আর শুভ্রার জুতো ছোড়া নিয়ে আলোচনা- সমালোচনা-পর্যালোচনা সর্বত্র। সাধারণ মানুষের একাংশ যেখানে বলছেন শুভ্রা যা করেছেন একদম ঠিক করেছেন। দুর্নীতির প্রতিবাদ এভাবেই হওয়া চাই। আমরা যা পারিনি তা শুভ্রা পেরেছে। আবার অন্যদিকে ভিন্নমতও পোষণ করেছেন অনেকে। তাদের মতে অন্যায় এবং দুর্নীতির প্রতিবাদ সবসময়ই হওয়া উচিত।তবে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে।
advertisement
আরও পড়ুন: সাময়িক স্বস্তি, বৃষ্টি আসছে একাধিক জেলায়! গরম নিয়ে জরুরি সতর্কতা হাওয়া অফিসের
শুভ্রাকে নিয়ে যখন চারদিকে আলোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তখন কলকাতার শিল্পী কলাকুশলীরাও তাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পিছপা হননি। শুভ্রা কোথাও যেন একটা প্রতীক। তাই তাঁকে নিয়ে উঠে এসেছে নানা মত। অভিনেতা বাদশা মৈত্র এই প্রসঙ্গে বলেন, "শিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে যে মাপের দুর্নীতি হয়েছে তা কোনও আইন মেনে হয়নি। তাই তার প্রতিবাদও যে আইন মেনে হবে এমন কোনো কথা নেই। শুভ্রা একটি প্রতীক। তাঁর এই বলিষ্ঠ প্রতিবাদ শুধু তাঁর একার নয়।তাঁর মধ্যে দিয়ে এমন অনেক মায়ের প্রতিবাদ প্রতিফলিত হয়েছে যাঁদের সন্তানেরা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকরি পায়নি।"
পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মতে," এত বিশাল একটি দুর্নীতি হয়েছে। এত পাহাড় প্রমাণ টাকা নয় ছয় হয়েছে যা। এই মুহূর্তে সবটাই সাধারণ মানুষের সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেছে। তাই মানুষ যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদ করবে সেটাই স্বাভাবিক। আমরা পথে নেমে প্রতিবাদ করেছি। এই ভদ্রমহিলাও ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। তাঁর প্রতিবাদের পদ্ধতি হয়তো আমার সঙ্গে নাও মিলতে পারে, তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, ব্যক্তিগত ক্ষোভ কোথায় পৌঁছলে মানুষ এইভাবে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটান।
শুভ্রার প্রতিবাদের ভাষা দেখে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী মানসী সিনহাও। বলেন, "মানুষ কোথাও যেন একটা লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছে, এতদিন ঠিক লক্ষ্য খুঁজে পাচ্ছিল না। কার উপর ক্ষোভ গুলো উগড়ে দেবে বুঝতে পারছিল না। কারণ, মনের মধ্যে একটা ভয় ছিল এই বুঝি বাড়িতে এসে চড়াও হবে।এই বুঝি ছেলের বুকে ছুরি বসাবে। এই বুঝি মেয়েটার ক্ষতি করে দেবে। এই বুঝি স্বামীর চাকরিটা চলে যাবে। সেখান থেকে কোথাও যেন একটা পুঞ্জিভূত ক্ষোভ প্রকাশ করার মাধ্যম পেল। আমার কাছে মিডিয়া আছে প্রতিবাদের ভাষা জানানোর জন্য ।কিন্তু সকলের কাছে তো সেই সুযোগটা নেই।সেখান থেকেই যেন আম জনতার ঘৃণা শুভ্রার মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পেল।''
পরিচালক অনিন্দিতা সর্বাধিকারী মনে করেন, " দেখুন শুভ্রা কেন। সাধারণ মানুষের আর কোনো উপায় ছিল না। মানুষ যাকে এক বছর আগে ভোট দিয়ে জিতিয়ে এনেছে তিনি এই দুর্নীতির চোরাবালিতে ডুবে আছেন সেখানে সাধারণ মানুষ আর কি করতো? হাতের সামনে জুতো পেয়েছেন আর সেটাই ছুড়ে মেরেছেন। এছাড়া তো মানুষের আর কোনো উপায় নেই। জর্জ বুশকেও একসময় জুতোর আঘাত খেতে হয়েছে।"
অভিনেত্রী দেবলীনা দত্তের মতে, "শুভ্রার মতে কোথাও এই সিস্টেম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা রাগ ক্ষোভ ঘৃণা দীর্ঘদিন ধরে জমা ছিল।নাহলে কেউ পাবলিক প্লেসে এরকম একটা কাণ্ড ঘটাতে পারে না। অভিনেত্রী হিসেবে কোনো নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করার সুবাদে যদি পথে ঘাটে এরকম জুতো উড়ে আসে তাহলে সেটা একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার পুরস্কার।তবে এটাতো অভিনয় নয়,তাই ভীষণ লজ্জার। শুভ্রা ঘড়ুইয়ের এই প্রতিবাদ একদিকে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি শিল্পীদেরও এগিয়ে এসে মুখ খুলতে বাধ্য করেছে।তেমনি অনেকে বিশিষ্টজনরা এই বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। অপর্ণা সেন থেকে কৌশিক সেন, দেবশঙ্কর হালদার থেকে চন্দ্রিল ভট্টাচার্যদের সঙ্গে News 18 বাংলা-র তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলে তারা এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি।''
