বহুদিন ধরেই সমস্যায় জর্জরিত কলকাতা মেট্রো ৷ কখনও বিকল রেক, কখনও এসি রেকে সমস্যা, কখনও দরজা বন্ধ না হওয়া ৷ তবু ভারতের সবচেয়ে প্রথম ‘মেট্রো’, শহরের গর্ব ছিল সে ৷ একরাতের ঘটনাতেই কালিমাপ্রাপ্ত কলকাতার লাইফলাইন ৷ পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের দুর্ঘটনায় কসবার বাসিন্দা সজল কাঞ্জিলালের মর্মান্তিক মৃত্যুতে বার বার আঙুল উঠছে মেট্রো কর্তৃপক্ষের দিকেই ৷ তদন্তে নেমে প্রথমেই তাই ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা কর্মীদের ভূমিকাকেই খতিয়ে দেখতে চাইছে কলকাতা পুলিশ ৷ মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে ঘটনার সময় পার্ক স্ট্রিট মেট্রোর ডিউটিতে থাকা আরপিএফ কর্মী ও স্টেশন ম্যানেজার সহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের নামের তালিকা চাওয়া হয়েছে ৷ মেট্রো কর্তৃপক্ষের থেকে সংগ্রহ করা হবে দুর্ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ ৷ মেট্রোর দরজা বন্ধের প্রক্রিয়া কী? সেন্সরের কাজই বা কী? গার্ড-চালকের কাজ কী? মেট্রোর কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে পুলিশ ৷ ঘটনার পর সাসপেন্ড করা হয়েছে মোটরম্যান ও গার্ডকে ৷
advertisement
পার্কস্ট্রিট থেকে ময়দানের দিকে যাচ্ছে মেট্রো। দরজা বন্ধ হতে দেখে তৎক্ষণাৎ হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন এক যাত্রী। তবুও দরজা খুলল না !!!!! আর যাত্রীর হাত আটকানো অবস্থাতেই ময়দানের দিকে ছুটল মেট্রো। টানেলের দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে লাইনে ছিটকে পড়ে বেঘোরে প্রাণ গেল যাত্রী সজল কাঞ্জিলালের। কিন্তু কেন এই দুর্ঘটনা? মেট্রোর দরজায় যাত্রীর হাত আটকে যাওয়ার পরও কেন খুলল না দরজা? স্পষ্ট হচ্ছে মেট্রোর একাধিক গাফিলতিই।
চেন্নাই থেকে আনা মেধা কোচ MR402। এই সিরিজের কোচে প্রথম থেকেই সেন্সরের কাজ না করা নিয়ে সমস্যা ছিল। তা সত্ত্বেও ওই কোচ বদলানো হয়নি। এদিনও মেধা কোচই ছিল। প্রশ্ন উঠছে,
গাফিলতি ১- নতুন রেকে অকেজো সেন্সর
- তাহলে কি রেকেই যান্ত্রিক ত্রুটি?
- চুলের ক্লিপ, পেনের ঢাকনা বা ব্যাগের হ্যান্ডেল দরজার মাঝে পড়ে গেলে দরজা বন্ধ হওয়ার কথা নয়
- এক্ষেত্রে হাত আটকে থাকলেও কেন সেন্সর কাজ করল না?
মোটরম্যান ও গার্ডকে ইতিমধ্যেই সাসপেন্ড করা হয়েছে।
গাফিলতি ২- কেন দেখলেন না মোটরম্যান-গার্ড?
- মেট্রোর মোটরম্যান সিগনাল পেয়ে ট্রেন চালু করেন
- গার্ড দেখে নেন যাত্রীরা উঠেছে কি না
- সব ঠিক থাকলে গার্ড মোটরম্যানকে টকব্যাকে জানান
- যাত্রী দরজার বাইরে ঝুললেও কী করে মোটরম্যান ও গার্ডের নজর এড়িয়ে গেল?
গাফিলতি ৩- সিসি ক্যামেরায় কেন ধরা পড়ল না?
- সমস্ত মেট্রো প্ল্যাটফর্ম সিসি ক্যামেরায় মোড়া থাকে
- যাঁরা সিসি ক্যামেরা মনিটর করেন, তাঁরা কেন দেখতে পেলেন না?
মেট্রোয় আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ার পর থেকে প্ল্যাটফর্মের দুই প্রান্তে আরপিএফ মোতায়েন থাকে। প্রশ্ন উঠছে,
গাফিলতি ৪- আরপিএফ কী করছিল?
- দরজার বাইরে এক যাত্রী ঝুললেও কেন আরপিএফ দেখতে পেল না?
গাফিলতি ৫- আপৎকালীন নম্বরও অকেজো!
- নতুন এই কোচে টকব্যাক সিস্টেম আছে। যাত্রীরা টকব্যাকের মাধ্যমে মোটরম্যানের সঙ্গে কথা বলতে পারেন। যাত্রীদের দাবি, টকব্যাক সিস্টেম বা আপৎকালীন নম্বর কাজ করেনি। এমনকী কোনও ঘোষণা করা হয়নি।
ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গড়েছে মেট্রো। রেক পরীক্ষার জন্য চেন্নাই থেকে আসছেন ইঞ্জিনিয়ার। প্রশাসনিক তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিমও। কম সময়ে বেশি দূরত্বে যাতায়াত। মেট্রোকে যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন হাজার হাজার মানুষ। সেখানেই যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে কেন উদাসীন মেট্রো? ভয়াবহ দুর্ঘটনা সেই প্রশ্নটাই তুলে দিল।
