কলকাতা: গত ৯ বছর ধরে চাকরি করছেন৷ তাঁদের শিক্ষকতা নিয়েও কোনও অভিযোগ আসেনি৷ চাকরি চলে গেলে তাঁদের পরিবারের অস্তিত্বই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে৷ বুধবার ২০১৪ সালের প্রাথমিকের নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর সময় চাকরিপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং তাঁদের পরিবারের কথা বলে বিচারব্যবস্থার মানবিক দিক বিবেচনা করে দেখার কথা জানাল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ৷
advertisement
২০২৩ সালের ১২ মে, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ৩২ হাজার চাকরি বাতিল করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ৷ বুধবার সিঙ্গল বেঞ্চের সেই রায়কে খারিজ করেছে বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী ও বিচারপতি ঋতব্রত কুমার মিত্রের ডিভিশন বেঞ্চ৷
এদিনের রায় ঘোষণার পরে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা৷ আদালত চত্বরের মধ্যেই একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন৷ ঝরে আনন্দাশ্রু, চলে মিষ্টিমুখ পর্ব৷ আবির খেলায় মেতে ওঠেন অনেকে৷
এদিন রায়দানের সময় আদালত বলে, ‘‘৯ বছর চাকরি করার পরে তা কেড়ে নেওয়া হলে, তাতে আবেদনকারীরা অনতিক্রম্য এক সমস্যার মধ্যে পড়বে৷ তাঁদের পরিবার ভয়ঙ্কর ঝুঁকির মধ্যে পড়বে৷’’
এরপরেই আদালত জানায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে এবং প্রভাবের বিশালতা বিবেচনা করে আমরা একক বেঞ্চের আদেশ বহাল রাখতে আগ্রহী নই।’’
আদালতের পর্যবেক্ষণ, গণ প্রতারণা এবং দুর্নীতির অপ্রমাণিত অভিযোগের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আদালত আবেদনের বাইরে গিয়ে নিয়োগ বাতিল করেছে বলে জানানো হয়েছে ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে।
মূল্যায়ন পদ্ধতিগত ত্রুটি প্রতারণা নির্দেশ করে না। এছাড়াও, আদালত উল্লেখ করেছে, শিক্ষকদের চাকরির বছরগুলিতে সততা এবং দক্ষতা সম্পর্কে কোনও অভিযোগ ওঠেনি।
ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষেণ, অসফল প্রার্থীদের একটি দলকে পুরো ব্যবস্থার ক্ষতি করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। শুধুমাত্র চলমান ফৌজদারি মামলার ভিত্তিতে চাকরি বাতিল করা যাবে না।
আদালত তার রায়ে জানিয়েছে, তদন্তে দেখা গেছে, নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা কোনও দুর্নীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। সিবিআই নিশ্চিত করেছে, যে ২৬৪ জন প্রার্থীকে গ্রেস নম্বর দেওয়া হয়েছিল এবং চিহ্নিত করা হয়েছিল তাদের ক্ষেত্রে অনিয়ম ছিল। এছাড়াও, ৯৬ জন প্রার্থী যোগ্যতা অর্জনের নম্বরও পাননি এবং নিয়োগ এবং চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এক্ষেত্রে, এই ধরনের শনাক্তকরণের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কিত জালিয়াতি এবং দুর্নীতির অভিযোগ টেকসই নয় বলে মনে করেছে আদালত।
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের চাকরি বহাল! প্রাথমিকের ৩২ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ খারিজ ডিভিশন বেঞ্চে
প্রসঙ্গত, মামলার টাইমলাইন ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০২৪ সালে প্রাথমিক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়৷ তারপরে হয় টেট৷ সেই টেট-এর ফলাফলের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে শুরু হয় ইন্টারভিউ৷ তারপরে, ২০১৭ থেকে ২০১৯, প্রায় ১৪ দফায় ৩২ হাজার প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীর নিয়োগ করা হয়৷ এরপরেই ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ সালে বেনিয়মের অভিযোগে মামলা হয় হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে৷
১২ মে ২০২৩, ৩২ হাজার চাকরি বাতিল করে সিঙ্গল বেঞ্চ, নতুন করে নিয়োগের প্রক্রিয়ার নির্দেশ দেয়৷ ১৯ মে ২০২৩, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ৷ তবে, নতুন করে নিয়োগের প্রক্রিয়ার নির্দেশ বহাল রাখে৷ মে-জুন ২০২৩, প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে৷ ২২ জুলাই ২০২৩, হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে মামলা ফেরায় সুপ্রিম কোর্ট৷ তারপর, ১২ নভেম্বর, ২০২৫, হাইকোর্টের শেষ হয় ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি৷ আজ, ৩ ডিসেম্বর ছিল রায়৷
