গাড়ির লক না ভেঙে, গাড়ির ফ্রিকোয়েন্সি কপি হ্যাকিং করে অত্যাধুনিক ডিভাইসের মাধ্যমে গাড়ি চুরি করতে পারে হ্যাকাররা। কলকাতার খোলা বাজারে এবং এমনকি, অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যায় সেই অত্যাধুনিক ডিভাইস । (High Tech Car Theft Racket)
জামতাড়া, ভরতপুর গ্যাং ইতিমধ্যেই চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তদন্তকারীদের কপালে । তার উপর, এ বার আরও এক নয়া পদ্ধতি হাজির হ্যাকারদের হাতে৷ ফলে সব মিলিয়ে এই পরিস্থিতিতে গোয়েন্দাদের চিন্তা গভীর হচ্ছে৷(Hackers can steal your car)
advertisement
আরও পড়ুন : পুরসভার নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে কলকাতায় চলছে এই অবৈধ ব্যবসা
কীভাবে করা হচ্ছে কার হ্যাকিং?
#গাড়ির দরজা খোলা বা বন্ধ করার সময় ফ্রিকোয়েন্সি কপি করে হ্যাক করা হয়
# হ্যাকাররা অত্যাধুনিক ডিভাইসের মাধ্যমে গাড়ির ফ্রিকোয়েন্সি হ্যাক করার পর কপি করে
# এরপরই ওই ফ্রিকোয়েন্সি রিপ্রোডিউস করে গাড়ি খুলে হ্যাকাররা হাতিয়ে নিতে পারে।
#এই হার্ডওয়্যারের সঙ্গে সফটওয়্যার মোবাইল বা ল্যাপটপে রাখা হয়।
# এই কম মূল্য ৬০০০ টাকা দিয়ে যে কোনও হ্যাকার এক কোটি টাকা দামের গাড়ি সহজে চুরি করে নিতে পারবে। যা আগামী দিন আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াবে সাধারণ মানুষের।
আরও পড়ুন : নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের দোকানে ঢুকে গেল পুলিশভ্যান, আহত ৯ পুলিশকর্মী-সহ ১১
বিদেশে এধরণের বহু ঘটনা হয়েছে। এর সমাধান এখনও হয়নি। ঠিক একই ভাবে এই পদ্ধতিতে এরোপ্লেনের ফ্রিকোয়েন্সি ধরে ফেলে ফ্লাইট ইন্টারসেপ্ট-ও করা যায়।
শুক্রবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক বৈঠকে সাইবার বিশেষজ্ঞরা এ রকমই ডিভাইস দিয়ে কীভাবে হ্যাকিং-এর মাধ্যমে বন্ধ গাড়ির লক খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে, তা দেখিয়ে দিলেন। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত, গুলাব মণ্ডল-সহ বিশিষ্টরা।
সাইবার বিশেষজ্ঞরা দেখালেন, RLT-SDR রিসিভারের মাধ্যমে কীভাবে গাড়ির দরজা বন্ধ করার আওয়াজের ফ্রিকোয়েন্সি অত্যন্ত সুকৌশলে ১০০-১৫০ মিটার দূর থেকেও তা হ্যাকাররা রিসিভ করবে। স্বাভাবিকভাবেই এই চুরির প্রযুক্তির এখনও এদেশে চালু না হলেও, বিদেশে এই প্রযুক্তিতে চুরি শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই এখানেও শুরু হবে না, তা নিয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই বলেই জানালেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন : ম্লান মোমো, চাউমিন! শীত পিছু হটতেই ভিড় ফুচকাকাকুর পাশে
ইন্ডিয়ান স্কুল অফ অ্যান্টি হ্যাকিং-এর এই সাংবাদিক বৈঠকে সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এই ধরনের অত্যাধুনিক হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে গাড়ির লক খুলে চুরির বিষয়টি এখনও এদেশে হয়নি। কিন্তু এই চুরির বিষয়টি সক্রিয় ভাবে নিজেদের হাতে নিয়ে যাতে চোরেরা বা দুষ্কৃতীরা নিজেদের কার্যসিদ্ধি না করতে পারে তার জন্য সরকারকে রেগুলেশন আনতে হবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। হ্যাকিংয়ের ডিভাইস অত্যন্ত সহজলভ্য কলকাতার বাজারে। স্বল্পমূল্যে যেখানে সেখানে তা পাওয়া যায়। যে কোনও হ্যাকিং সফটওয়্যার ডাউনলোড করেই এই ধরনের স্বল্পমূল্যের হার্ডওয়ার ডিভাইস ব্যবহার করে গাড়ি চুরি করা কোনও মতে অসম্ভব থাকবে না। তাই এখন থেকেই বিষয়গুলি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে হবে।’’
তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘ সেক্টর ফাইভের এসডিএফ ভবনে ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং-এর তরফে একটি অত্যাধুনিক হাইটেক ডিজিটাল ফরেন্সিক ল্যাব তৈরি করা হয়েছে। মূলত ডিজিটাল প্রতারণার রুখতে এই ফরেন্সিক ল্যাব অত্যন্ত কার্যকর।’’
শুধু প্রতারণা রুখে দেওয়াই নয়৷ এই ল্যাবের এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠরত বহু পড়ুয়া ডিজিটাল প্রতারণা নিয়ে কীভাবে কাজ করতে পারা যাবে, তার শিক্ষাও নিতে পারবেন। সেই পাঠপর্ব শুরু হবে মার্চ মাস থেকে৷ তবে পাশাপাশি সাইবার বিশেষজ্ঞরা এও জানালেন, করোনাকালে মানুষ গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় ডিজিটাল লেনদেনের উপরে বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। যে কারণে কলকাতা পুলিশের তথ্য বলছে, আগের তুলনায় প্রায় ২২০ শতাংশ ডিজিটাল প্রতারণা বেড়ে গিয়েছে। যা রীতিমতো উদ্বেগজনক।