রথযাত্রা। এদিন এক উৎসব থেকে আরেক উৎসবের দিকে যাত্রার সূচনা হত। বৃষ্টি ভেজা দিনে কান পাতলে শোনা যেত ঢাকের বাদ্যি। পুজোর গন্ধ এসেছে। পুজোর আগে অন্য পুজোর আনন্দ। খুঁটিপুজো আর আগমনীর গান। এভাবেই তো সময় গড়িয়েছে। তবে সময়ও এবার করোনার ফাঁসে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের ভবিষ্যৎ কী, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই উত্তর থেকে দক্ষিণ বিভিন্ন ক্লাবে এবছর খুঁটিপুজোই হল না।
advertisement
পুজোর ইতিহাসে প্রথমবার। কলকাতায় ছোট-বড় মিলিয়ে কয়েকশো পুজো কমিটি খুঁটিপুজার জন্য আলাদা বাজেট করে রাখে। এদিনই অনেক উদ্যোক্তারা ঠাকুর বায়না, পুজোর থিম প্রকাশ্যে আনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা সহ পুজোর নানান পরিকল্পনা নিয়ে থাকেন। কিন্তু এবছর সমস্ত হিসেব-নিকেশ উল্টে গেল। বিশেষ করে পুজোকে কেন্দ্র করে বিগ বাজেটের উদ্যোক্তাদের মধ্যে যেমন জোর টক্কর চলে, তেমনি খুঁটি পুজোতেও একে অপরকে টেক্কা দিতে কোমর বেঁধে ময়দানে নামে। মঙ্গলবার রীতি মেনে বনেদি বাড়ির অনেক পুজোতে রথের দিন কাঠামো পুজোর রেওয়াজ এবছরও জারি থাকলেও উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্ক কিংবা শোভাবাজারের বড়তলা সর্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটি। অন্যদিকে দক্ষিণে ত্রিধারা, চেতলা অগ্রণী সহ বিভিন্ন বারোয়ারি পুজো কমিটি করোনা আবহে এবছর খুঁটি পুজোর সমস্ত অনুষ্ঠান বাতিল করেছে।
শোভাবাজার বড়তলা সর্বজনীন কিংবা জগৎ মুখার্জি পার্কের উদ্যোক্তাদের তরফে সায়ন নন্দী, সোনাই সরকার বললেন, 'এখনও আমরা জানি না শেষ পর্যন্ত পুজোর ভবিষ্যৎ কী হবে। তাই এবার আর আমরা সুরক্ষা বিধির কথা মাথায় রেখে খুঁটিপুজো করলাম না'। অন্যদিকে ত্রিধারা সম্মিলনী অথবা চেতলা অগ্রণী পুজো কমিটির তরফে গার্গী মুখোপাধ্যায়, সন্দীপ মুখোপাধ্যায়দেরও আজ মন খারাপ। অন্যান্য বছর এই সময়ের অনেক আগে থেকেই খুঁটিপুজো নিয়ে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। তাঁদের কথায়, 'খুঁটিপুজোর দিনই আমাদের উৎসবের সূচনা হয়। পুজোর কটা দিন কী হবে না হবে তার যাবতীয় রূপরেখা তৈরি হত এদিনই। তবে এ বছর যেখানে খুঁটিপুজো হতো সেই সমস্ত জায়গা একেবারে শুনশান। নিস্তব্ধতা গ্রাস করেছে'। এবছর পুরীর রথও বিধিনিষেধের গেরোয়। দুর্গাপুজোর আনন্দও কি মাটি হবে? সিঁদুরে মেঘ দেখছে পুজো কমিটিগুলি।