শতবর্ষ প্রাচীন জীর্ণ মন্দিরটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় কেউ সেখানে যেতেন না বলে জানান দেবপ্রসাদ বসু। ইনি বড়িশা ক্লাবের একজন কর্মকর্তা। এই শিব মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে তাঁর মতো অনেক ক্লাব সদস্যের ছেলেবেলার বহু স্মৃতি। দেবপ্রসাদবাবুর কথায়, ‘মন্দিরের পাশে আমরা খেলতাম। একটা বড় বটগাছ মন্দিরটিকে জড়িয়ে উঠেছিল। গাছটাও মন্দিরের দেওয়ালের ক্ষতি করেছে। তবে এটাও ঠিক গাছটা মন্দিরকে ভেঙে পড়তে দেয়নি। কাঠামোকে আঁকড়ে ধরে রেখেছিল।’
advertisement
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান," ক্লাবের তরফে মন্দিরের সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল একটা সময়। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার আধিকারিকরা এসে দেখেও যান। কিন্তু মন্দিরটির নির্মাণ সামগ্রী বহু পুরনো। সেই উপাদান অমিল এবং দামী। ফলে সংস্কার করতে অনেক টাকা খরচ করতে হত। সেই কারণে একটা সময় পিছিয়ে আসে ক্লাব।"
আরও পড়ুন : দেশের সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাতা! বাবাকে নিজের লিভারের একাংশ দান করে নজির কিশোরীর
কলকাতা পুরসভার ১৬ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান সুদীপ পোল্লে মন্দির সংস্কারে উদ্যোগী হন। তিনি বলেন, " মন্দিরের পাশের একটি পুকুর বাম আমলে ভরাট করে দেওয়া হয়। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েই ১৯৮৯ সালে আমার রাজনীতিতে আসা। মন্দিরের পাশেই ছিল একটি বটগাছ। সেটিও আমফানে ভেঙে পড়ে। এতে মন্দিরটির আরও ক্ষতি হয়। মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তাঁর সহযোগিতায় মন্দিরটি সংস্কার হয়েছে। এটি নতুন করে তৈরি করতে পুরনো কোনও উপাদান ব্যবহার হয়নি। কিন্তু পুরনো নকশা বজায় রেখেই সংস্কার হয়েছে।"
আরও পড়ুন : লেবুবিক্রেতা বাবার মৃত্যুতে অথৈ জলে, সংসার চালাতে চায়ের দোকান কলেজছাত্রীর
কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ বিভাগের আর্থিক সহযোগিতায় মন্দির নতুনভাবে সেজে উঠেছে। এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই খুশি বড়িশার বাসিন্দারা। বোসপাড়ায় ১২৪ বি বড়িশা রোডে আনুমানিক ৪০০ বছরের পুরনো এই জোড়া শিব মন্দির। প্রাচীন আমলের লাল ইটের টেরাকোটা নির্মাণশৈলী। তবে ভগ্নপ্রায় দশা ছিল। এক সময় নিয়মিত পুজো হতো। শিবরাত্রি, নীল পুজো কিংবা শ্রাবণ মাসে ভিড় জমাতেন ভক্তরা। মহিলারা পুজো দিতে আসতেন। কিন্তু গত পনেরো-বিশ বছরে মন্দির পুরোপুরি জীর্ণ হয়ে পড়েছে। এ বছর শিবরাত্রিতেও আবার ভিড় জমেছে জোড়া মন্দিরে। পুজো দিতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সকলেই খুব খুশি। মন্দিরটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। অনেকেই বললেন, "পুজো দিতে আসতাম না। নতুন করে তৈরি হওয়ায় খুব সুবিধা হল। আর দূরে যেতে হবে না।" সংস্কারের পর বড়িশার জোড়া মন্দির এখন আগের মতো ভক্ত সমাগমের অপেক্ষায়।