Subrata Mukherjee: তৈরি করেছিলেন একাধিক দৃষ্টান্ত! মহানাগরিক সুব্রতর প্রয়াণে মনখারাপ কলকাতার পৌর নিগমের...
- Published by:Sanjukta Sarkar
- news18 bangla
Last Updated:
Subrata Mukherjee: প্রশাসনকে মানুষের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইতেন তিনি ৷ কিন্তু প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হতেন না মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷
মাত্র ৭৫ বছর বয়সে চলে গেলেন রাজ্যের প্রবীণ ও দক্ষ রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী (Subrata Mukherjee)৷ বেশ কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ থাকলেও তাঁর অকস্মাৎ মৃত্যুর খবরে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজনৈতিক পরিমণ্ডল থেকে সাধারণ মানুষ, কেউই মেনে নিতে পারছেন না স্বভাব রসিক, স্মিতভাষী মানুষটির চলে যাওয়া। মানুষ হিসেবেই শুধু নয় গঠনতান্ত্রিক রাজীনীতিবিদ ও সুদক্ষ প্রশাসক হিসেবেও নিজের দাগ রেখেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
advertisement
কলকাতার এক বড় অংশের মানুষের কাছে আজও তাঁর পরিচয় প্রাক্তন মেয়র হিসেবে ৷ তিনি ছিলেন কলকাতার প্রাক্তন মহানাগরিক। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের আমলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর দায়িত্ব সামলোনোর আগেও তিনি কংগ্রেস জমানায় সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁর মেয়র অস্তিত্ব কোনওদিনই তাঁর পিছু ছাড়েনি। ছায়ার মতো জুড়ে থেকেছে তাঁর সঙ্গে।
advertisement
advertisement
প্রশাসনকে মানুষের স্বার্থে কাজে লাগাতে চাইতেন তিনি ৷ কিন্তু প্রয়োজনে কড়া ব্যবস্থা নিতেও পিছপা হতেন না মেয়র সুব্রত৷ মেয়র হিসেবে তাঁর বেশকিছু সিদ্ধান্তে বিতর্ক থাকলেও সাহসী পদক্ষেপের জন্য বিপুল জনসমর্থনও পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তৃণমূল কংগ্রেস কলকাতা পৌরনিগমে বোর্ড গঠন করেছিল । শহর কলকাতার উন্নয়নে ও শহরকে পরিষ্কার রাখতে সেসময় বহু দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷
advertisement
একবার কলকাতা শহরের এক পাঁচতারা হোটেলের বহুদিনের পুরকর বকেয়া ছিল। বকেয়া সেই পুরকর আদায় করার জন্য ওই পাঁচতারা হোটেলের জলের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল তাঁর নির্দেশে। ক্যামাক স্ট্রিটে এক বহুতল বেসরকারি সংস্থা দীর্ঘদিনের বকেয়া কর জমা না দেওয়ায় তাদের অফিসের সামনে আবর্জনার গাড়ি গিয়ে আবর্জনার স্তুপ ফেলে দিয়ে আসে। পরে বাধ্য হয় সেই সংস্থা বকেয়া পুরকর জমা দিতে। এমন নজিরবিহীন পদক্ষেপ কোনও মেয়র নিয়েছেন কোনওদিন মনে হয় না। এছাড়াও শহরে প্রকাশ্যে মাংস কাটা অর্থাৎ রাস্তার উপর জনসমক্ষে জবাই করা বন্ধ করেছিলেন এই সুব্রত মুখোপাধ্যায়।
advertisement
সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমলেই কলকাতা পৌরনিগমে কর্মসংস্কৃতি ফিরে এসেছিল। পুরকর্মীদের মধ্যে কর্মসংস্কৃতি তৈরিতে জোর দিতেন বরাবর। পুরকর্মীদের নিয়মানুবর্তিতা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে পুর পরিষেবা দেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর আমলেই প্রথম আইন চালু করে বলা হয়েছিল, কলকাতা শহরের পুরানো বাড়িগুলিতে বাইরে থেকে ক্যাপসুল লিফট বসানো যাবে।
advertisement
বিরোধীদের সঙ্গেও অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। তিনি মেয়র পদে থাকাকালীন সিপিএমের কাউন্সিলররা অবাধে তাঁর ঘরে যাতায়াত করতেন। এক ডাক 'সুব্রত দা' যেন সরিয়ে দিত দলাদলির সব হিসেবে নিকেশ। বিরোধী কাউন্সিলরদের সঙ্গে গল্প করতেন, সময় কাটাতেন তিনি নির্দ্বিধায়। বিরোধী কাউন্সিলরদের সমস্ত কথা শুনতেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতেন। রাজনীতি ও প্রশাসনকে কখনও মিশিয়ে ফেলেননি এই ডাকসাইটে রাজনীতিবিদ।
advertisement
বামফ্রন্ট সরকারের জমানায় তিনি যখন মেয়র পদ সামলাচ্ছেন, সেসময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও পুরমন্ত্রী ছিলেন অশোক ভট্টাচার্য। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের। সেই সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে কলকাতা শহরের জন্য বহু বকেয়া আদায় করেছিলেন তিনি৷ কলকাতা পৌরনিগমের সকলের সঙ্গে সুসম্পর্ক ও সামঞ্জস্য বজায় রেখে চলতেন বর্ণময় ব্যক্তিত্বের, সদা হাসিমুখ সুব্রত মুখোপাধ্যায়৷ তাঁর এই আকস্মিক প্রয়াণে কলকাতা পৌরনিগমের অন্দরমহলেরও মন খারাপ।