মুন্সী সাদরউদ্দিন লেন, মহাজাতি সদনের ঠিক উল্টো দিকের গুপ্তা ব্রাদার্সের গলি দিয়ে কিছুদূর এগলেই বাঁ-দিকে পড়বে গোপীর হামজা ফ্রুটস ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেড। পৈতৃক ব্যবসা। কিছুদূর এগিয়ে বাঁদিকের গলি দিয়ে ঢুকে বাপ-ঠাকুরদার তৈরি ফলের দোকান রয়েছে। মূল রাস্তার কাছে এই নতুন দোকান করেছেন বছর দশেক হবে। দুপুরের রোদে দেখা গেল, সেই দোকানের সার দেওয়া ঝুড়ি। নীল চকচকে কাগজে ঢাকা। তার উপর বেশ কয়েকরকমের ফল। ফল মোড়া প্লাস্টিকে, আর উপরে দেওয়া শুভেচ্ছা বার্তা। বড় বড় প্যাকেট থেকে ফল বার করে ঝুড়িতে সাজিয়ে তুলছেন জনা তিনেক কর্মচারী। দোকানের সামনেই একে একে সার দিয়ে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে সেই আরোগ্য-ঝুড়ি।
advertisement
আরও পড়ুন: দেশে করোনা সংক্রমণের হারে শীর্ষে পশ্চিমবঙ্গ, জানাল উদ্বিগ্ন কেন্দ্র
নিজাম প্রথমটায় ছবি তুলতে গেলে আপত্তি করেছিলেন। কী দরকার! আত্মপ্রচার নিয়ে কিছুটা বিড়ম্বনা যেন তাঁর। যাই হোক, শেষটায় রাজি হলেন। চেয়ারে বসে তিনি কাজ তদারক করতে করতেই কথা বললেন। রোজ বোরো ভিত্তিক গাড়ি আসে এই দোকানে। মানে বোরো ধরে ধরে গাড়িগুলি এসে জমা দেয় তালিকা। সে-দিন কত জন আক্রান্তের জন্য লাগবে ফলের ঝুড়ি। সেই তালিকার হিসাবে গুণে ঝুড়ি তুলে দেওয়া হয় কলকাতা পুরসভার গাড়িতে। তার পর সেই ফলের ঝুড়ি চলে যায় আক্রান্তদের কাছে, মুখ্যমন্ত্রীর আরোগ্য বার্তা-সহ। ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় থেকে একেবারে দরিদ্র মধ্যবিত্ত কলকাতাবাসী, সকলেই তো খাচ্ছেন নিজামের দোকানের ফল। শুনেই গাল ফুলিয়ে হেসে ফেললেন তিনি।
'খানদানি' এই ব্যবসার দৌলতে যেন এক নতুন দিক খুঁজে পেয়েছেন নিজাম। তিনিও আর পাঁচটা লোকের মতোই ধুঁকছিলেন এই রোগের দাপটে। কিন্তু এখন যেন ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে একটা তৃপ্তিও আছে। জানুয়ারি মাসের গোড়া থেকে এই প্রকল্প চালু করেছে প্রশাসন। প্রথম থেকেই এই গোটা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন নিজাম। তিনি বলছেন, রোজ ৮০০-৯০০ ঝুড়ি তাঁকে পাঠাতে হয়। দিন-রাত এক করে কাজ চলে প্রায়।
আরও পড়ুন: ভোট দিতে পারবেন করোনা আক্রান্তরাও, আতঙ্কের করোনাকালে জরুরি নির্দেশিকা কমিশনের
এই রাস্তা দিয়েই মাড়োয়ারি হাসপাতালের ট্রাম রাস্তার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলে বাঁ-দিকের দেওয়ালে চোখে পড়বে মান্না দে-এর একটি ছবি। ভোটের বাজারে দেওয়াল লেখার কাজে সেই দেওয়ালের আগাগোড়া রঙের প্রলেপ পড়লেও, রঙ পড়েনি শুধু মান্না দে-এর ছবিটিতে। ওটি কলকাতা মুছবে না। কারণ, কলকাতায় থাকেন একই দেহে নিজাম ও গোপীকে ধারণ করে চলা ফল বিক্রেতারা। তাঁদের হৃদয়ের ছন্দ শব্দ করে জানান দেয়, বেঁচে থাকতে হবে, প্রাণ খুলে। প্রাণের শহরের অসুস্থতা ব্যকুল করে তোলে, আনন্দ দেয় এইটুকু করতে পারার সুযোগ। তাই তিনি বলে ওঠেন, 'ক্যায়সা লাগতা হ্যায়, মত পুছিয়ে। বহুত, বহুত আনন্দ হোতা হ্যায়। লাগতা হ্যায়, ভগবান কো সেবা কর রাহা হুঁ।'