রূপনারায়ণের বাঁধ ভেঙেছিল গত শনিবার রাতে। তার পরেই এলাকায় জল ঢুকতে শুরু করে। ধীরে ধীরে বাড়ির একতলা জলের গ্রাসে চলে যায়। বাধ্য হয়েই গত রবিবার সকালে বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলেন সপরিবার। খানাকুলের পূর্ব ঠাকুরানি চকের সামন্তপাড়ার সেই বাড়ির ছাদ থেকে হেলিকপ্টারে উদ্ধার করা হয়েছিল ১০০ পেরনো জাহ্নবী দেবীকে। নিয়ে আসা হয় তাকে আরামবাগের ত্রাণশিবিরে। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বৃদ্ধার প্রথম কথা ছিল, ‘‘বড্ড খিদে পেয়েছে। দু’দিন প্রায় কিছুই খাওয়া হয়নি।’’
advertisement
এই ক'দিনে জেলা প্রশাসনের ত্রাণ শিবির থেকে বারবার খেয়াল রাখা হয়েছে তার উপরে৷ খোঁজ নিয়েছেন প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকেও। এবার ঘরে ফিরতে চাইছেন ১০০ বছরের জাহ্নবী। ইতিমধ্যেই ১ কলাম সেনা নামানো হয়েছে এলাকায়। সাথে আছে ইঞ্জিনিয়ারিং টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা। রুপনারায়ণের জলে বিঘের পর বিঘে চাষের জমি এখনও জলের তলায়। খানাকুলের পূর্ব ঠাকুরানীচক গ্রামের চেহারা এমনই। যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম নৌকা। তা নিয়েই চলছে জমি দেখে আসার কাজ।
তবে সকাল হতেই আকাশে ঘন কালো মেঘ, চিন্তা বাড়াচ্ছে খানাকুলের। আরামাবাগ, খানাকুল, গোঘাট হুগলি জেলার এই সমস্ত এলাকা বরাবর বন্যা প্রবণ। প্রতি বছর বন্যার ভ্রুকুটি সহ্য করতে হয় এই সব এলাকার মানুষদের। চলতি বছরেও তার অন্যথা হয়নি। হুগলি জেলার এই সব এলাকা রুপনারায়ণ, দ্বারকেশ্বর, মুন্ডেশ্বরী, দামোদর নদী দিয়ে ঘেরা। এর মধ্যে রুপনারায়ণের জলে ভেসেছে খানাকুলের একাধিক গ্রাম। আর তার জেরেই জলের তলায় চাষের জমি।
গ্রামের বাসিন্দা অনিল হাজরা। তার ১৫ বিঘা ধান জমি এখন জলের তলায়। তিনি জানাচ্ছেন, "প্রত্যেক বছরই তো আমাদের এই অত্যাচার সহ্য করতে হয়। ব্যারেজ জল ছাড়লেও আমাদের জমি জলের তলায়। আর ভারী বৃষ্টি হলেও জলের তলায়চলে যায় আমাদের জমি। এভাবে আমরা আর কত বছর সহ্য করব।" বাসাবাটি'র বাসিন্দা উজ্জ্বল দারি। তাঁর জমিও জলের তলায়। তিনি জানাচ্ছেন, "পটল, উচ্ছে সহ মরসুমী সবজি আমার সব জলের তলায় চলে গেল। সব ফসল পচে গেছে। কবে জল নামবে জানিনা। ফলে কিছু আর ফেরত পাওয়ার আশা রাখি না।" খানাকুলের গড়েরঘাটের রাস্তার দু'ধারে বিঘের পর বিঘে জমি জলের তলায় চলে গেছে। প্রায় ৫ থেকে ৬ ফুট জলের উচ্চতা।
অন্য দিকে, জলমগ্ন এদিন বাসাবাটি, জগৎপুর সহ গ্রামের মানুষের নানা অসুবিধার কথা শুনছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। চৈতালি হাজরা গ্রামবাসী জানিয়েছেন, "ওষুধ নিয়ে আসা গ্রামে সবচেয়ে সমস্যা। প্রশাসনকে বললাম, যাতে ওষুধ আমরা পেতে পারি।" আর এক গ্রামবাসী সুশোভন হাজরা জানিয়েছেন, "বাজার করতে যেতে পারছি না। গ্রাম তো একটা দ্বীপ হয়ে গেছে। খাবার যাতে পাই সেটা দেখতে অনুরোধ করেছি পুলিশকে।" হুগলি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা অবশ্য জানিয়েছেন, "জলবন্দি এলাকার মানুষের খোঁজ নিতেই আমাদের দল বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। কথা বলে চলেছি আমরা অবিরত। যা যা চাহিদা আছে সব দেখে দেওয়া হবে। বিশেষ করে ওষুধ ও খাবার।"
একটু জল নামলেই বাড়ি পরিষ্কার করে ঘরে ফেরানো হবে ১০০ বছরের জাহ্নবীকে।
