কেন্দ্রীয় আবাস যোজনায় প্রাপকদের তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে। এদিকে, জেলায় জেলায় শাসক ও বিরোধী পরিচালিত পঞ্চায়েতের তৈরি তালিকায় ব্যাপক দূর্নীতির অভিযোগে, দু দফায় সমীক্ষা করে সংশোধিত তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। প্রথম দফায় সংশ্লিষ্ট সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের দফতরের কর্মী, আশা কর্মীরা এই তালিকা যাচাইয়ের কাজ করতে গিয়ে জেলায় জেলায় আক্রান্ত হন 'অবৈধ' প্রাপকদের হাতে। নিরাপত্তাহীনতার কারণে এদের অনেকে সমীক্ষা থেকে সরেও দাঁড়ান।
advertisement
এরপর, জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে এডিএমের নেতৃত্বে দফতরের আধিকারিকদের দিয়ে দ্বিতীয় দফায় এই সমীক্ষা চালানো হচ্ছিল। আর, তাতেই কার্যত ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়ার মত অবস্থা শুরু হয়েছে কিছু জেলায়। নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মতো জেলায় দ্বিতীয় দফার এই সমীক্ষা নিয়ে শাসক দলের প্রধান ও তার সদস্যদের একাংশ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দলীয় বিধায়কদের কাছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, আবাস যোযনার ঘর পেতে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা গুনতে হয়েছে 'অবৈধ' প্রাপকদের। আবাস যোজনার ঘর বরাদ্দ করা নিয়ে আর্থিক দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগে বিদ্ধ তৃণমূল, বিজেপি দু তরফের পঞ্চায়েতই। তবে, সংখ্যার বিচারে রাজ্যের সিংহভাগ পঞ্চায়েত শাসক দলের অধীনে থাকায়, অভিযোগের পাল্লা ভারী সেদিকেই। এখন আবাস যোযনার ঘর বন্টন নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগের জেরে কেন্দ্র প্রাপক তালিকা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত করার নিদেশ দিয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই সেই কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে রাজ্যকে। না হলে মিলবে না কেন্দ্রীয় বরাদ্দ।
কেন্দ্রের এই ঘোষণার পর, দ্রুততার সঙ্গে সমীক্ষা করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু, সমীক্ষা নিয়েই আপত্তি তুলে রাজনৈতিক ভাবে প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছে জেলায় জেলায় অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যরা। এদেরই কেউ কেউ ফোন করে এলাকার বিধায়ক ও দলের প্রভাবশালী অংশের কাছে এই সমীক্ষা নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন। নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েকজন বিধায়ক তাদের ঘনিষ্ঠ মহলে এ কথা কবুল করেছেন।
বিধায়ক ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ফোন করে পঞ্চায়েত প্রধানরা বলছেন, ''নতুন করে আবার সমীক্ষার দরকার নেই। একান্তই সমীক্ষা হলে, তার সংশোধিত তালিকা এখনি যেন চূড়ান্ত করা না হয়। তেমন কিছু হলে বড়সড় অশান্তি হবে।"
আরও পড়ুন: গঙ্গাসাগর নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা? 'স্টোভ-বন্দুক' নিয়ে সতর্কতার বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
নিয়ম অনুযায়ী, সমীক্ষা করে সংশোধিত তালিকা তৈরি হবার পর, গ্রাম সভা ডেকে তা চূড়ান্ত অনুমোদন নিতে হয়। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ কর্তার মতে, আবাস যোযনায় অর্থের বিনিময়ে যোগ্য ব্যক্তির বদলে 'অবৈধ' প্রাপকদের নামের তালিকা তৈরি করেছে কিছু পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যরা। এখন সমীক্ষা করতে গিয়ে তালিকায় ভুরিভুরি অসঙ্গতি ধরা পড়ায়, তালিকা থেকে সেই সব প্রাপকদের নাম বাদ দিতে হচ্ছে। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন ঐ সব পঞ্চায়েত প্রধান ও তার সদস্যরা।
আরও পড়ুন: 'শুভেন্দু পালিয়ে এসে অমিত শাহের শরণাপন্ন হয়েছে', বেনজির আক্রমণ কুণালের
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, কেন্দ্রীয় আবাস যোযনায় ঘর পাইয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে, লাখো টাকা আত্মস্যাৎ করেছে প্রধান ও সদস্যরা। এখন চূড়ান্ত তালিকায় তাদের নাম বাদ গেলে তারা ছেড়ে কথা বলবে না। এটা বুঝেই তালিকা চূড়ান্ত করা ঠেকিয়ে রাখতে মরীয়া প্রধান ও তার সদস্যরা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। গ্রামীন এলকায় শিক্ষা দূ্র্নীতির তুলনায় আবাস যোযনা দূর্নীতির প্রভাব অনেক বেশি। ইতিমধ্যেই আবাস যোযনায় দূর্নীতিকে ইস্যু করে ময়দানে নেমে পড়েছে বিজেপি, বাম, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা। সেক্ষেত্রে, তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া মানুষের ক্ষোভ, রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বড়সড় প্রভাব ফেলতে পারে। সেটাই কপালে ভাঁজ ফেলছে শাসক দলের।