রাজ্যের শিল্পায়নের সমালোচনায় বিরোধীরা প্রায়শই তাঁকে নিশানা করেন। সিপিএম-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, সিঙ্গুর থেকে টাটাকে বিদায় করার মূলে তৃণমূল। আর সেই টাটা বিদায়ের কারণেই সারা দেশে, এই রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনা নিয়ে বিরূপ বার্তা গিয়েছে।
বিরোধীদের এই অভিযোগ সত্ত্বেও, ২০১১-তে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। এর পর, কবির ভাষায়, 'তরীখানি বাইতে গেলে মাঝে মাঝে তুফান ওঠে ' এমন পরিস্থিতি হলেও তৃণমূলকে এখনও রাজ্যের মানুষ ছুড়ে ফেলেনি সরকার থেকে। এমন পরিস্থিতিতে উত্তরবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হটাতই সিঙ্গুর ও টাটা বিদায় প্রসঙ্গ টেনে এনে সিপিএমকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোয়, মূহুর্তে রাজ্য রাজনীতির চর্চার কেন্দ্র বিন্দুতে পৌঁছে গিয়েছে সিঙ্গুরের কৃষিজমি আন্দোলন। এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
advertisement
আরও পড়ুন: বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে আবেগে ভাসলেন মমতা, উত্তরবঙ্গের মন জয়ে দুরন্ত চমক
শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ''কেউ কেউ বাজে কথা বলে বেড়াচ্ছে। আমি টাটাকে তাড়িয়েছি। আর টাটা চাকরি দিচ্ছে। আমি টাটাকে তাড়াইনি। সিপিএম টাটাকে তাড়িয়েছে। আপনারা জমি কাড়তে গিয়েছিলেন। আমি জমি ফেরৎ দিয়েছি। " মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, শিল্পপতিদের মধ্যে তিনি কোন বৈষম্য করেন না। ২৩-এর গোড়ায় পঞ্চায়েত ভোটের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। নির্ধারিত সময়ের আগে ভোট করার সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: দুয়ারে সরকার নিয়ে বিরাট ঘোষণা মমতার! উত্তরবঙ্গকে বললেন, 'ভালবাসি'
বিরোধীরা বলছে, শিক্ষা,স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে কয়লা পাচার, গরু পাচারের মত হাজার দুর্নীতিতে জেরবার রাজ্য সরকার ও শাসকদলের ভাবমূর্তি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তাই দ্রুত পঞ্চায়েত নির্বাচন সেরে ফেলতে চাইছেন মমতা। ২৪-এর লোকসভার আগে রাজ্যে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও বিজেপিকে কোনঠাসা করতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল স্তরে নিরঙ্কুশ হতে হবে তৃণমূল কংগ্রেসকে। ২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিপুল জয় পেলেও, উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের জমি আলগা হয়েছে। সে কারণে পঞ্চায়েত নির্বাচনকে মাথায় রেখে উত্তরবঙ্গের মাটিতে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে কোনঠাসা করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিলেন মমতা।
শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ''আমার ভালবাসার উত্তরবঙ্গ। আমরা কোনও ভঙ্গ চাই না, সঙ্গ চাই।" রাজনৈতিক মহলের মতে, একদিকে উত্তরবঙ্গকে ''ভালবাসার উত্তরবঙ্গ" বলে সম্বোধন করে সেখানকার মানুষকে কাছে টেনে নেওয়া। অন্যদিকে, নাম না করে বিভাজনের রাজনীতির জন্য বিজয়া সম্মিলনীর মতো মিলনের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে দুষলেন মমতা। পর্যবেক্ষকদের মতে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের কৃষিজীবী মানুষের প্রভাব যথেষ্টই। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী আবার সিঙ্গুর প্রসঙ্গ তুলে এনে শিল্পায়নের প্রশ্নে কৃষিজমি অধিগ্রহন না করা নিয়ে তাঁর পুরনো অবস্থানকেই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
তবে, জোর করে কৃষিজমি দখল করে বলে সিপিএমকে কাঠগড়ায় তোলা হয়তো মমতার 'কৌশল' । এই রাজনৈতিক কৌশলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে কৃষিজমি ও কৃষক স্বার্থ রক্ষার প্রশ্নে সিপিএমকেই প্রতিপক্ষ করে, বিজেপিকে তিন নম্বরে ঠেলে দিলেন মমতা। আর সে কারণেই, মমতার এই কৌশল আঁচ করে বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, "আসলে এটা রাজ্যের মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কে কোথায় সিপিএমের মতো অপ্রাসঙ্গিক দলকে প্রাসঙ্গিক করতে চাইলেন তাতে বিজেপির কিছু আসে যায় না। " আর যে সিপিএমকে মুখ্যমন্ত্রী নিশানা করলেন, সেই সিপিএমের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, 'এটা চূড়ান্ত হাস্যকর। রাজ্যে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের প্রশ্নে ডাহা ফেল করা তৃণমূল নেত্রী, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এসব আজগুবি কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।' মুখ্যমন্ত্রীকে মিথ্যাশ্রী বলেও কটাক্ষ করেন সুজন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মতে, মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবি চূড়ান্ত মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়।