সম্প্রতি বিধাননগর কমিশনারেটের অন্তর্গত একাধিক এলাকায় এমন বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে, যেখানে অনলাইন হেনস্থার স্বীকার হত হয়েছে অনেককে। অনেক পড়ুয়া হ্য়াকিংয়ের ফাঁদে পড়ে ভুগছে অবসাদে, ভয় পাচ্ছে প্রতিনয়ত। ইন্টারনেট সিকিউরিটি ভেঙে ঢুকে পড়ছে হ্যাকারদের দল। কোথাও কোথাও হ্যাকিংয়ের দায়ে সন্দেহ করা হচ্ছে স্কুল পড়ুয়াদেরই। সাইবার ক্রাইম বিশেষজ্ঞ বিভাস চট্টোপাধ্যায় এই নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, "এমন ঘটনাও আমার কাছে আছে, যেখানে একজন মহিলা এই সাইবার বুলিংয়ের দাপটে কার্যত অবসাদে ভুগতে শুরু করেছে। সে ভয় পাচ্ছে, আতঙ্কে ভুগছে। ল্যাপটপ হ্যাক করে অশ্লীল নানরকম ছবি পাঠাচ্ছে।"
advertisement
আরও পড়ুন: নির্ধারিত সময়েই পুরভোট নাকি পিছোচ্ছে? সব নজর মঙ্গলবারের দিকে...
কিন্তু এই হ্যাকিংয়ের সঙ্গে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রদের জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ঘটছে কী ভাবে? বিভাস বলছেন, " বিভিন্ন স্কুলে সিনিয়র লেভেল পড়ুয়ারা হ্যাকিংয়ের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়া তারা লিঙ্কের মধ্যে ঢুকে বিভিন্ন ভাবে টিজ করছে, হ্যারাস করছে, এমন অভিযোগ আমরা পাচ্ছি।" কিন্তু স্কুল পড়ুয়ারা হ্যাকিং শিখছে কী ভাবে? তাঁরা এই কৌশল রপ্ত করছে কোন পথ ধরে? বিভাসের মতে, স্কুলের সিনিয়র পর্যায়ের পড়ুয়াদের এই বিষয়ে অজ্ঞ ভাবলে হবে না। হ্যাকিং শেখা এখন কেক ওয়াক। কারণ, নানা রকম ইন্টারনেটে, গুগলে বা বিভিন্ন স্থানে এমন সব ভিডিওগুলি আছে, যেগুলি দেখে সেখা সম্ভব। এ ছাড়া একাধিক বেআইনি অ্যাপও রয়েছে। যেগুলি ব্যবহার করে যে কোনও সিস্টেম, যে কোনও সময় ব্রেক করে দেওয়া যায়। এটার জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণের দরকার নেই। এগুলো সহজলভ্য হয়ে গিয়েছে। কী ভাবে হ্যাকিং করতে হবে শেখানো হচ্ছে, কী দিয়ে হ্যাকিং করতে হবে শেখানো হচ্ছে। বেশ কিছু মোবাইলের অ্যাপ্লিকেশন পাওয়া যাচ্ছে, যেগুলি ব্যবহার করা হচ্ছে। আর স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে তেমন করে পরিণতি বোধ তৈরি হয়নি। সেই কারণেই তারা আরও বেশি করে এর মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে। মনে রাখতে হবে, হ্যাকিংয়ের বিষয়ে সারা বিশ্বেই বেশিরভাগ অগ্রগণ্য ভূমিকা নেয় কমবয়সীরা। কারণ তাঁদের মধ্যে পরিণতি বোধের অভাব।
আরও পড়ুন: পিছিয়ে যাবে চার পুর নিগমের ভোট? আসরে BJP, গঙ্গাসাগরেও 'নিয়ন্ত্রণের' দাবি
সারাদিন অনলাইনে পড়ে থাকতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। বাইরে বার হওয়াও কার্যত বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাতের কাছে সব পাওয়ায় না বুঝেই পড়ুয়ারা ব্যবহার করছে একাধিক বিপজ্জনক অ্যাপ। শুধু তাই নয়, বাড়ছে পর্ন ইত্যাদির প্রতি তাদের ঝোঁক। বিভাস বলছেন, "অনলাইন ক্লাস যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের সাইবার সিকিউরিটির বিষয়টির দিকে নজর রাখতে হবে। কারা ক্লাসে আসছে, কারা থাকছে, লিঙ্ক সঠিক দেওয়া হচ্ছে কি না, এ ছাড়া যে ডিভাইস ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটিতে কোনও ম্যালওয়ার ঢুকে বসে থাকতে পারে। সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সব সময় শিশুরা করছে এমনটা নয়। আমি যে কটি অভিযোগ পেয়েছি, তাতে কিন্তু বাইরে থেকেই কেউ হ্যাক করছে। " তবে বিভাস বলছেন, ব্যবহারের সঠিক কৌশল রপ্ত করা ছাড়া এই গোটা বিষয়টির সমাধান করা একান্তই মুশকিল। যেমন ২০২১ তথ্যপ্রযুক্তি আইন এসেছে, তেমন যদি আইন আসতে থাকে, যেটি থেকে বোঝা যাবে, কতটা এক্সপোজার হবে, কতটা হবে না, তাহলেই একমাত্র এই পথ থেকে শিশুদের সরিয়ে আনা সম্ভব।