TRENDING:

সমঝোতা থেকে সরে গিয়ে বিজেপিকে কিছুটা নিশ্চিন্তই করল কংগ্রেস

Last Updated:
impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
খেলাটা হবে মূলত তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে। বাকিরা দুধভাত। কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল, এই ক্ষতি হয়ত ভবিষ্যতে সামলে নেবে। সিপিএম, আজ যে ভাবে কার্যত আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে, তাদের ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। পড়ুন বিশিষ্ট সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্রের কলমে বিশ্লেষণ৷
advertisement

কিছুদিন আগে সিপিআইএম পলিটব্যুরো সদস্য, বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেছিলেন, রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো অবস্থায় তাঁদের দল নেই। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে সিপিআইএম একটু লাজুক লাজুক মুখ করে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেছিল। তবে এবারে কিন্তু তা নয়। সিপিএম আন্তরিক ভাবেই চাইছিল, আসন সমঝোতা হোক। কারণটা বিমান বসুর কথা থেকেই স্পষ্ট।

advertisement

বামফ্রন্টের অন্য দলগুলি ইতিমধ্যেই এই রাজ্যে ‘এনডেঞ্জার্ড স্পিসিসে’ পরিণত। সিপিএমের কাছে এই মুহূর্তে লড়াইটা অস্তিত্ব রক্ষার। তা সত্ত্বেও হল না। হল না মূলত কংগ্রেসের জন্যই। কংগ্রেস চায় সিপিএম তাদের গতবারের জেতা আসনগুলি ছেড়ে দিক কংগ্রেসকে। যা যুক্তিহীন, অবাস্তব দাবি বললে কম বলা হয়। ‘মামাবাড়িতেও’ এমন ফালতু আবদারের কোনও জায়গা নেই। তৃণমূলের হাত ফেরত বর্তমান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেছেন, মর্যাদা খুইয়ে কোনও সমঝোতা হবে না। যদিও তিনি জানেন, ২০১৬-র পর বিভিন্ন উপনির্বাচনের ফল বলছে, এখন বহু কেন্দ্রে কংগ্রেসের ভোট ১০ শতাংশের বেশ নীচে নেমে গিয়েছে।

advertisement

২০১৪ লোকসভা ভোটের ফল দেখলেও তা স্পষ্ট হয়ে যায়। কংগ্রেসে ওই ভোটে সাড়ে নয় শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বামফ্রন্ট পেয়েছিল ৩০ শতাংশ ভোট। ২০১৫ সালে পুরভোটে বামেদের ভোট কমে দাঁড়ায় ২৬ শতাংশে। উপনির্বাচনের ফল থেকে এটাও পরিস্কার, বামেদের ভোটও বহু কেন্দ্রে ১০-১৫ শতাংশে নেমে গিয়েছে। রাজ্যে এখন দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি বিজেপি। যদি আসন সমঝোতা হত, ২০১৪-র মতোই, বিজেপি তৃতীয় শক্তি হিসেবেই থেকে যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা ছিল।

advertisement

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ৪২-এ ৪২ বলে চলেছেন, সম্ভবত তিনি ধরে নিয়েছিলেন, বাম-কংগ্রেস আসন সমঝোতা হবে। সমঝোতা হলে, যেমন ২০১৬ বিধানসভা ভোটে হয়েছিল, বিজেপির ভোট ১৭ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশে পৌঁছেছিল।এবারে শেষ পর্যায়ে এসে সমঝোতা প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ায়, এই প্রথম বাংলার বহু আসনে, ধর্মীয় মেরুকরণের ভোট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে গেল। তার সুবিধে কোথাও তৃণমূল পাবে কোথাও বিজেপি পাবে।

advertisement

তেমন হলে, বাম-কংগ্রেসকে ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শক্তি বলেই গণ্য করবেন না। খেলাটা হবে মূলত তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে। বাকিরা দুধভাত। কংগ্রেস সর্বভারতীয় দল, এই ক্ষতি হয়ত ভবিষ্যতে সামলে নেবে। সিপিএম, আজ যে ভাবে কার্যত আঞ্চলিক দলে পরিণত হয়েছে, তাদের ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি।

