দাস পরিবারের দুই সন্তান। দিদি পেশায় চিকিৎসক মৌমিতা দাস এবং ভাই প্রসেনজিৎ দাস পেশায় ইঞ্জিনিয়র। পুজোয় কোনও স্বপ্নাদেশ নেই। যেটা রয়েছে সেটা হল ভারতীয় সনাতন সংস্কৃতিকে ধরে রাখা। ভারতীয় পরম্পরাকে আঁকড়ে থাকা, তার চর্চা করা। দুর্গা একদিনের নন, প্রতিদিনের পূজ্য। প্রতিটি সকালেই দুর্গা নাম উচ্চারণ করতে হয়। প্রতিবার বাইরে যাওয়ার সময়ে মা-ঠাকুমারা ‘দুর্গা-দুর্গা’ উচ্চারণ করেন।' পুজো হয় কখনও রঘুনন্দনের ‘দুর্গোৎসব তত্ত্বের’ উপর ভিত্তি করে, কখনও বিদ্যাপতির লেখা ‘দুর্গাভক্তিতরঙ্গিনী’র নিয়মানুসারে। কখনও পুজো হয় শূলপাণির লেখা ‘দুর্গোৎসব বিবেক’ অনুযায়ী৷ রঘুনন্দন বা বিদ্যাপতির চেয়েও প্রাচীন এই বই৷
advertisement
আরও পড়ুনঃ চোখ রাঙাচ্ছে নিম্নচাপ! আচমকা আবহাওয়া বদল! মহালয়ায় কেমন থাকবে আবহাওয়া, জানুন
সারা বছর দাস বাড়িতে রাধাকৃষ্ণের পুজো করেন অন্য পূজারী। দুর্গাপুজোয় অবশ্য পুরোহিতের ভূমিকায় থাকেন বাড়ির একমাত্র ছেলে প্রসেনজিৎ দাস। আগে পূজারী হিসেবে যোগ দিতেন তাঁর দিদি, পেশায় চিকিৎসক মৌমিতা দাসও। বিয়ের পরে অবশ্য মৌমিতা আর সেই ভূমিকায় নেই। প্রসেনজিৎ বলেন, '১১ বছর আগে আমি আর দিদি মিলে ঠিক করেন দুর্গাপুজো করব। তবে মহাপুজো নয়। তাঁরা পুজো শুরু করবেন কৃষ্ণপক্ষের নবমী থেকে। আরও ঠিক করি, পুজোর সব কাজ করব নিজেরাই। তারপর থেকেই চলছে।'
বাড়ির পুজো মানেই যে গৃহকর্তাই হবেন সবার উপরে তা কিন্তু নয়। আনন্দ পালিত লেনের কাছে শীল লেনের এই পুজোয় গৃহকর্তা প্রদীপকুমার দাস সবার উপরে রয়েছেন, কিন্তু পুজোটা ভাই-বোনের। বাড়িতে পুজোর রেওয়াজ বরাবরই ছিল। কিন্তু দুর্গাপুজো ছিল না। প্রদীপবাবুর দুই সন্তান মৌমিতা ও প্রসেনজিতের মধ্যে পুজোর প্রতি আগ্রহ ছিল ছেলেবেলা থেকেই। কিন্তু একটু বড় হওয়ার পরে সেটা অন্য ধারায় বইতে শুরু করে।
কিন্ত সব পুজো যখন শুক্লা ষষ্ঠীতে শুরু হয় তখন এখানে অন্য রকম কেন? ১৮ দিন ধরেই বা পুজো কেন? প্রসেনজিৎ বলেন, 'অন্যত্র রঘুনন্দন তত্ত্ব অনুসারে পুজো হয়। রঘুনন্দন যেমন একজন স্মৃতিকার ছিলেন তেমনই আর একজন স্মৃতিকার শূলপাণি। বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পুরাণ অনুসারে তাঁর দুর্গোৎসব-বিবেক গ্রন্থ মতে পুজো হওয়া উচিত কৃষ্ণা নবমী থেকে শুক্লা নবমী পর্যন্ত। সেই রীতি মেনেই আমরা পুজো করি।'
আরও পড়ুনঃ গ্রাম বাংলা থেকে শহরের পুজো, ঘুরিয়ে দেখাবে পরিবহণ দফতর! টিকিট বুকিং শুরু
প্রসেনজিতের কথায়, ''সকালে আর সন্ধ্যায় পুজো৷ মাঝে অফিসের কাজ ঠিকই সামলে দেওয়া যায়৷ বেনারস ও বৃন্দাবন থেকে পাঠক আসেন৷ তাঁরাই বেদপাঠ, চণ্ডীপাঠ করেন৷'' বাড়িতে মন্দির থাকায় ছোট থেকেই বৈষ্ণব আচারের সঙ্গে পরিচিত দুই ভাই-বোন৷ একসময় দুর্গাপুজোর উপর ঝোঁক বাড়ল৷ কিন্তু পুজো করার জন্যই করা নয়, পরতে পরতে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ স্রেফ আশ্বিনের শারদ প্রাতে নয়, লেগে থাকেন সারা বছরই৷ তাই প্রাচীন পুঁথি জোগাড় করা, পড়াশোনা—ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশে দিব্যি চলছে৷
শুভাগতা দে ও সাহ্নিক ঘোষ