রাষ্ট্রপতি হওয়া বা তার আগেও তিনি বার বার বীরভূমের মেঠো পথে কাটানো সময় নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন। বার বার তাঁর কথায় উঠে এসেছে তাঁর গ্রামের বাড়ির কথা, স্কুল জীবনের কথা। বীরভূমের বাড়ির সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের অনেক কিছুও জড়িয়ে ছিল। প্রতি বছরই দুর্গাপুজোয় এখানে আসতেন তিনি। নিজের হাতে মায়ের পুজো করতেন।
advertisement
কিন্তু এ বছর ফাঁকা ছিল মিরাটির সেই বাড়ি। তাঁদের পল্টু যে এ বার আর আসেননি! গত ১০ অগাস্ট দিল্লিতেই বাথরুমে পড়ে গিয়ে আঘাত পান তিনি। মস্তিস্কে অস্ত্রোপচার করেও শেষরক্ষা হয়নি । গত ৩১ অগাস্ট মৃত্যু হয় এই প্রবীণ নেতার।
তাই আজ বীরভূমে কাটানো তাঁর সেই সমস্ত দিন, কীর্ণাহার সবই স্মৃতি। কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছেন মিরাটির পল্টু। কিন্তু থেকে গিয়েছে একাধিক স্মৃতি, তাঁর একাধিক কাজ। আজ তাঁর জন্মদিনে ফিরে দেখা যাক তার মধ্যেই কিছু কথা।
১. ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন এবং স্বাধীনতার পরও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার (West Bengal Legislative Council) অংশও ছিলেন তিনি।
২. স্কুলে পড়াশোনা শেষে প্রণব মুখোপাধ্যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে বিদ্যাসাগর কলেজে পড়াশোনা শুরু করেন।
৩. কলেজে পড়াশোনার পর কেরিয়ারের শুরুতে তিনি ডেপুটি অ্যাকাউন্টেন্ট জেনেরালের অফিসে আপার ডিভিশন ক্লার্ক হিসেবে কাজ করেছেন।
৪. দেশের ডাক নামে একটি সংবাদপত্রের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন তিনি। রাজনীতিতে পা দেওয়ার আগে এই পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি।
৫. ১৯৬৭ সালে বাংলা কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় তাঁর। ১৯৬৯ সালে বাংলা কংগ্রেসের টিকিটেই প্রথমবার রাজ্যসভার (Rajya Sabha) সাংসদ নির্বাচিত হন তিনি।
৬. পরে বাংলা কংগ্রেস, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায় এবং ইন্দিরা গান্ধি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ান।
৭. তিনি তৎকালীন সরকারে আর্থিক ক্ষেত্রটি দেখতেন এবং তার একাধিক উন্নয়নে সাহায্য করেন। এমনকি IMF লোন শোধ করতেও সরকারকে তিনি তখন সাহায্য করেছিলেন।
৮. পরে তিনি অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব পান। এবং অর্থমন্ত্রী হওয়ার পরই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার গভর্নর পদে মনমোহন সিংকে (Manmohan Singh) নিযুক্ত করেন।
৯. ১৯৮৬ সালে ইন্দিরা গান্ধির হত্যার পর দলে তিনি ব্রাত্য হতে থাকেন। ফলে ১৯৮৬ তেই কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস (RSC) প্রতিষ্ঠা করেন। সেই দল আবারও তিন বছর পর মূল কংগ্রেস দলের সঙ্গে মিলে যায়।
১০. মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বে UPA সরকারের কার্যকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, অর্থমন্ত্রক ও বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। এই সব ক্ষেত্রেই নিজের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে একাধিক বড় বড় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন।
১১. ২০০৫ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে ভারত-আমেরিকা পরমাণু চুক্তিতেও তাঁর ভূমিকা রয়েছে। সে সময়s বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি US-India Civil Nuclear Agreement-এ সাক্ষর করেন।
১২. ২০০৮ সালে মুম্বই হামলার পর তিনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরব হন। শুধু দেশ নয়, বিশ্বের মানুষকেও বোঝান কী ভাবে পাকিস্তান জঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।
১৩. পরে তিনি দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার মধ্যে আফpল গুরু ও আজমল কাসভের ক্ষমাভিক্ষা ছিল অন্যতম। এই দু'জনের ক্ষমাভিক্ষা নাকচ করেন তিনি।
১৪. এ সব কিছু শেষে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি প্রথম প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা RSS-এর অনুষ্ঠানে যোগ দেন ২০১৮ সালে। যা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্কও হয়। কিন্তু এ বিষয়ে মুখ খোলেননি তাঁর দলের কেউ।
১৫. ২০১৯-এ সে ভাবে কোনও কিছুতে আর দেখা যায়নি তাঁকে। বার্ধক্য ও শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০২০-র শুরু থেকেও ঘরবন্দিই ছিলেন।