রাজ্যে দলের বুথ সংগঠন ঠিকঠাক করতে না পারার জন্য বারবারই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বকে। লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যে ১০০ শতাংশ বুথ কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন নাড্ডা। সূত্রের মতে, টেনেটুনে ৫৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছে বিজেপি। এই পরিস্থিতিতে শেষবারের মত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দিল্লির নির্দেশ, ১২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে রাজ্য বিজেপির বুথ সশক্তিকরণ অভিযান।
advertisement
আরও পড়ুন: 'যতদিন রাহুল, ততদিন মোদি!' কংগ্রেস নেতাকে বেনজির আক্রমণ মমতার, দলের বৈঠকে বিস্ফোরণ
এই কর্মসূচি রূপায়ণে লিখিত নির্দেশিকা পাঠিয়ে বলা হয়েছে, বুথ কমিটি তৈরির সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর আলোচনা ও উল্লিখিত কার্যক্রমগুলি সফলভাবে পালন করার বিষয়ে নিশ্চিত করতে হবে। তালিকার ৬ নম্বর নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ''বুথে বসবাসকারী সংঘ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। "
বিজেপির লিখিত নির্দেশিকায় সংঘকে এভাবে যুক্ত করা নিয়ে ক্ষুব্ধ আরএসএস। রাজ্যে আরএসএস- এর মুখপাত্র জিষ্ণু বসু বলেছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। সংঘ একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। কেন বিজেপি তার নির্দেশিকায় এমন কথা লিখেছে, সে বিষয়ে বিজেপি নেতৃত্বের কাছে তাঁরা জানতে চাইবেন।
আরও পড়ুন: টার্গেট মতুয়া ভোট! 'পাশেই আছি...' তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বার্তা অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের
কলকাতায় সংঘের প্রধান কেন্দ্র কেশব ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির দলীয় সাংগঠনিক কাজে লিখিত ভাবে সংঘকে যুক্ত করার বিষয়টি ভাল ভাবে দেখছে না আরএসএস। শনিবার, সন্ধ্যায় রাজ্য বিজেপি দফতর ছাড়ার সময়, এই বিষয়ে রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে প্রশ্ন করতে গেলে, সংঘের মনোভাবের আঁচ পেয়েই সম্ভবত এড়িয়ে যান সুকান্ত।
আর রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, 'বিজেপি যদি নির্দেশিকয় এমন কোন নির্দেশ দিয়ে থাকে, তাহলে তো সেটা নিয়ে সংঘের ক্ষোভ থাকা সঙ্গত। তবে, বিজেপি সংঘ পরিবারকে যুক্ত করার কথা বলে নি। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলেছে।'
তবে, নিজেদের অরাজনৈতিক সংগঠন বলে দাবি করলেও, সংঘের প্রচার প্রমূখ বিপ্লব রায়ের মতে, সাম্প্রতিক কালে রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার কারণে বহু মানুষ তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন। রাজনৈতিক মহলের কাছে যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজনৈতিক মহলের মতে, প্রকাশ্যে আরএসএস বা সংঘ নিজেকে একটি অরাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন বলে দাবি করে। যদিও, বাকি রাজনৈতিক দল, বিজেপিকে আদপে আরএসএস- এর রাজনৈতিক মুখ হিসাবেই মনে করে। ফলে, খুব স্বাভাবিক কারণে, দলের বুথ সংগঠন তৈরি করা নিয়ে বিজেপির এই নির্দেশিকাকে হাতিয়ার করতে ছাড়ছে না তারা।
তৃণমূল নেতা তাপস রায় বলেন, 'আমরা তো বহুবার বলেছি, এ রাজ্যে বিজেপির কোনও সংগঠন নেই। ভোট এলে ওরা বুথ কমিটির কথা ভাবে। বিজেপির সংগঠন মানে আরএসএস। এখন ঝোলা থেকে বেড়ালটা বেরিয়ে পড়ল।'
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কটাক্ষ, "গোটা দেশেই বিজেপির সংগঠন চালায় আরএসএস। এটা সবাই জানে। রাজ্য বিজেপি আসলে ভাবের ঘরে চুরি করে আর কতদিন চালাবে। একদিন তো সেটা প্রকাশ্যে আসবেই। "
পর্যবেক্ষকদের মতে, মুখে রাজ্য বিজেপি যাই বলুক, এই নির্দেশিকা থেকে আবার স্পষ্ট হয়ে গেল রাজ্যে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটাতে জেলায় জেলায় বুথে বুথে ছড়িয়ে থাকা আরএসএস- এর স্বয়ংসেবকদের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে বিজেপিকে।