কেন ভাঙল ফরওয়ার্ড ব্লক? দলের পতাকা পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে এই দ্বন্দ্বটা তৈরি হয়েছিল বেশ কিছুদিন আগেই। ফরওয়ার্ড ব্লকের চিরাচরিত লাল পতাকায় লম্ফমান বাঘ এবং তারপাশে কাস্তে হাতুরির চিহ্ন ছিল। কিন্তু সম্প্রতি পতাকা থেকে কাস্তে হাতুরি সরিয়ে দেওয়া হয়৷ দলের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি রাজ্য নেতাদের একাংশ।
এ ছাড়াও নতুন দলের নেতাদের দাবি, রাজ্যের বর্তমান ফরওয়ার্ড ব্লক নেতৃত্ব কমিউনিস্ট বিরোধী এবং তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। শুধু তাই নয়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতো দুর্নীতিতে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও রয়েছেফব নেতাদের। আর তাই পুরনো দল ভেঙে তলায় তলায় নতুন সংগঠন গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন বিক্ষুব্ধ নেতারা। এরই উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বামফ্রন্টে যুক্ত হওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার ফন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি দিল পশ্চিমবঙ্গ ফরওয়ার্ড ব্লক।
advertisement
আরও পড়ুন: মহিলা কাউন্সিলরকে বিয়ের প্রস্তাব তৃণমূলেরই যুবনেতার, সোনারপুরে শাসক দলে শোরগোল
নতুন দলের পক্ষ থেকে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুকে চিঠি দিয়েছেন রাজ্য প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক সুব্রত কুমার দে। চিঠিতে তিনি বিমান বসুকে উদ্দেশ্য করে তিনি লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গ ফরওয়ার্ড ব্লক এই রাজ্যে ক্ষমতাসীন চূড়ান্ত দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূল ও দিল্লিতে ক্ষমতাসীন সাম্প্রদায়িক বিজেপির জনবিরোধী সর্বনাশা কার্যকলাপকে প্রতিরোধ করতে বামফ্রন্ট তথা বামপন্থী আন্দোলনের শরিক হতে চায়। এ কারণেই পশ্চিমবঙ্গ ফরওয়ার্ড ব্লক আপনাদের সহযোগিতা চায়। আপনাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে অংশগ্রহণও করতে চায়৷ একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ ফরওয়ার্ড ব্লক বামফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছে।”
গত দেড়-দু’বছর ধরে এ রাজ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের অন্দরে কোন্দল চলছিল। রাজ্য নেতৃত্বের উপরে ক্ষোভ প্রকাশ করে গত বছরের শেষ দিকে দল ছাড়েন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী হাফিজ আলম সইরানি। পরে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। তাঁর ভাইপো তথা প্রাক্তন বিধায়ক আলি ইমরান রামজও কাকার আগেই কংগ্রেসে যোগ দেন। এ ছাড়াও ফরওয়ার্ড ব্লকের একসময়ের পরিচিত মুখ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও এখন কংগ্রেসের নেতা। যাঁরা কংগ্রেসে যেতে চাননি তাঁরা নতুন দল গড়ার প্রস্তুতি নেন। সবমিলিয়ে গত ২৭ মার্চ নতুন এক রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে বঙ্গে। তারই নাম পশ্চিমবঙ্গ ফরওয়ার্ড ব্লক। তারাই এবার বামফ্রন্টের শরিক হতে চেয়ে বিমান বসুকে চিঠি দিল।
বামফ্রন্ট আমলে ফরওয়ার্ড ব্লকই সিপিএমের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দল ছিল। হেমন্ত বসু, অশোক ঘোষদের নেতৃত্বে এই দল বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যে পালা বদলের পর থেকেই দুর্বল হতে থাকে সংগঠন। এ দিকে দলের ভিতরই চলতে থাকে চাপানউতোর। অবশেষে ভেঙে দু’ টুকরো হল নেতাজির তৈরি এই দল৷