ইতিমধ্যেই রাজ্যের ছোট বাজারে ‘এক পাতা’, ‘দু’পাতা’ ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে জাল নোট কারবারিরা। যতদূর জানা গিয়েছে, এইসব জাল নোট কোচবিহারের দিনহাটা, দীঘলতারি এলাকার সীমানা দিয়ে ঢুকছে এ রাজ্যে। জালনোট ছড়াতে ওদের লক্ষ্য ছোট বাজার৷ গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, একটা ১০০ টাকার জাল নোট তৈরি করতে খরচ করা হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা৷ তার উপরে ক্যারিয়ারদেরও দেওয়া হচ্ছে মোটা টাকা৷ সব মিলিয়ে মোটা খরচ হলেও অসাধু ব্যবসায়ী থেকে বেআইনি কার্যকলাপ, সব মিলিয়ে বঙ্গ বাজারে নাকি ভালই চাহিদা বাড়াচ্ছে জাল নোট৷
advertisement
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরে দু’হাজার এবং ৫০০ টাকার জালনোট তৈরিতে উন্নতমানের কাগজ ব্যবহার করা হয়। তাতে জালনোট হাতে নিয়ে অনেকেই আসলের সঙ্গে নকলের পার্থক্য বুঝতে পারেন না। ১০০ ও ২০০ টাকার নোটও উন্নতমানের কাগজ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ফাইনাল দেখার বড্ড ইচ্ছে! ‘পহেলা বাইশ’ সেল থেকে এল জোরাল আবেদন…তারপর
ইতিমধ্যেই ভারতে ঢুকেছে ১০০ ও দীঘলতারি ২০০-র নোট৷ এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এলাকায় কাঁটাতার রয়েছে। এদেশের বেশ কয়েকটি গ্রাম কাঁটাতারের ওপারে রয়েছে পাচারকারী দলের মাথারা সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশকে ক্যারিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। মাদক পাচারের ক্যারিয়াররাও এই কাজে যুক্ত হয়েছে। এতদিন সীমান্ত পেরিয়ে দু’হাজার এবং ৫০০টাকার জালনোট আসত। মুর্শিদাবাদ, মালদহে বহুবার প্রচুর জালনোট উদ্ধার হয়েছে। দু’হাজার টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়ার পর জালনোটের কারবারিরা বড় ধাক্কা খায়। এখন তারা ১০০ ও ২০০ টাকার নোট ছাপাতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাজারগুলিতে এই জালনোট চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, মালদহের সীমান্ত দিয়ে এতদিন সবচেয়ে বেশি জাল নোট ঢুকত।’’
এছাড়া, কালিয়াগঞ্জ-সহ কয়েকটি এলাকায় রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ছাড়াও এনআইএ-ও নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ওই এলাকার কয়েকজন প্রথমসারির পাচারকারীকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার আধিকারিকরা গ্রেফতার করেছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, তাই হয়ত, মালদহ বা দিয়ে জালনোট পাচারের জন্য কোচবিহারের সীমান্তকে বেছে নিয়েছে কারবারিরা।
গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ বা ২০০ টাকার নোট ছাপানোর খরচের তুলনায় লাভ খুবই কম। ১০০ টাকার নোট ছাপাতে প্রায় ৬০-৬৫ টাকা খরচ হয়। তার উপর ক্যারিয়ারদের দিতে হয় ফলে কারবারিরা তেমন লাভ করতে পারে না।
আরও পড়ুন: বিজ্ঞাপন দিয়ে লোক নিচ্ছে সিপিএম! বেতন কত? কারা পারবেন আবেদন করতে? জানেন..
তা সত্ত্বেও তারা টাকা ছাপায়। কারণ, তাদের মূল উদ্দেশ্য ভারতবর্ষের অর্থনীতির ক্ষতি করা। সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং উত্তরপ্রদেশে ১০০ ও ২০০ টাকার নোটের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশ থেকে এরাজ্যে নোট আসার পর তা স্টক পয়েন্টে রাখা হয়। সেখান থেকে ভিন রাজ্যের ক্যারিয়াররা এসে জালনোট নিয়ে যায়। অনেক সময় এরাজ্যের ক্যারিয়াররাও ভিনরাজ্যে জাল নোট পৌঁছে দিয়ে আসে। অবৈধ বালির ব্যবসা, কয়লা কারবারেও এই ধরনের জালনোট ব্যবহার করা হচ্ছে।
বেশ কয়েকদিন আগে রাজ্যের এক জালনোট কারবারিকে গ্রেফতার করেছিল গোয়েন্দাদের একটি বিশেষ দল। সূত্রের খবর, তাঁকে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ করেই গোয়েন্দারা অবাক করে দেওয়ার মতো তথ্য পেয়েছেন। পাশাপাশি সূত্রের খবর, এই কারবারিদের সঙ্গে বেশ কিছু ছোট জঙ্গি সংগঠনও হাত মিলিয়েছে।‘আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’, ‘হিজবুত তাহারির’, ‘আল্লাহর দল’ মতো ১৪টি নতুন জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে রয়েছে এই জাল নোট কারবারিরা।