যেভাবে বিহারে এককালে বড় সংগঠন থাকা সত্ত্বেও বামেরা আজ লেজুরদল, বঙ্গেও কি বামেদের ভাগ্য সেই পথে হাটছে ? ইঙ্গিতগুলো কিন্তু ভালো নয়। বামপন্থার দীর্ঘ গৌরবময় অতীত আর ৩৪ বছরের বামশাসন যে এক নয়, এই কথাটা সিপিএম মানুষকে বোঝাতে পারছে না। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। এই যে একদল ছেলে-মেয়ে প্রাপ্য চাকরির দাবিতে কলকাতা প্রেস ক্লাবের পাশে অনশন করে চলেছেন, সেটাই যে আজকের বামপন্থা, সেটা বোঝার মতো সংবেদনশীলতা সিপিএমও হারিয়ে ফেলেছে। বেঁচে আছে এক রাইটার্স সর্বস্ব সিপিএম। সমস্যাটা সেখানেই।

যেহেতু কংগ্রেস-বাম কোনও সমঝোতা হল না, গত পাঁচ বছর ধরে বিজেপিতে চলে যাওয়া বাম-কংগ্রেসের ভোট কিছুটা হলেও ঘর ওয়াপসি হওয়ার যে সম্ভাবনার কথা ভাবা হয়েছিল, তার কোনও সুযোগ তো রইলই না, বরং নতুন করে এই দুই দলের ভোট বিজেপিমুখী হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে গেল। তা যদি হয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৪২-এ ৪২-এর যে অঙ্ক, তার উত্তর নাও মিলতে পারে। খাতায় লাল কালির দাগ পড়ার সম্ভাবনাই বেশি।

মায়াবতী, অখিলেশ, নীতীশ কুমার, এঁরা কেউই একক ভাবে বিজেপির সঙ্গে পাঞ্জা কষতে পারেন না। এখানেই সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে মমতার গুরুত্ব আলাদা। কিন্তু বেহুলার বাসরঘরে ছিদ্র দৃশ্যমান। আর কংগ্রেস সমঝোতা ভেস্তে দিয়ে সেই ছিদ্রকে প্রায় সুড়ঙ্গে পরিণত করেছে অথচ ছবিটা অন্য রকম হবে এমন একটা ধারণা বিরোধী নেতারা এবং রাহুল গান্ধিও দিয়েছিলেন। কলকাতা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা বিরোধীদের অনেকগুলো কনক্লেভ দেখেছি।

বিজেপি -- ফাইল ছবি

মমতা একটা ফরমুলা দিয়েছিলেন, ‘যে যেখানে শক্তিশালী সে সেখানে লড়বে, বাকি দল তাকে সমর্থন করবে।’ কিন্তু এই ফরমুলা কাজ করেনি। উত্তরপ্রদেশে বুয়া-বাবুয়া জোট কংগ্রেসকে দুটি আসন ছেড়েছিল। কংগ্রেস উত্তরপ্রদেশে খুবই দুর্বল। তবে আলোচনায় গেলে দুই সংখ্যাটা ছয় হত হয়ত। কিন্তু মর্যাদার প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস আলাদা প্রার্থী দিচ্ছে। অবশ্যই বিজেপির সুবিধে হবে।

মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রাক্তন বিজেপি মন্ত্রী যশোবন্ত সিং একটি ট্যুইটে জানিয়েছেন, ‘বিজেপি যেখানে জোটের স্বার্থে বিহারে, ঝাড়খণ্ডে নিজেদের জেতা আসন ছেড়ে দিচ্ছে, বিরোধী দলগুলি সেখানে নিজেদের দখলে না থাকা আসনেও সমঝোতা করতে রাজি নয়। গুড লাক টু দেম।’ উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড-সহ বিভিন্ন রাজ্যে বিরোধী শক্তির যে চেহারা দেখা যাচ্ছে, অন্তত এই মুহূর্তে সব দেখে মনে হচ্ছে, বহু আসনে বিরোধীরা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে নিজেদের শক্তিক্ষয় করবে। এই পরিস্থিতির দায় বর্তায় বড় দলের উপরেই। রাহুল গান্ধি কি এই দায় অস্বীকার করতে পারবেন?

কংগ্রেস তাকিয়ে আছে পরের ভোটের দিকে। সেটাই কৌশল । কংগ্রেস যেটা ভাবতে পারছে না, টানা ১০ বছর ক্ষমতায় না থাকলে, দলের বহু নেতার দল বদলের আশঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, সদ্য জেতা হিন্দি বলয়ের তিন রাজ্যও মেয়াদ পূর্ণ করার অনেক আগেই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। সব কিছুর উত্তর অবশ্য মিলবে ২৩ মে।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
শেষ সুবর্ণ সুযোগ! হাতছাড়া হলে কেঁদে কুল পাবেন না...
আরও দেখুন

এই প্রতিবেদনে যাবতীয় মত ও বক্তব্য লেখকের ব্যক্তিগত৷ 

বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
সমঝোতা থেকে সরে গিয়ে বিজেপিকে কিছুটা নিশ্চিন্তই করল কংগ্রেস