TRENDING:

Buddhadeb Bhattacharjee Obituary: তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে... ৩৪ বছর, লাল পতাকা আর কাস্তে-হাতুড়ির মাঝে আজ 'তারা'

Last Updated:

লাল পতাকা উড়লে তাঁর মুখ দেখতে পেতেন মানুষ। দেখতে পেতেন সেই সাদা ফিনফিনে পাঞ্জাবী পরে রাইটার্সের অন্দরে হেঁটে যাওয়া যোদ্ধাকে। তাঁর কমরেডরা স্বপ্ন দেখেছিলেন, পরের ব্রিগেডে মঞ্চে থাকবেন তিনি। ধুঁকতে থাকা একটা দল তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলবে, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। তাঁরা বিশ্বাস করেছিলেন বুদ্ধবাবুর পথ ধরেই আবার ফিরবে দল, শূন্য থেকে। না, ফেরা হল না আর। রাজনীতির ময়দানে খুব বেশি লড়াই করতে হয়নি, হল না জীবনযুদ্ধেও। কিছুটা লড়াইয়ের পরেই হাল ছেড়ে দিলেন তিনি, জীবন থেকে সরে দাঁড়ালেন অনেকটা দূরে।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
‘ঘনিয়ে এল ঘুমের ঘোর…’
advertisement

বর্ষাশেষের রোদটা উঠল না আর। অগাস্টের রাজপথে আজ শুধু সারি সারি মাথা। মাথায় কখনও জল পড়ছে, কখনও রোদ। আর ছাতা? তিনি তখন শায়িত। নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করা তরুণ কিংবা বারবার পরাজয় দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে ওঠা বৃদ্ধ কমরেড- সবার ছাতা তো তিনিই ছিলেন। মুখে অক্সিজেন নল নিয়েও তিনি এসেছিলেন অশীতিপর, জরাগ্রস্ত, জীবনযুদ্ধে হেরে যেওয়া একটা দলকে অক্সিজেন দিতে। তিনি ছিলেন ভরসার সমার্থক। যেন ওই নলটা নিজের নাক থেকে খুলে পরিয়ে দিয়েছিলেন মরে যাওয়া দলটার নাকে। বলা ভাল, পরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ওই লাল পতাকা উড়লে তাঁর মুখ দেখতে পেতেন মানুষ। দেখতে পেতেন সেই সাদা ফিনফিনে পাঞ্জাবী পরে রাইটার্সের অন্দরে হেঁটে যাওয়া যোদ্ধাকে। তাঁর কমরেডরা স্বপ্ন দেখেছিলেন, পরের ব্রিগেডে মঞ্চে থাকবেন তিনি। ধুঁকতে থাকা একটা দল তাঁর সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলবে, ইনকিলাব জিন্দাবাদ। তাঁরা বিশ্বাস করেছিলেন বুদ্ধবাবুর পথ ধরেই আবার ফিরবে দল, শূন্য থেকে। না, ফেরা হল না আর। রাজনীতির ময়দানে খুব বেশি লড়াই করতে হয়নি, হল না জীবনযুদ্ধেও। কিছুটা লড়াইয়ের পরেই হাল ছেড়ে দিলেন তিনি, জীবন থেকে সরে দাঁড়ালেন অনেকটা দূরে।

advertisement

মৃত্যু কেবল মিথ্যে হোক

বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। বৃহস্পতিবার সকালে বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ৮.২০ নাগাদ তিনি প্রয়াত হন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এরপর ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে মারাত্মক রকমের সংক্রমণও ধরা পড়ে তাঁর। ফের আচমকা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (সিওপিডি)-তে ভুগছিলেন।

advertisement

‘সে চলে গেলেও থেকে যাবে তার স্পর্শ আমারই হাতের ছোঁয়ায়’

এই ‘আমি’ কে? হয়তো তাঁর প্রতিটা কমরেড। যেই তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যতের ভার তিনি নিতে চেয়েছিলেন, তাদের কান্না, তাদের বেকারত্ব, তাদের আত্মহত্যায় দিনে-দিনে মুষঢ়ে পড়ছিলেন বুদ্ধদেব। তাই কি হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন শেষের দিকে? হারিয়ে গিয়েছিল জীবনের প্রতি মায়া?

‘সূর্য গেল অস্তাচলে, আঁধার ঘনাইল…’

advertisement

এই সূর্যোদয়ের ইতিহাসটা বড় অদ্ভুত। মনে পড়ে যায়, রোগশয্যায় একটি বই লিখেছিলেন বুদ্ধবাবু। স্বর্গের নীচে মহাবিশৃঙ্খলা। বইটি উৎসর্গ করেছিলেন প্রমোদ দাশগুপ্তকে। প্রমোদ ছিলেন সংগঠনের মুখ। আর পরে, সেই মুখ বানাতে চেয়েছিলেন বুদ্ধদেবকে। সেদিনের বুদ্ধ পরে হয়ে উঠেছিলেন  সরকারেরও মুখ। বামেদের স্বর্ণযুগ বলে যদি কিছু থেকে থাকে, তা এসেছিল বুদ্ধদেবের হাত ধরে। আর প্রতি মুহূর্তে তাঁর পাশে থেকেছেন আরেকজন, অনীল বিশ্বাস। ২০০৬ সালের নির্বাচনের অকল্পনীয় জয় তিনি দেখে যেতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন। সুভাষ চক্রবর্তী, শ্যামল চক্রবর্তী, বিমান বসু। সুভাষ-শ্যামলও চলে গিয়েছেন। আজ বুদ্ধও নেই। রয়েছেন বিমান বসু। বৃদ্ধাঙ্গুষ্টির মতো, জড়তার ভার নিয়ে।

advertisement

‘অন্ধকারের উৎস হতে…’

