পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সচিবালয়ের ব্যাখ্যা, সাধারণভাবে বৈঠকের আগে কমিটির সদস্যদের চিঠি পাঠানোই সচিবালয়ের রীতি। সেই নিয়ম মেনেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন- বাগুইআটি কাণ্ডে সিআইডি তদন্তে খুশি অতনু এবং অভিষেকের পরিবার, পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ অব্যাহত
২২ শে জুলাই ইডি গ্রেফতার করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তার পর থেকে কার্যত জেলবন্দী পার্থ। গ্রেফতারের ৬ দিন পর সরকারের মন্ত্রীত্ব ও দলের সব পদ থেকে পার্থকে সরানোর সিদ্ধান্ত ঘোণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। এর পরেই বিধানসভার পরিষদীয় মন্ত্রকের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে সেই জায়গায় শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে আনেন মমতা।
advertisement
১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হবে। অধিবেশনের মেয়াদ এবং সরকারের কর্মসূচি নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে তা চূড়ান্ত করতে অধিবেশন শুরুর আগে বিএ কমিটির বৈঠক হয়।
পরিষদীয় মন্ত্রী থাকাকালীন, বিধানসভার অধিবেশন। সংক্রান্ত নানা বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল পার্থর। কিন্তু, পার্থ এখন জেলে। তার জায়গায় পরিষদীয় মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু, মন্ত্রীত্ব গেলেও, পার্থ এখনো বিধায়ক। তিনি বিএ কমিটির সদস্যও। ফলে, নিয়মমাফিক তাকে চিঠি পাঠাতে কোন বাধা নেই বিধানসভার। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, আইনী এই ফাঁককে কাজে লাগিয়েই কমিটির বৈঠকের কথা জানিয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি পাঠালেন স্পিকার।
আরও পড়ুন- এক ডায়েরির সূত্রেই উঠে আসে মলয়ের নাম, মারাত্মক অভিযোগ তুলল সিবিআই
কিন্তু, কেন পার্থকে তাঁর বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পাঠাল বিধানসভা? অধ্যক্ষের মতে, গ্রেপ্তার হলেও, তার হাজতবাস নিয়ে ইডি এখনো বিধানসভাকে সরকারিভাবে কিছুই জানয়নি৷ ফলে, পার্থ বর্তমানে কোথায় আছেন সরকারিভাবে বিধানসভার কাছে কোনও তথ্য নেই। সদস্য হিসাবে পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁর বাড়ির ঠিকানা দিয়েছিলেন বিধানসভাকে। সেই কারণে তাঁর বাড়ির ঠিকানাতেই চিঠি পাঠিয়েছে বিধানসভা।
পার্থকে গ্রেফতারের পর তাঁকে জেলবন্দী করা নিয়ে ইডির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্পিকার। স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায় বলেন, শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ই নন, বিধানসভার কোনও সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তা বিধানসভাকে জানাতে হয়। এক্ষেত্রে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারের এতদিন পরেও ইডি সরকারিভাবে বিধানসভাকে কিছুই জানায়নি। এটা তদন্তকারী সংস্থার দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব ইডি বা সিবিআই পালন করছে না। প্রয়োজনে এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে আমরা স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ আনতে পারি।
এদিকে, পার্থকে বিধানসভার চিঠি পাঠানোয় স্পিকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য। শমীক বলেন, "মুকুল রায় তৃণমূলে ফিরে যাবার পরে এক বছর ধরে স্পিকার তাকে বিধানসভায় বিজেপির বিধায়ক হিসাবে রেখে দিয়ে পাবলিক একাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান সাজিয়ে রেখেছিলেন। ফলে, এই স্পিকার
সম্পর্কে যত কম বলা যায়, ততই ভাল। "
বিধানসভা সূত্রে জানা গেছে, শুধু চিঠি পাঠানোই নয়, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ট্রেজারি বেঞ্চে বেশ কিছু রদবদলও করতে হচ্ছে বিধানসভাকে। অধিবেশন কক্ষে ট্রেজারি বেঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর বাম পাশের আসনটি ছিল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের। আসন্ন অধিবেশনে সেই জায়গায় বসবেন শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। আর, ডানদিকের আসনে বসবেন ফিরহাদ হাকিম ও অরুপ বিশ্বাস। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর পাশ থেকে আসন সরলেও, ট্রেজারী বেঞ্চে এক্স-মিনিস্টার লবিতে থাকছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আসন।
আপাতত, বিধানসভার আসন্ন অধিবেশনের মেয়াদ সর্বাধিক ২৩ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হতে পারে। পার্থর জেলযাত্রার পর কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার থেকে ডাক পেয়েছেন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়ক। প্রতিদিন সিবিআই, ইডির তৎপরতা যেভাবে লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে আসন্ন অধিবেশন নির্বিঘ্নে শেষ করা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে বিধানসভা।