গত কয়েকদিন ধরেই ‘নির্বাচনী বন্ড’ মামলা নিয়ে তুমুল চর্চা কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক মহলে৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক SBI ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত তথ্য সহ হলফনামা জমা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে৷ তারপরে অবশ্য মিটছে না বিতর্ক৷ কী নিয়ে এত বিতর্ক? কী ভাবেই বা গড়াল কোর্টে?
২০১৮ সাল৷ নরেন্দ্র মোদির সরকারের প্রথম পর্বে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন প্রয়াত অরুণ জেটলি ঘোষণা করেছিলেন এই ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ডের কথা। ২০১৭-র অর্থ বিলের মাধ্যমে আইনে একগুচ্ছ সংশোধনী এনে ২০১৮ থেকে নির্বাচনী বন্ড চালু করে মোদি সরকার।
advertisement
আরও পড়ুন: বাংলায় ৭ দফা, কোন রাজ্যে কত দফায় হবে লোকসভা নির্বাচন?
উদ্দেশ্য ছিল, নগদে যাঁরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ‘চাঁদা’ দিয়ে থাকেন, তার এক বিকল্প তথা স্বচ্ছ পদ্ধতি তৈরি করা৷ নিয়ম ছিল, এই নির্বাচনী বন্ড প্রকল্পের আওতায়, যে কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা কোনও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে এসবিআই-এর কাছ থেকে বন্ড কিনতে পারবেন৷ পরিবর্তে সেই টাকা ভাঙিয়ে নিতে পারবেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল৷ এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির আর্থিক তহবিল সংক্রান্ত তথ্যে স্বচ্ছতা থাকবে, এমনটাই দাবি করা হয়েছিল৷ কিন্তু, এই প্রকল্পের আওতায় কোন ব্যক্তি বা সংস্থা কত টাকার বন্ড কবে কিনছেন, সেই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য গোপন রাখার কথা বলা হয়েছিল৷
আরও পড়ুন: লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় সাত দফায় ভোট, দেখুন কবে কোন কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ
জানা যায়, এই বন্ডের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দিতে পারবে। ১ হাজার, ১০ হাজার, ১ লক্ষ, ১০ লক্ষ এবং ১ কোটি টাকা মূল্যের বন্ডের কথা প্রাথমিক ভাবে ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলি এরপরে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু কে, কত টাকা দিচ্ছেন, তা বোঝা যাবে না এই পদ্ধতিতে। ব্যক্তি বা সংস্থার নাম থাকবে গোপন৷
কিন্তু, প্রকল্পটিকে ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন কংগ্রেস নেতা জয়া ঠাকুর, সিপিআইএম এবং অ্যাসেসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা৷ জমা পড়ে ৪ টি আবেদন৷ যার প্রেক্ষিতে শুনানি শুরু করে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন ৫ সদস্যের বেঞ্চ৷
শুনানির পরে এই প্রকল্পকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ‘অসাংবিধানিক’ ও ‘ক্ষতিকারক’ বলে বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্টের ৫ সদস্যের বেঞ্চ৷ পাশাপাশি, নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ১৩ মার্চের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে এই বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে৷ সেখানে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে উল্লেখ থাকবে কে কত টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এবং কোন রাজনৈতিক দল সেখান থেকে কত টাকা পেয়েছে৷ কিন্তু, এরপরেই বন্ডের ক্রেতা ও অর্থ সংক্রান্ত তথ্য বের করার জটিলতার কথা উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টে তথ্য প্রকাশের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছিল এসবিআই৷ যদিও তা খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট৷ কিন্তু, গত ১১ মার্চ এসবিআই-এর এই আবেদন খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ পাশাপাশি জানানো হয়, নির্দিষ্ট দিনের মধ্যেই আদালতে তথ্য জমা দিতে হবে এসবিআইকে৷ সেই তথ্য নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেও৷ গত ১৩ মার্চ শীর্ষ আদালতে হলফনামা জমা দেয় স্টেট ব্যাঙ্ক৷ হলফনামায় এসবিআই জানায়, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত তারা মোট ২২,২১৭টি ইলেক্টোরাল বন্ড ছেড়েছিল৷ তার মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ২২,০৩০টি ইলেক্টোরাল বন্ড ভাঙিয়েছে৷ বাকি ১৮৭টি বন্ডের যা আর্থিক মূল্য তা প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় ত্রাণ তহবিলে জমা পড়েছে৷ তবে, সেই তথ্যও সম্পূর্ণ নয় বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷
—- মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য