আজ সকালে দেবাশিস দত্ত দোকান খুলে দেখেন সিন্দুক মাটিতে ঢুকে গিয়েছে। মেঝে ফেটে ফাঁক হয়ে গিয়েছে ৷ এই নিয়ে অন্য ব্যবসায়ীদের মধ্যেই আশঙ্কার কালো মেঘ দেখতে পাওয়া গিয়েছে ৷ সবাই চিন্তা করছেন কেননা সারা বছরের মধ্যে এই সময়ই সব থেকে বেশ বেচাকেনা হয়ে থাকে এমন হলে কী করে চলবে ৷
advertisement
সাড়ে তিন বছর পর ফিরল সেই আতঙ্ক। মেট্রোর কাজ চলাকালীন শুক্রবার ভোরের পর থেকে বউবাজারের দুর্গা পিতুরি লেন, স্যাকরা পাড়া লেন, হিদারাম ব্যানার্জি লেনে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। আবার যদি ফাটল দেখা যায়। ইতিমধ্যেই এলাকার অনেকেই ঘর ছেড়েছে। চেনা পাড়া ছেড়েছে বহু পরিবার। তাঁদের অনেকেরই বর্তমান ঠিকানা বেলঘড়িয়া, বেলগাছিয়া, ফুলবাগানে। ২০১৯-এর পর মেট্রো কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল, আর সমস্যা হবে না! নিয়মিত নজরদারি, পর্যবেক্ষণে রাখা হবে গোটা অঞ্চল!
কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই এলাকায় ফের ফাটল-আতঙ্ক! একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরা পড়ার পরেই মেট্রোর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ বাহিনী ও কলকাতা পুরসভার কর্মীরা মাইকে প্রচার করে ফাটল ধরা বাড়ির বাসিন্দাদের বাইরে বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করেন। পরে এলাকার বাসিন্দাদের অন্যত্র নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
কিন্তু শুধুই এই অঞ্চলের বাসিন্দা নন, এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যাঁদের দিনের সিংহভাগ সময়টাই এখানে কাটে। এই অঞ্চলের সঙ্গেই জড়িয়ে তাঁদের রুজিরুটি! কারও বা ব্যবসা, কারও বা দোকান রয়েছে! আজ তাঁরাও বাধ্য দোকান বন্ধ করতে! দোকানের ঝাঁপ ফেলা, সামনে ডাঁই করে রাখা জিনিসপত্র!
স্যাকরা পাড়া লেন-এ বাড়ি বাবু শীলের! আপাতত তার ফটোগ্রাফির দোকান ঘরে তালা ঝুলছে! ছেলে গেমিং অ্যানিমেশন নিয়ে কাজ করেন। এরপর যদি ফের বাড়ি ছাড়তে হয়, তাহলে মুশকিল। বাবু শীল জানিয়েছিলেন, '' আমার দোকানে ছবির কত কাজ হত। ফাটলের জন্য দোকান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে! ঘরেই কাজ করতে হয়। যদি ফের বলে কাজের জন্য সরতে হবে। তাহলে এখন কোথায় যাব জানি না! কোনও ঠিকানা নেই! গত দু'দিন থেকে এই পরিস্থিতি। ২০১৯ সালে একই দুর্ভোগ হয়েছিল! আবার সেই দিন ফিরে এল!’’
২০১৯ সালে ধর্মতলার দিক থেকে টিবিএম (টানেল বোরিং মেশিন) চণ্ডীকে শিয়ালদা অভিমুখে নিয়ে যাওয়ার সময় বিপত্তি ঘটেছিল। সেবার মূলত ভূগর্ভস্থ জলাধরের দেয়াল ফেটেই বিপর্যয় ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে আতঙ্কের ধাক্কা সামলে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর শিয়ালদহর দিক থেকে রওনা করা হয় টিবিএম উর্বিকে।টিবিএম উর্বি বউবাজার পর্যন্ত গেলে টিবিএম চণ্ডীর মুখোমুখি অবস্থানে অল্প ব্যবধান রেখে শেষ করা হয় টিবিএম এর কাজ। ঠিক করা হয়েছিল বাকি কাজ টিবিএম এর সাহায্য ছাড়াই করা হবে।
আরও পড়ুন: Bowbazar: ‘‘ তাহলে এখন কোথায় যাব জানি না!’’ চেনা পাড়ার, অচেনা রূপ আর কতদিন, প্রশ্ন বউবাজারের
বউবাজার এ দুর্গা পিতুরি লেনে ধ্বসে যাওয়ার পরে দুর্ঘটনাগ্রস্থ বাড়িগুলোর জায়গায় মেট্রোর তরফে তৈরি করা হয় একটি 40X10X25 মিটার সাইজের প্রকোষ্ঠ। মূলত টিবিএম তোলা এবং অন্যান্য অবশিষ্ট কাজের জন্যই বানানো হয় প্রকোষ্ঠটি। এই প্রকোষ্ঠ র নিচের অংশেই ছিল দুটি টিবিএম। ২০২১ এর ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় টিবিএম এর যন্ত্রাংশ বের করার কাজ। সেই কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: মেসেজ আসে 'মানিক যা তা ভাবে টাকা তুলছে', চাকরি বিক্রির 'ভাগ' নিয়ে রাগ হয়েছিল পার্থর: ইডি
মেট্রো সূত্রে খবর এই কাজ সম্পূর্ণ করা গেলেই সম্পূর্ণ হত শিয়ালদা-ধর্মতলা মেট্রোর টানেলের কাজ। মাটি কেটে সিমেন্টের দেওয়াল ও মেঝে বানানোর কাজও চলছিল সমানভাবে। কিন্তু তাল কাটলো কলকাতায় ভারী বৃষ্টিপাত। যার ফলে (প্রাথমিক অনুমান), মাটির নিচের জলস্তর হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায়, জল উঠতে শুরু করে নীচ থেকে। ফাটল ধরে যায় সংলগ্ন ১০টি বাড়িতে।
ABIR GHOSHAL