে দেখো।'
আরও পড়ুন: তৈরি করেছিলেন একাধিক দৃষ্টান্ত! মহানাগরিক সুব্রতর প্রয়াণে মনখারাপ কলকাতার পৌর নিগমের...
এই কারণেই হয়তো এমারজেন্সির সময় তথ্য সংস্কৃতি মন্ত্রী হওয়া সত্বেও তাঁর সঙ্গে কোনও সংবাদমাধ্যমের সম্পর্ক খারাপ হয়নি।
আত্মিক যোগ এতটাই ছিল যে বাড়িতে স্ত্রী ছন্দবাণীদেবীর সঙ্গে ঝগড়া হলে বলতেন, 'তোমাদের বৌদি তো কথা বলছে না, বেরোতে বারণ করেছিল শুনিনি এখন আর কথা বলছে না। বৌদির এই স্ট্র্যাটেজিটা খুব সাংঘাতিক, দেখি কতদিনে মেঘ কাটে।'
শরীর ভালো ছিলো না, ২০১৯-এ বাঁকুড়রার গোটা প্রচারে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ছিলেন।পুজোর আগে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতেন, 'একডালিয়ায় ডিউটি থাকবে তো?' একডালিয়ায় সুব্রতদার সঙ্গে বসে আড্ডা দেওয়াটা ছিল আমাদের মতো সাংবাদিকদের কাছে পছন্দের অ্যাসাইনমেন্ট৷ একডালিয়ায় পুজো থেকে বিজয়া পর্যন্ত আমাদের আড্ডা চলত।
ইন্দিরা গান্ধির থেকে কলকাতা দূরদর্শন আদায় করে নিয়েছিলেন তিনি৷ ৭০-এর দশকের সেই গল্প থেকে পুরুলিয়ায় ভূত দেখার গল্প- প্রতিদিন নতুন কিছু না কিছু শোনাতেন।
ছাত্র আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নানা কাহিনিও শোনা যেত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কাছে৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, বালিগঞ্জ আইটিআই -এর সামনে জিপ নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি এবং সদ্য ছাত্র রাজনীতিতে আসা মমতা৷ সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, 'আরে অ্যাকশন শুরু করে দিয়েছে দেখে আমি আর প্রিয় দা তো পালিয়ে গেলাম খানিক দুরে৷ গিয়ে দেখি ইট পাথরের মধ্যে পাথর খেতে খেতে স্লোগান দিচ্ছে মমতা। সেদিনই বুঝি ওর হবে।' খারাপ প্রশ্নে রেগে যেতেন না, অপ্রিয় সমালোচনা হাসি মুখে শুনতেন।
ভালো থাকবেন সুব্রত দা৷ আক্ষেপ থাকল, আপনার লেখা বইটা শেষ হলো না।