বামদুর্গ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ায় কতটা দায়ী ছিলেন বুদ্ধদেব? আবার ফ্ল্যাশব্যাক। রাজ্যজুড়ে দানা বাঁধছে সন্ত্রাস, অসন্তোষ। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ চলছে। দিনের পর দিন পথে নামছেন অনশনে ত‍ৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলছে লাগাতার আন্দোলন। এই সেই সিঙ্গুর। যেখানে বোনা হয়েছিল বিরাট পরিবর্তনের এক ছোট্ট বীজ। সেই নন্দীগ্রাম। যেখানে স্থাপন করা হচ্ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম গণতান্ত্রিক নির্বাচিত কমিউনিস্ট সরকারের ধ্বংসের ভিত্তিপ্রস্তর। সেবারে বুদ্ধবাবু আলোচনার টেবিলে যখন এলেন তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। অভেদ্য জালে মোড়া লাল দুর্গে তিনি এনেছিলেন তারুণ্যের হাওয়া, এ কথা অস্বীকারের প্রশ্ন নেই। কিন্তু যেই বামের আশা ভরসা ছিল কৃষি, সেখানে শিল্প গড়ার ভাবনাতেই কি কাল হল? নাকি রাজ্যের প্রধান বিরোধী নেত্রীর প্রতি তাঁর সহকর্মীদের কুৎসিত আক্রমণে তাঁর নীরবতা, বাংলার মানুষকে ভাবাল আরও একবার? নাকি ঘুণটা ধরেছিল ৩৪ বছর ধরেই? এই পতন শুধু সেটুকুরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র? যেই পতনে আসন সংখ্যা ২৩৩ থেকে নেমে এসেছিল ৬২টি।

‘গভীর কী আশায় নিবিড় পুলকে, তাহার পানে চাই দু বাহু বাড়ায়ে…’

তাঁকে চেয়েছিল তাঁর দল। যত বার পরাজয়, ততবার। দুঃস্বপ্নের রাতে, আতঙ্কের প্রহরে তিনিই ছিলেন ত্রাতা, সংকট-দুঃখ-ত্রাতা। নিদ্রিত একটা দলকে হয়তো তিনিই জাগাতে পারতেন। বলতে পারতেন, ‘নাই নাই ভয়।’ কিন্তু জয়? আর কি হবে কোনওদিন? আস্থা হারানো মনগুলো আর ফিরে পাবে মনোবল? কে হবেন নেতা? কে হবেন রথের সারথী? ক্ষমতা হারানোর আট বছর পরেও ধুঁকতে থাকা বাম রাজনীতিতে অক্সিজেন দিতে তিনি পৌঁছেছিলেন ব্রিগেডে। তাঁকে দেখার পর তাঁরই কমরেডদের প্রতিক্রিয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, বামেদের একমাত্র মুখ আজও, এখনও তিনি। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়ার দশ বছরের মধ্যে মহাকরণ ছাড়তে হয়েছে বামেদের। তাঁর বিকল্প মুখ যে আর তৈরি করতে পারেনি বামেরা, তা প্রমাণ হয়েছে বারবার। পতন-অভ্যুদয়-বন্ধুর পন্থায় প্রতি মুহূর্তে তিনিই তো হয়েছেন বামেদের সংকট-দুঃখ ত্রাতা। বুদ্ধবাবু চলে গিয়ে আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন এই বাংলায় এখনও তিনি একটা ম্যাজিক। অসীম ক্ষমায় মিলিয়ে দিলেন ভাল-মন্দ সকলই। হয়তো তাঁর চলে যাওয়াটাই বামজমানার কফিনের শেষ পেরেক। পরপার বলে যদি কিছু থাকে, সেখানে কোথায় বসবেন বুদ্ধবাবু? অনীল শ্যামল সুভাষের কাছে? নাকি জ্যোতিবাবুকে গিয়ে বলবেন তাঁর নিজের চোখে না দেখা রাজ্যটার বাকি ইতিহাস?

‘ভার তার না রহিবে, না রহিবে দায়…

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

হে বন্ধু, বিদায়…’

বাংলা খবর/ খবর/কলকাতা/
Buddhadeb Bhattacharjee Obituary: তোমার মহাসন আলোতে ঢাকা সে... ৩৪ বছর, লাল পতাকা আর কাস্তে-হাতুড়ির মাঝে আজ 'তারা'
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল