আসল কাহিনী খুবই সহজ।কিন্তু রাজনীতি করতে গিয়ে বোঝে কে? বিজেপি নেতা, মুকুল রায় দাবি করলেন, 'নৈহাটিতে বোমা বিস্ফোরনের ঘটনা, খাগড়া গড়ের ঘটনা মনে করিয়ে দিচ্ছে। এই ঘটনার সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত'। সঙ্গে বাম ও কংগ্রেস একই ভাবে রাস্তায় নেমে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, বিশেষজ্ঞরা তখন হাসছেন, প্রতিবাদের কীর্তি কলাপ দেখে। প্রথমেই বলা ভাল। কোনও বিস্ফোরক পুলিশ উদ্ধার করলে সেটা নষ্ট করা হয়, জ্বালিয়ে। ফাটানো হয় না। নিয়ম, ৫ থেকে ১০ কেজি এক সঙ্গে পোড়াতে পারে। এক্ষেত্র দুটি টাটা সুমো ভরতি করে এনে, একটি ৭ ফুট গভীর ও ৬ ফিট চওড়া আয়তাকার গর্তে, প্রায় ২৫০ কেজি থেকে ৩০০ কেজি, বাজি রেখে আগুন দেয়। যার ফলে একসঙ্গে সব ফেটে গিয়ে শব্দ তরঙ্গের ফলে রীতিমত ক্ষতি হয় বিস্তীর্ণ এলাকাতে।
advertisement
বোমা পোড়ানোর নিয়ম হল, পিট ও প্যাড পদ্ধতিতে। গর্ত করে পড়ানোকে বলা হয় পিট পদ্ধতি। আর মাটির ওপর ৬ ইঞ্চি পুরু আয়ত ক্ষেত্র করে, তার ওপর বিস্ফোরক পোড়ানো হয়। তাকে বলে প্যাড পদ্ধতিতে। এক্ষেত্রে উচ্চক্ষমতাশালী বিস্ফোরক পোড়ানো হয়।
নৈহাটিতে চকলেট বোম, শেল, ইত্যাদি পোড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন একসঙ্গে গর্তে ফেলে আগুন দেওয়ার ফলে খুব জোর বিস্ফোরণ হয়। এটাই ভুল ছিল সংশ্লিষ্ট এজেন্সির। এটি কম ক্ষমতা সম্পন্ন বারুদ ছিল। যার কারণে বিস্ফোরণের ধোয়ার রং সাদা ছিল। যদি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কোন বিস্ফোরক হত, যেমন আরডিএক্স, ইত্যাদি হলে ধোয়ার রং কালো হত। সামান্য তম উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন বিস্ফোরক একটুও ছিল না, তাই ধোয়া কালো হয়নি।
যে গর্তে বোম ফাটানো হয়েছিল, তার চার পাশে উঁচু করে বালির বস্তা দিয়ে প্রাচীর করে দিলে শব্দের কম্পাংক নদীর জল তল দিয়ে এগোতে পারত না।
কম্পাঙ্ক এর তরঙ্গ তিন প্রকার হয়। ১.এস (শর্ট ওয়েভ) ২. এল (লংগি চিউদিনাল ওয়েভ) ৩.পি (প্রাইমারি)/টি (ট্রান্স ভার্স ওয়েভ )।
হুগলি নদীর ওপারে যে ওয়েভটা গিয়েছিল তাকে টি ওয়েভ বলে। যার বাংলা নাম তীর্যক তরঙ্গ। নদীর পাড়ে ঘটানোর ফলে জলের স্তর দিয়ে খুব দ্রুত, ও গতি বাড়িয়ে নদীর ওপারে আঘাত হানে।
বিস্ফোরণের ঘটনাতে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শব্দের তরঙ্গের আঘাতে বাড়ির কাঠামো থেকে আরম্ভ করে, জানালার কাঁচ ভেঙে পড়ে। ঘটনাস্থল থেকে ১ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ঘর বাড়ির ক্ষতি হয়। আসবেষ্টসের ছাউনী ভেঙে পড়ে। নদীর ওপারে চুঁচুড়াতে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
হুগলির চুঁচুড়াতে সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি দাবী করেন, ওই বিস্ফোরণ কোন উচ্চক্ষমতা শালী বোম্ব বিস্ফোরণ ছিল। অনেকেই দাবী করেন ওতে কোনও নাশকতার জিনিস পুলিশ তাড়াতাড়ি নষ্ট করবার জন্য এই কাজ করে। আসলে সিআইডি র অসচেতনতার ফলে এই ঘটনা ঘটেছে। তবে তার পর থেকে পুলিশ মুখে কুলুপ এঁটেছে।
এই মুহূর্তে ওই জায়গাটিকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তবে বোম্ব বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সাধারণ পেটো জাতীয় বোম্ব ওর মধ্যে থাকতেও পারে। তবে এই পেটো কোনও দিন উচ্চ ক্ষমতা শীল এক্সপ্লোসিভ এর মধ্যে পড়ে না।
নৈহাটির যেখানে এই আতশ বাজির কারখানা ছিল, সেটা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে চলছিল। কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না। সেখানে বিস্ফোরণে অনেক বড় কিছু ঘটতে পারত। তা না হলেও, এই বাজি এক সঙ্গে ফেটে যা অবস্থা,যদি জন বহুল এলাকাতে বিস্ফোরণ হত, তাহলে অনেক বড় ঘটনা ঘটতে পারত। থানা এতদিন কেন নিষ্ক্রিয় ছিল,সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সবাই। ঘটনা মনে করে সবাই, এখনও আঁতকে উঠছে।
ঘটনার তদন্তে নেমে সিআইডি। তদন্তে প্রমাণিত হয় বোম স্কোয়াডের ভুল ছিল। সেই অনুযায়ী ওসি বোম স্কোয়াড কে সাসপেন্ড করে।
SHANKU SANTRA