অপহরণের পর মুক্তিপণ চেয়ে মেসেজ। ১৪ দিনের মাথায় উদ্ধার বাগুইআটির অপহৃত ছাত্রদের দেহ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। ব্যাপক ভাঙচুর মূল অভিযুক্তের বাড়িতে। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার ৪। কী কীরণে খুন, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
কয়েকদিন আগেও পরিবার মাতিয়ে রাখত বাগুইআটির জগতপুর খালধারের দুই বাড়ির দুই বন্ধু৷ মাধ্যমিকের পড়ুয়া তাঁরা৷ কিন্তু গত ২২ অগাস্ট থেকেই যেন সব পাল্টে যায়৷ হঠাৎই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায় দুই ছেলে৷ তাঁদের শত খুঁজেও পাননি পরিবারের লোকেরা৷ তারপর হঠাৎই ফোন আসে, সেখানে মুক্তিপন চাওয়া হয়৷ অপহৃত দুই ছাত্রের পরিবারের লোকেরা অথৈ জলে পড়েন৷ মুক্তিপনের ১ কোটি টাকা কোথা থেকে দেবেন তাঁরা, এই ভাবনা চলতে থাকে, খবর দেন পুলিশেও৷
advertisement
আরও পড়ুন: নিয়োগের দাবিতে স্বাস্থ্য ভবনে নার্সিং প্রার্থীদের বিক্ষোভ, দফায় দফায় উত্তেজনা
কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ রক্ষা হল না মধ্যবিত্ত পরিবারের এই দুই সন্তানের৷ বাগুইআটি থেকে অপহৃত একজনের দেহ পাওয়া গেল বসিরহাটে৷ একজনের নাম অতনু দে, অন্য জন অভিষেককে এখনও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ৷ পুলিশের তরফ থেকে বলা হয়েছে, পরিচয়হীন যে দেহগুলি বিভিন্ন জেলার মর্গে রয়েছে, সেগুলি এতটাই পচে হয়ে গিয়েছে যে, এখনও চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি৷ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি দেখে ভেঙে পড়েছে এই দুই ছাত্রের পরিবার৷ অভিষেকের পরিবারের তরফে সকালে দাবি করা হয়, তাঁদের বাড়ির ছেলের দেহও উদ্ধার করা হয়েছে৷ পরিবারের তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, পুলিশে যথা সময়ে অভিযোগ জানানো হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি৷ আর কেনই বা তাঁদের পরিবারের দু’জন সদস্যকে অপহরণ করা হল, কার শত্রুতা, কীসের সমস্যা, কিছুই বুঝতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে দুই ছাত্রকে। খুন করে মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়। আজ ছাত্র খুন মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের নাম শামীম আলি, সাহিল মোল্লা ও দিপেন্দু দাস। সাতেন্দ্র ও আরেকজন অভিযুক্ত এখনও পলাতক। গাড়ি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, ২২ অগাস্ট ছাত্রদের ২২ তারিখ অপহরণ করা হয়, সেদিনই তাদের খুন করা হয়। পুলিশ ও বাড়ির লোককে বিভ্রান্ত করতেই মুক্তিপণ চাওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বকেয়া নেই সরকারি কর্মচারীদের DA, পুজো 'অনুদান' মামলায় হাইকোর্টে হলফনাম পেশ রাজ্যের!
পুলিশের কাছে ঘটনাক্রমের যে তথ্য রয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, গত মাসের ২২ তারিখে বাগুইআটির জগতপুর খাল ধারের বাসিন্দা দুই ছাত্র বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপরেই তাদের পরিবারের কাছে এক কোটি টাকার মুক্তিপন চেয়ে মেসেজ আসে। তারপরে পরিবারে তরফে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানানো হয়। পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ কোনও রকম ভাবেই সাহায্য করেনি। গতকাল রাতে পুলিশের তরফে জানানো হয় অতনু দে নামে নিখোঁজ এক ছাত্রের দেহ মিলেছে বসিরহাটে। পরে, মঙ্গলবার পাওয়া যায় অভিষেকের মৃত্যুর খবর৷ যদিও পরে পুলিশ দাবি করে, দ্বিতীয় ছাত্রের দেহ এখনও চিহ্নিত হয়নি৷ এর পরে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মৃতের পরিবার থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিলে ছাত্রদের পাওয়া যেত। এ ভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষার ছাত্রের মৃত্যুর খবর মিলত না।