বিজেপি-র সংগঠনের চালিকাশক্তি আরএসএস। সে কারণে সংগঠনকে শক্তিশালী ও প্রসারিত করার লক্ষ্যে এখন থেকেই মাঠে নামছে সংঘ।
গত অক্টোবরে কর্ণাটকে সংঘের অখিল ভারতীয় সভায় পশ্চিমবঙ্গ সহ ৫ রাজ্যের নির্বাচনী পর্যালোচনা হয়। সেখানেই উঠে আসে বিজেপির সংগঠনের কঙ্কালসার চেহারা (RSS Report on West Bengal Election)।
আরও পড়ুন: আলিমুদ্দিনের সহায় প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন! শ্যাম-কূল দুই রাখার পথ খুঁজছে সিপিএম
advertisement
পশ্চিমবঙ্গ সহ ৫ রাজ্যে নির্বাচনী লড়াই লড়তে 'ভাড়াটে সৈনিকদের' উপরে মাত্রারিক্ত ভরসা করা বিপর্যয়ের একটি অন্যতম কারণ বলে আরএসএস-এর পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। কাজের দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচনেও ভুল ছিল বলে সংঘের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৯-এ রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বাদ পেয়ে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদিরা। কিন্তু,কার্যত খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে তাঁদের। ২০১৪-র আগে, সর্বভারতীয় সভাপতি থাকার সময় থেকেই রাজ্যে দলের সংগঠনকে বুথস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন অমিত শাহ। কিন্তু, আজও সেই লক্ষ্যের থেকে বহুদূরে বিজেপি৷ অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তাই আবার বুথ স্তর থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ সংঘের।
আরও পড়ুন: নজরে বঙ্গ বিজেপি-র সংগঠন, আরএসএস-এর সিদ্ধান্ত ঘিরে গেরুয়া শিবিরেই জোর জল্পনা
সংগঠনের বিস্তার করতে যুবকদের 'হোলটাইমার' হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরএসএস। মোটামুটি ভাবে পুরসভা এলাকায় ১০ থেকে ১৫ টি ওয়ার্ড পিছু একজন এবং গ্রামীণ এলাকায় ব্লক পিছু একজন করে হোলটাইমার নিয়োগ করা হবে। মার্চে আরএসএস- এর অখিল ভারতীয় বৈঠকে এই প্রস্তাবে সিলমোহর পড়ার পরেই নিয়োগ শুরু হবে।
সংঘের একাংশ অবশ্য মনে করে, নীতিগত ভাবে ২০২৪- এর আগে, সব ওয়ার্ডে পৌঁছনোর লক্ষ্য স্থির হলেও, বাস্তবে 'দিল্লি বহুদূর'। কারণ, রাজ্যে ২০১৯- এ ২২০০ র মতো শাখা চলত সংঘের। কিন্তু, করোনার জন্য এই মূহুর্তে ১৭০- র মতো শাখা চলছে। এই শাখাগুলির সিংহভাগই আবার অনিয়মিত৷ সংঘের হিসাব অনুযায়ী, নিয়মিত শাখার সংখ্যা ৩০০-র বেশি নয়।
রাজ্যে পুরনিগম ও পুরসভার সংখ্যা ১১৭টি। ব্লকের সংখ্যা ৩৪১টি। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুর, ক্ষীরপাই, কিম্বা কোচবিহারের মেখলিগঞ্জের মতো ৮ থেকে ১০ ওয়ার্ডের পুরসভা যেমন রয়ছে, তেমনই কলকাতা, হাওড়া, আসানসোলের মতো শতাধিক বা পঞ্চাশের বেশি ওয়ার্ডের পুরসভাও রয়ছে। ফলে, কয়েক হাজার ওয়ার্ড ও ৩৪৪ টি ব্লকে সংঘকে ২৪-এর নির্বাচনের আগে সংগঠন তৈরি করতে হবে।
সংঘের হিসেবেই এখনও পর্যন্ত তারা কাঙ্খিত লক্ষ্যের চল্লিশ শতাংশ মতো জায়গায় সংগঠন করতে পেরেছে। অর্থাৎ, ১৯২০ থেকে ( জনসংঘের শুরু) ২০২১ পর্যন্ত ১০০ বছরে রাজ্যে সংঘের বৃদ্ধি ৪০ শতাংশ৷ অঙ্কের হিসেবেই বাকি ষাট শতাংশ ওয়ার্ড ও ব্লকে সংগঠন করতে আরও ষাট বছর লাগার কথা। রাজনীতির অঙ্ক পাটিগনিতের নিয়মে চলে না, এটা ঠিক, কিন্তু রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ষাট না হলেও তিন বছরে এই লক্ষ্যে পৌছন অনেকটাই আকাশ কুসুৃম কল্পনা ছাড়া কিছু নয়।